ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আইএসের বর্বরতায় ধ্বংস হচ্ছে পালমিরার প্রত্ননিদর্শন

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

আইএসের বর্বরতায় ধ্বংস হচ্ছে পালমিরার প্রত্ননিদর্শন

সিরীয় গৃহযুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ৫ লাখ মানুষ। বাস্তুচ্যুত হয়েছে ১০ লাখের বেশি সিরীয় এবং দেশটির বৃহত্তম শহরগুলোর অন্যতম আলেপ্পো পরিণত হয়েছে এক উন্মুক্ত কসাইখানায়। যুদ্ধ প্রাচীন নিদর্শনগুলোও ধ্বংস করে দিচ্ছে। ইসলামিক স্টেট (আইএস) গ্রুপ মে ২০১৫ থেকে মার্চ ২০১৬ সাল পর্যন্ত এ এক বছর ধরে জনসংখ্যা-বর্ধিষ্ণু প্রাচীন শহর পালমিরার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ শহরটি তৃতীয় খ্রিস্টাব্দে পরিণত হয় রোমান উপনিবেশ হিসেবে। সিরিয়া ও ইরাকের উত্তরাঞ্চলের নারী-পুরুষদের বিরুদ্ধে আইএসের আক্রাশের পাশাপাশি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে চলছে বর্বর ধ্বংসাযজ্ঞ। আইএস বেশকিছু মন্দির ধ্বংস করেছে। মন্দিরগুলোতে ইসলাম-পূর্ব বেশকিছু দেব-দেবীর পূজা করত পালমিরার বাসিন্দারা। আইএস পালমিরার ইতিহাস বিশেষজ্ঞ প্রতœতত্ত্ববিদ খালেদ আল-আসাদের শিরñেদ করে এবং এ বর্বরতা তারা অনলাইনে প্রদর্শন করে। নগরীর জাদুঘরটিতে তারা লুটতরাজ চালায়। বেশ কয়েকজন বন্দীকে প্রাচীনকালের থামগুলোর সঙ্গে বেঁধে বিস্ফোরক দিয়ে হত্যা করে। বর্তমান ও অতীতের বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটিত হলো মুহূর্তের মধ্যে। রুশসমর্থিত সিরীয় সেনাবাহিনী গত বসন্তে জিহাদিদের পরাজিত করে। কিন্তু ডিসেম্বরে আইএস পুনরায় দখল করে নেয় পালমিরা। গত মাসে তারা নগরীর প্রবেশ দ্বার ও রোমান এ্যামফিথিয়েটার গুঁড়িয়ে দেয়। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সোমবার ড্রোন থেকে নেয়া ফুটেজ প্রকাশ করেছে। এ ফুটেজে দেখা যায়, থিয়েটারের ওপর নতুন করে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। ওয়েবসাইটে পালমিরার বহুমুখী সংস্কৃতির বিস্ময় ফুটে ওঠে। এর অনেক সৌন্দর্যই ধ্বংস হয়ে গেছে বর্তমানে। আলেপ্পোয় একদল ইংরেজ বণিক ১৬৯১ সালের দিকে শহরটির ধ্বংসাবশেষ দেখার জন্য মরুভূমির মধ্য দিয়ে দুর্গম পথ পাড়ি দেয়। ইউরোপীয়রা তখন পালমিরার সান্নিধ্যে এসেছেন এবং এর ধর্মীয় ও নগর ভবনগুলো নির্মাণে গ্রীকে রোমান ও পারসিক শিল্পকর্মের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো রয়েছে বলে রিপোর্ট করেছেন তারা। ১৭৫৩ সালে ক্ল্যাসিক ব্রিটিশ শিল্প সাহিত্যবিষয়ক ব্রিটিশ প-িত রবার্ট উড পালমিরার উপর লিখিত একটি বইয়ে নগরীর স্থাপত্য সৌন্দর্য তুলে ধরেছেন। বইটিতে সন্নিবেশিত করা হয়েছে বিভিন্ন চিত্র। জর্জিয়ান নিউক্ল্যাসিসিজমের ডিন রবার্ট এ্যাডাম লন্ডনের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত অস্টালি পার্ক ম্যানসনের সিলিংয়ের ভিত্তি গড়ে তুলেছেন পালমিরার টেম্পল অব বেলয়ের সিলিংয়ের আদলে। যুবক ক্যাসাস পালমিরাকে চিত্রিত করেছেন এক নজিরবিহীন উৎসর্গতা নিয়ে। রোমে অধ্যয়নকালে প্রতœনিদর্শন বিষয়ে সৃষ্টি হয় বিশেষ অনুরাগ। তিনি পালমিরা পৌঁছান ১৭৮৫ সালের মে’তে তার ২৯তম জন্মদিনে এবং একমাসেরও কম সময়ের মধ্যে পালমিরায় প্রতিটি ভবন তিনি চিত্রিত করেন। ক্যাসাস লিখেছেন, ধ্বংসাবশেষের বিস্ময়কর সৌন্দর্যের বাইরে এখনও প্রকাশ পাচ্ছে এক সমুদ্র-সৌন্দর্য। ক্যাসাস টেম্পল অব বেলসহ পালমিরার ভবনগুলোর মেঝে ও সিঁড়ির নকশা এঁকেছেন যতেœর সঙ্গে। আইএস ২০১৫ সালে ধ্বংস করে টেম্পল অব বেল। -নিউইয়র্ক টাইমস
×