ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সামরিক ব্যয় বাড়ানোর চাপ মানতে অস্বীকৃতি মেরকেল ও অন্যদের

ট্রাম্পের দাবি প্রত্যাখ্যান ইইউর

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ট্রাম্পের দাবি প্রত্যাখ্যান ইইউর

ইউরোপীয় নেতারা তাদের সামরিক ব্যয় বাড়াতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চরমপত্র প্রত্যাখ্যান করেছেন। তারা এ ব্যয় না বাড়ালে তাদের ন্যাটোর প্রতি মার্কিন প্রতিশ্রুতি হারানোর ঝুঁকি বহন করতে হবে- চরমপত্রে সতর্ক করে দেয়া হয়। অন্যদিকে, ইউরোপীয় নেতারাও শুক্রবার ওয়াশিংটনকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ঐক্য বিনষ্ট করার অভিন্ন মূল্যবোধ পরিত্যাগ করা এবং মিত্রদের অজান্তে রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা করতে চাওয়ার বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়েছেন। খবর এএফপি ও টেলিগ্রাফের। জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেল বলেন, ন্যাটো দেশগুলো চলতি বছরের শেষ দিকে প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়াক বলে মার্কিন দাবি সত্ত্বেও তার দেশ ২০২৪ সালের মধ্যে সামরিক বাজেট বাড়ানোর বর্তমান দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করবে না। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জ্যাঁ ক্লঁদ জাঙ্কারও বলেন, ন্যাটো দেশগুলোকে অবশ্যই মার্কিন দাবির কাছে নতিস্বীকার করলে চলবে না। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস চলতি সপ্তাহে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর এক ‘নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা’ সম্পর্কে ন্যাটোকে সতর্ক করে দেন। তার মতে, এ বাস্তবতার অর্থ হলো প্রতিরক্ষা ব্যয়ভারের নিজ নিজ অংশ বহন এড়ানো মিত্রদের পক্ষে আর সম্ভব নয়। তিনি বলেন, দেশগুলো ব্যয় বৃদ্ধি শুরু না করলে ওয়াশিংটন তাদের প্রতি এর প্রতিশ্রুতি সঙ্কুচিত করতে পারে। ন্যাটো নির্দেশিকায় সামরিক জোটের সব সদস্যকে প্রতিরক্ষা বাজেটে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) শতকরা ২ ভাগ বরাদ্দ করতে বলা হয়। কিন্তু বাস্তবে মাত্র পাঁচটি দেশ আমেরিকা, ব্রিটেন, গ্রীস, এস্তোনিয়া ও পোল্যান্ড সেই অনুপাত অর্থ ব্যয় করে। আর ইতালি ও স্পেনসহ কেউ কেউ ব্যয় করে এর অর্ধেক। মেরকেল বলেন, জার্মানি অস্ত্র খাতে আরও ব্যয় করার দায়িত্বের বিষয়ে সচেতন, কিন্তু উন্নয়ন সহায়তা ও সঙ্কট রোধের মতো অন্যান্য ইস্যুও বিশ্বের নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী স্যার মাইকেল ফ্যালোন বলেন, ইউরোপীয় নেতাদের ব্যয় বৃদ্ধির বার্তা দিতে ম্যাটিস আপোসহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। এদিকে, শুক্রবার মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন জার্মান প্রতিরক্ষা মন্ত্রী উরসুলা ফনডার লেয়েন। তিনি ট্রান্স আটলান্টিক সম্পর্ককে হাল্কাভাবে না নিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান। জার্মান মন্ত্রী সম্মেলনে বলেন, আমাদের আমেরিকান বন্ধুরা ভালভাবেই জানেন যে, ইউরোপ ও ন্যাটো সম্পর্কে আপনাদের কথাবার্তার আমাদের মহাদেশের সংহতির ওপর প্রত্যক্ষ প্রভাব রয়েছে। তিনি বলেন, এক শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ ন্যাটোর মতোই এক স্থিতিশীল ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আমেরিকার স্বার্থের অনুকূল। পোলিশ প্রেসিডেন্ট আন্দ্রজেজ দুদাও জোর দিয়ে বলেন, আমাদের ট্রান্স আটলান্টিক (বন্ধনই) আমাদের শক্তির ভিত্তি। আমাদের অবশ্যই এ নিয়ে হঠকারিতার সঙ্গে প্রশ্ন তোলা উচিত নয়। তিনি আরও বলেন, আমরা সবাই বুঝতে পারি যে, ইউরোপের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাবনার পরিণতি আটলান্টিকের উভয় পাশে অনুভূত হবে। ব্রিটেনের ইইউ ত্যাগের সিদ্ধান্তের প্রতি ট্রাম্পের স্তুতি, তার ন্যাটোর সমালোচনা এবং রাশিয়ার প্রতি তার নরম মনোভাব মিত্রদের বিচলিত করে তুলেছে। দীর্ঘদিনের মার্কিন নীতি আসলেই বাতিল করে দেয়া হয়েছে কিনা, মিত্ররা সেই বিষয়ে ট্রাম্পের সহকারীদের কাছ পুনরায় আশ্বাস চায়। ট্রাম্পের পররাষ্ট্র নীতি কেমন হবে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন মিত্ররা যখন ভাবছে, তখন হোয়াইট হাউস তাদের নতুন করে আশ্বস্ত করতে চলতি সপ্তাহে শীর্ষ কর্মকর্তাদের ইউরোপ পাঠিয়েছে। ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের শনিবার মিউনিখ সম্মেলনে ভাষণ দেয়ার কথা। এর এক দিন আগে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিস একই ফোরামে দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, ইউরোপ ও আমেরিকার বন্ধন অস্থিরতা ও সহিংসতার বিরুদ্ধে সবচেয়ে শক্তিশালী রক্ষাকবচ।
×