ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শাহজাহান মিয়া

ষড়যন্ত্রের সলিল সমাধি পদ্মায়

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ষড়যন্ত্রের সলিল সমাধি পদ্মায়

দেশী-বিদেশী ঘৃণ্য চক্রের খপ্পরে পড়ে দুর্নীতির মনগড়া অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু নির্মাণে ঋণ প্রদানের অঙ্গীকার বাতিল করে এদেশের জনগণের স্বপ্নসাধ ডুবিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু বহুল আলোচিত এ সেতু নির্মাণে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ অনুমাননির্ভর, নিছক গালগল্প ও গুজবভিত্তিক বলে দীর্ঘ শুনানির পর গত ১০ ফেব্রুয়ারি কানাডার একটি আদালত খারিজ করে দিয়েছে। ফলে একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র হালে পানি না পেয়ে পদ্মার বিশাল জলরাশির গভীরে হাবডুবু খেয়ে তলিয়ে যায়। অন্যদিকে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আকাশচুম্বী দৃঢ়তা, দূরদর্শিতা, দক্ষতা ও সীমাহীন সাহসিকতা ষড়যন্ত্রের সকল বেড়াজাল এবং বাধাবিপত্তি ছিন্নœ করে পদ্মার বুক চিড়ে মাথা উঁচু করে গর্বভরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের বহুল প্রত্যাশিত ও অতি প্রয়োজনীয় এই পদ্মা সেতু। এদেশের সবচেয়ে বড় ও ব্যয়বহুল পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংক কম সুদে ১২০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু গোপন নীল-নক্সার অংশ হিসেবে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে প্রণীত ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে ২০১১ সালের ২৯ জুন পদ্মা সেতুর ঋণ চুক্তি বাতিল করে দেয় সংস্থাটি। বিনামেঘে বজ্রপাতের মতো ঘটনাটিকে ক্ষমতাসীন সরকার তীব্রভাবে নিন্দা জানিয়েছিল। সঙ্গত কারণেই তাদের কাজটিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও দেশ এবং শেখ হাসিনার সরকারকে বিশ্বের কাছে হেয়প্রতিপন্ন করার জঘন্য প্রয়াস ছিল বলে নিন্দা করা হয়েছিল। দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক কর্তৃক দেশের স্বপ্নের সেতু নির্মাণে প্রতিশ্রুত অর্থায়ন না করার ঘোষণা বিভিন্ন মহলে ব্যাপক বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। সুধী সমাজের অনেকেই বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ করার তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। অর্থায়ন বন্ধ হওয়াকে ক্ষমতাসীন সরকারের ব্যর্থতা অভিহিত করে এর বিরুদ্ধেও তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। দেশের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াসহ দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-নেত্রীরা তাদের অন্তরের গভীরে উথলে ওঠা আনন্দ চেপে রেখে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ-বিক্ষোভ প্রকাশের মহড়া দিয়েছিলেন। বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা বিষয়টিকে তাদের জন্য একটি মোক্ষম সুযোগ বলে বগল বাজাতে শুরু করেছিল। অবশ্য বিএনপির জন্য সেটাই স্বাভাবিক ছিল। সঙ্গে সঙ্গে বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবীরাও সরকারবিরোধী নানারকম কথাবার্তা শুরু করে দিয়েছিলেন। দলের নেতারা বেমালুম ভুলে গিয়েছিলেন যে, তাদের আমলে বিশ্বব্যাংক বিভিন্ন প্রকল্পে বেশ কয়েকবার অর্থায়ন বন্ধ করেছিল। বিশ্বব্যাংকের তৎকালীন বাংলাদেশ প্রধানও বিরূপ মন্তব্য করতে থাকেন। এমন অবস্থায় বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে পড়ে গিয়েছিল দেশের সাধারণ মানুষ। তারপরও বিশ্বব্যাংকের ভ-ামির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে এদেশের মানুষ এগিয়ে এসেছিল। দেশের কিছু পত্র-পত্রিকা ও টিভি চ্যানেল প্রতিদিন সরকার, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত কথা বলে যাচ্ছিল। সে সময় আমরা কিছু সাংবাদিক যারা বিভিন্ন পত্রিকায় নিয়মিত লিখতাম তারা বিশ্বব্যাংকের এই গর্হিত কাজটির তীব্র সমালোচনা করতে দ্বিধাবোধ করিনি। একটি বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিকে ২০১২ সালের ২৭ জুলাই ‘দেখাতে হবে আবার, বাঙালী মানে না হার’ শিরোনামে আমার একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছিল। প্রায় পাঁচ বছর আগে বিশ্বব্যাংকের স্রেফ পাগলামির ওপর লেখাটির পর আমার প্রিয় পত্রিকা জনকণ্ঠে কানাডার আদালতে বিশ্বব্যাংকের নাকানি-চুবানি খাওয়ার ওপর আমি আবার লিখলাম। কানাডার আদালতে রায় ঘোষণার পর গত ১৩ ফেব্রুয়ারি পাঠকপ্রিয় দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় ‘পদ্মার ঢেউ বিশ্বব্যাংকে’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরটি আমার মতো অনেককেই চমৎকৃত করেছে। মাত্র তিনটি শব্দে এমন সুন্দর ও যথাযথ শিরোনাম রচনার জন্য জনকণ্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদক সর্বজন শ্রদ্ধেয় তোয়াব ভাই ও এবারের একুশে পদক বিজয়ী পত্রিকাটির নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়সহ দৈনিকটিতে কর্মরত আমার প্রিয় সাংবাদিক ভাই-বোনেরা বিশেষভাবে ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। বিশ্বব্যাংকের চাপে বাধ্য হয়ে সরকার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীকে অপসারণ করেছিল। একজন সচিব ও একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছিল। যোগাযোগমন্ত্রী ও সচিবসহ মোট আটজনের বিরুদ্ধে আনা হয়েছিল দুর্নীতির অভিযোগ। দুর্নীতি দমন কমিশন এ বিষয়ে তদন্তও করে। সচিবসহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্ত করা হয়। কিন্তু কিছুই প্রমাণ হয়নি। কানাডার আদালতের রায় বের হওয়ার পর সাবেক সেতু সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার তার হৃদয়ের গভীর থেকে উৎসারিত মন্তব্য আমার হৃদয়কে স্পর্শ করেছে। তিনি বলেন, ‘এ অভিযোগের কারণে আমাকে কারাবাস করতে হয়েছে। আমার মানহানি হয়েছে। তবে এ জন্য মামলা করব না। পদ্মা সেতু নির্মাণ শেষ হলে তার ওপর দিয়ে হেঁটে যাব, সেদিনই আমার চূড়ান্ত বিজয় হবে। এ বিজয় সততার।’ এখানে বলতেই হচ্ছে সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও সাবেক সেতু সচিবসহ যারা মিথ্যা অপবাদের শিকার হয়েছিলেন তাদের জন্য সরকারের কিছু করা উচিত। সরকার, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী এ বিয়য়ে হয়ত নিশ্চয়ই কিছু চিন্তা-ভাবনা করছেন। বিগত ২০১২ সালের ৮ জুলাই জাতীয় সংসদে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধের সমালোচনা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো বিশাল প্রকল্প নির্মাণের দৃঢ়সংকল্প ব্যক্ত শুধু বঙ্গবন্ধুকন্যার পক্ষেই সম্ভব ছিল। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ দুরূহ হলেও কাজটি একেবারে দুঃসাধ্য ছিল না । সংসদে প্রধানমন্ত্রীর আবেগঘন বক্তব্য তখন কারও কারও কাছে অবান্তর মনে হলেও অনেককেই আবেগআপ্লুত করেছিল। মুক্তিযুদ্ধ ও বাঙালী জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ দেশের মানুষকে উজ্জীবিত করেছিল। আবেগ ইতিহাস সৃষ্টি করে। যুগে যুগে বীর বাঙালী তা প্রমাণ করেছে। বঙ্গবন্ধুর কঠিন পরিশ্রম, জেল-জুলুম ও কারাবরণের তোয়াক্কা না করা, ত্যাগ-তিতিক্ষা, সীমাহীন আবেগ, ইস্পাত-কঠিন দৃঢ়তা ও বলিষ্ঠ, আপসহীন এবং সঠিক নেতৃত্বের ফলে বাংলাদেশ নামক দেশটির অভ্যুদয় ঘটে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার আবেগ-তাড়িত আহ্বান স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রয়োজনীয় সাড়া পাওয়া যাবে বলে অনেকেই মনে করেছিলেন। শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যে এ বিষয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিতও প্রদান করেছিলেন। আমি অর্থনীতির তেমন কিছু বুঝি না। যার জন্য নিজের অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন করতে পারিনি। তবে এটুকু বুঝি দেশের আপামর জনগণকে আস্থায় নিয়ে কোন কথা বলতে পারলে অভীষ্ট ফললাভ মোটেই অসম্ভব নয়। স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে ভাষণদানের এক পর্যায়ে বাঙালী জাতির প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, ‘যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর (হানাদার পাকিস্তানীদের) মোকাবেলা করতে হবে।’ দীর্ঘ ৪৫ বছর পর দেশে নিদারুণ উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা যদি তাঁর পিতা এবং জাতির পিতার মতো দল-মত-পথ ও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে আন্তরিক আহ্বান জানিয়ে বলতেন যে, যে যা পারেন সাধ্যমতো পদ্মা সেতু নির্মাণের সাহায্যে এগিয়ে আসুন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস বঙ্গবন্ধুর ডাকে এদেশের মানুষ যেভাবে অভূতপূর্ব সাড়া দিয়ে জীবনবাজি রেখে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, সকল ষড়যন্ত্র ধুলায় মিশিয়ে দিয়ে স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে এনেছিল, ঠিক তেমনি বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যার আবেগপূর্ণ আহ্বানে পদ্মা সেতু নির্মাণের মতো বিশাল কাজটিও সাফল্য লাভ করত। কিন্তু তার প্রয়োজন হয়নি। এদেশের সাধারণ মানুষের নয়নমণি বঙ্গবন্ধুর মতো তাঁর সুযোগ্য কন্যার কোন চাপের কাছে মাথা নত না করার চারিত্রিক দৃঢ়তা ও সাহস এবং মানুষের জন্য সীমাহীন ভালবাসাই সবকিছু অগ্রাহ্য করে পদ্মা সেতু নির্মাণ সাফল্যের সোনালি আভায় উদ্ভাসিত হতে যাচ্ছে। সেতুর কাজ ৪০ শতাংশের বেশি শেষ হয়ে গেছে। আমি তখন বলেছিলাম বিশ্বব্যাংক কোন ধোয়া তুলসিপাতা নয়। ঋণ দেয়ার নামে বিভিন্ন শর্তের বেড়াজালে আবদ্ধ করে আমাদের দেশের মতো দেশগুলোকে তারা তাদের ইচ্ছেমতো উঠবস করায়। বিশ্বব্যাংকের ভ-ামি ও ভ্রƒকুটি আমলে না নিয়ে যদি উল্টো কিছু দেখানো যায় তাহলে শুধু দেশের মানুষই নয়, অন্যান্য গরিব দেশের মানুষও খুশি হবে। অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত দেশটির জনগণকে সাধুবাদ জানাবে। দেশটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বের সাহসিকতা ভূয়সী প্রশংসা লাভ করবে। প্রকৃতপক্ষে বিশ্বব্যাংকই দুর্নীতির প্রশ্রয় দেয়। বিশ্বব্যাংক তাদের একটি পছন্দের চীনা কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দিতে ব্যর্থ হয়েই পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতির বিষয়ে সোচ্চার হয়ে উঠেছিল। শেষ পর্যন্ত তাদের পছন্দমাফিক কোম্পানিকে কাজ না দেয়ায় তারা নানা ছল-চাতুরির আশ্রয় নিয়ে যে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সে কথাটি এখন প্রমাণ হয়ে গেল। সংশ্লিষ্ট কাজে চীনা কোম্পানিটির প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা না থাকার কারণেই বাদ পড়ে। তারপরও বিশ্বব্যাংক ওই কোম্পানিটির জন্য জোর তদ্বির করে ব্যর্থ হয়েই পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন চুক্তি বাতিল করেছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন যথার্থভাবেই প্রশ্নটি তুলে বলেছিলেন, সেতু নির্মাণে এখন পর্যন্ত কোন তরফ থেকে একটি পয়সাও যেখানে পাওয়া যায়নি, সেখানে দুর্নীতি হয় কি করে? এ প্রশ্নটির সঙ্গে অনেকেই একমত ছিলেন। দেশের অর্থনীতিকে স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে নানাভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রভাবিত বিশ্বব্যাংকের কবল থেকে দেশকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করা হয়েছিল। যখন বলা হয়েছিল বিশ্বব্যাংক টাকাই দেয়নি, তাই তাদের টাকা নিয়ে দুর্নীতি করার প্রশ্নই উঠে না, তখন অবশ্য বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির আলামত দেখার কথা বলেছিল। ওদের বেহায়াপনার সীমা-পরিসীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। সৈয়দ আবুল হোসেনের কোম্পানি সাকো ইন্টারন্যাশনাল নাকি এসএনসি লাভালিনের কাছে দশ পার্সেন্ট হারে টাকা দাবি করেছিল। সেতু নির্মাণের ব্যাপারে ২০১১ সালের এপ্রিল মাসে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি স্বাক্ষর হয়। নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল ওই বছরেরই অক্টোবর মাসে। কিন্তু ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসেই বিশ্বব্যাংক সেতু নির্মাণে অর্থায়ন স্থগিত করে। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ সরকারের কাছে অভিযোগ করে যে, যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সাকো ইন্টারন্যাশনাল কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনকে পদ্মা সেতুর কাজে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ প্রদানে দশ পার্সেন্ট ঘুষ দাবি করেছিল। সেতু নির্মাণে পরামর্শকের জন্য মোট বরাদ্দ ছিল ৪৭ মিলিয়ন ডলার বা ৩৮০ কোটি টাকার ওপর। হিসাব সোজা, ৩৮০ কোটি টাকার দশ পার্সেন্ট দাঁড়ায় ৩৮ কোটি টাকা। কিন্তু সকল অভিযোগ কানাডার আদালত নাকচ করে দেয়। পদ্মা সেতু নির্মাণ ছিল বর্তমান সরকারের একটি নির্বাচনী ওয়াদা। জনগণই একটি সরকারের প্রধান শক্তি। কোন শক্তিধর বা বিত্তশালী ব্যক্তি নয়। তাই জনদরদী শেখ হাসিনা জনগণের কাছে দায়বদ্ধতার কথাটি মনে রেখেই সেতু নির্মাণে এতটা বদ্ধপরিকর হয়ে উঠেছিলেন। পদ্মা সেতু প্রকল্পের দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির প্রধান ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন প্রকৌশলী ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। এদেশের মানুষ তাকে একজন সৎ ব্যক্তি বলেই জানে। তার নেতৃত্বে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি পরপর দু’বার পাঁচটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে বাছাই করে তাদের যোগ্য বিবেচনা করে বিশ্বব্যাংকের কাছে তালিকা পাঠায়। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের পছন্দমতো তালিকার বাইরে থাকা একটি চীনা প্রতিষ্ঠানকে কাজটি দিতে বলে। চীনা কোম্পানিটির অজান্তেই তাদের বাংলাদেশ এজেন্ট সই জাল করে দরপত্রটি জমা দিয়েছিল। চীনা কোম্পানিটি দরপত্র প্রত্যাহার এবং এজেন্সি বাতিল করে। তারপর ক্ষুব্ধ-বিক্ষুব্ধ বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে চুক্তি বাতিল করে। বাংলাদেশের কোন নাগরিক বিশ্বব্যাংকের এরকম নির্লজ্জ আচরণ কোনমতেই মেনে নিতে পারে না। কানাডার আদালতের রায়ে বাংলাদেশের এক ঐতিহাসিক বিজয় অর্জিত হয়েছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকারের হয়েছে এক বিরাট বিজয়। প্রমাণ হয়েছে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্ত শতভাগ সঠিক ছিল। বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছিল। সেতু নির্মাণ কাজ তিন বছর পিছিয়ে যাওয়ায় দেশ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলে সুপরিচিত বাংলাদেশেরই এক বিরাট প্রভাবশালী ব্যক্তি ও তার বন্ধু বলে পরিচিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বিশ্বব্যাংককে পদ্মা সেতু নির্মাণে ঋণ না দেয়ার জন্য প্রভাবিত করেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। সারা বিশ্বকে হতবাক করে বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতা ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ ও ঈর্ষণীয় নেতৃত্ব এবং সাহসী উদ্যোগে নির্মাণ হচ্ছে স্বপ্নের সেতু.. পদ্মা সেতু। লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক
×