ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভাবনায় ২১ ফেব্রুয়ারি

প্রকাশিত: ০৬:২২, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ভাবনায় ২১ ফেব্রুয়ারি

প্রভাতফেরিতে যাব পৃথিকা ইসলাম বৈশালী একুশে ফেব্রুয়ারি দিনটা অন্যদিনের চেয়ে আলাদাভাবে কাটাব। খুব ভোরে উঠে প্রভাতফেরিতে যাব। আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো গানটা গাইব। শহীদ মিনারে ফুল দেব। গালে পতাকা আঁকিয়ে নেব। আমাদের শহীদ মিনারের সামনে নানা রকম অনুষ্ঠান হয় সেগুলো আমি বসে বসে দেখব। ছবি আঁকার প্রতিযোগিতা হয় সেখানে অংশ নেব। শহীদ মিনারের সামনে ফেরিওয়ালারা হরেক রকম জিনিস নিয়ে বসে, সেখান থেকেআমি কিছু খেলনাও কিনতে চাই। মনে মনে সেই সব মানুষের জন্য দোয়া করব যারা বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল ৩য় শ্রেণী, রাজশাহী এক ঝাঁক রাঙা পলাশ শতাব্দী রায় ‘অ-আ-ক-খ’-১৬ কোটি বাঙালীর চোখের মণি ও বর্ণমালা। বসন্তের পলাশের লাল রং যেমন মাতিয়ে তোলে বাংলার সবুজ প্রকৃতিকে, কিংবা শতকোটি আলোকবর্ষ পাড়ি দিয়ে আসা নক্ষত্রের আলোতে যেভাবে ঝলমলিয়ে ওঠে বাংলার আকাশÑ ঠিক তেমনি বর্ণমালাও আমাদের সাহস যোগায়। বাংলা বর্ণমালা আমাদের অস্তিত্বকে দেয় পূর্ণতা। বাংলা ভাষা আমাদের চিন্তাকে দেয় সচলতা। আর ২১ ফেব্রুয়ারি আমাদের দেয় পরিচয়, সেই বিরলতম জাতি হিসেবে যারা প্রাণ দিয়েছে মায়ের ভাষাকে রক্ষার জন্য। আমার কাছে ২১ ফেব্রুয়ারি তাই বাঙালীর নবজন্ম লাভের দিন, নিজেকে নিজে চিনে নেয়ার ও বিশ্বকে চিনিয়ে দেয়ার দিন। ছোটবেলা থেকে যেমন প্রতিবছর কুয়াশাঘেরা ভোরে একমুঠো ফুল আর এক বুক শ্রদ্ধা নিয়ে প্রভাতফেরিতে যাই, ঠিক সেভাবেই এ বছরও শুরু হবে আমার ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আর হাজারো বাঙালীর মতো বুকে থাকবে দৃপ্ত শপথ আমার বর্ণমালা, আমার প্রিয় মাতৃভাষা, তোমাকে কখনও দুঃখিনী হতে দেব না। তুমি থাকবে সদ্যফোটা পলাশের মতো সতেজ। মাটির প্রদীপের মতো নয়, তুমি থাকবে ধ্রুবতারার মতো উজ্জ্বল হয়ে-কথা দিলাম। জয়পুরহাট সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ১০ম শ্রেণী, জয়পুরহাট ভাষার পরিচয় জুবায়ের ইবনে কামাল রাজধানীসহ সারাদেশে পথশিশুর মধ্যে প্রায় সবাই অক্ষরজ্ঞানহীন। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে চিন্তা করেছি এবার পথশিশুদের নিয়ে একটা আয়োজন করব। ফেব্রুয়ারি যেহেতু ভাষার মাস। তাই আমাদের মাতৃভাষা দিবসের ভাবনা হলো, পুরো ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদেরকে বর্ণমালা শেখাব। আমাদের রক্ত দিয়ে কেনা ভাষার সঙ্গে তাদের নতুনভাবে পরিচয় করিয়ে দেব। প্রতিদিন শেখার পর তাদের সকলের জন্য খাবার ব্যবস্থাও করব। তোমরাও আমাদের সঙ্গে যুক্ত হতে পার। এভাবে আমরা সবাই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশে দাঁড়াব। মুরাদপুর ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা ১০ম শ্রেণী, মুরাদপুর, ঢাকা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা মেহেদী হাসান হৃদয় আমাদের মুখের ভাষা বাংলা। এই বাংলা ভাষার জন্য ১৯৫২ সালে সালাম, রফিক, জব্বারসহ আরও অনেকেই জীবন দিয়েছেন। আমরা কি তাদের ভুলতে পারব! নাহ, কখনই পারব না। প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারিতে আমি ভোরবেলা শহীদ মিনারে ফুল দিতে যাই। এবার ঠিক করেছি নিজেদের বাগানের ফুল দিয়ে একটা সুন্দর তোড়া বানিয়ে দলবেঁধে রাত ১২টায় শহীদ মিনারে ফুল দিতে যাব। শহীদ মিনারের সামনে বুকে হাত রেখে গেঁয়ে উঠব, আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি; আমি কি ভুলিতে পারি! ডিমলা ইসলামিয়া কলেজ, একাদশ শ্রেণী ডিমলা, নীলফামারী স্মৃতির একুশ তাসনুভা চৌধুরী প্রাইমারিতে পড়ার সময় স্কুলে বাংলার ফৌজিয়া ম্যাডাম ২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনা নিয়ে নাটিকা করিয়েছিলেন। এখনও স্পষ্ট মনে আছে প্রতিটা মুহূর্ত। কয়েকজন বন্ধু মিলে ঠিক করেছি, আমাদের এলাকার স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে নিয়ে তেমন একটি নাটিকা করব। স্কুলের শিক্ষকদের কাছে প্রস্তাব করায় তারা সানন্দে রাজি হয়েছেন। আর সেই সঙ্গে ২০ তারিখ বিকেলে সবাই যে যার বাগান থেকে ফুল তুলে আনবে। তারপর নিজের হাতে তোড়া বানাবে। সেগুলো স্কুলের বাঁশের তৈরি শহীদ মিনারে অর্পণ করা হবে প্রথম প্রহরে। সবাই একসঙ্গে গাইবে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারিÑ গানটা। আর তারপর হবে নাটিকাটা। নাটিকার নাম দিয়েছি ‘স্মৃতির একুশ।’ আপাতত নাটকের মহড়া চলছে। কাউকে মিলিটারির চরিত্র করতে রাজি করানো যাচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত কয়েকজন একটা করে গল্পের বই দিয়ে রাজি করানো হয়েছে। আমরা যেমন কখনও ভাষা শহীদদের ত্যাগের ইতিহাস ভুলতে পারি না। আশা করছি নাটিকাটি এই বাচ্চাগুলোর মনেও ততটা দাগ কাটতে পারবে। রাজশাহী সরকারী মহিলা কলেজ দ্বাদশ শ্রেণী, বিজ্ঞান বিভাগ রাজশাহী
×