ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কেরানীগঞ্জে নিয়মনীতির তোয়াক্কা নেই

যত্রতত্র ইটভাঁটি

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

যত্রতত্র ইটভাঁটি

নিজস্ব সংবাদদাতা, কেরানীগঞ্জ, ১৭ ফেব্রুয়ারি ॥ কেরানীগঞ্জে অবৈধভাবে নদী, খালবিল দখল করে একের পর এক গড়ে উঠছে ইটভাঁটি। পরিবেশ অধিদফতরের নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে ইটভাঁটিতে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ছাড়পত্র ছাড়াই পরিবেশ দূষণকারী এসব ইটভাঁটি চালাচ্ছে মালিকেরা। ইটভাঁটির বিষাক্ত ধোঁয়ায় পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটছে। এর ফলে কেরানীগঞ্জে জনজীবনে শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ, প্রেসার, গ্যাস্ট্রিকসহ নানা রোগে লক্ষাধিক মানুষ ভুগছে। কেরানীগঞ্জ উপজেলায় বৈধ-অবৈধ প্রায় আড়াই’শ ইটভাঁটি রয়েছে। অনেক ভূমিদস্যু ইটভাঁটির মালিকেরা নদী, খালবিল ফসলি জমি ভরাট করে ইটভাঁটা তৈরি করে বীরদর্পে ব্যবসা করে আসছে। এর মধ্যে ধলেশ্বরী ব্রিজসংলগ্ন নদী দখল করে ইটভাঁটি তৈরি করে এনবিএম কোম্পানি। এর মালিক নূরে আলম সিদ্দিকীর ইটখোলায় গিয়ে দেখা গেছে, পুরনো আমলের চিমনি ব্যবহার করে ইট তৈরি করছে। পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। আছে অনেক শিশু ও মহিলা শ্রমিক। পরিবেশ অধিদপ্তরের নিয়ম-কানুন অমান্য করে ছোট চিমনি ব্যবহার করছে। সে নিজের মর্জি মাফিক মাত্র ৩০-৪০ ফুট উচ্চতাসম্পন্ন চিমনি ব্যবহার করে ইট তৈরি করছে। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করছে অনেক মালিকরা। অপরিকল্পিতভাবে এসব ইটভাঁটি তৈরি করায় এলাকায় পরিবেশ যেমন দূষিত হচ্ছে তেমনি ইটভাঁটিতে কর্মরত শ্রমিকদের জীবনও ক্রমান্বয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে। অপরদিকে ইটভাঁটির ফলে পরিবেশ দূষণের ভয়াবহতায় এক সমীক্ষায় জানা গেছে, প্রতিটি ইটভাঁটি বছরে ৫২৪ টন কার্বন ড্রাই-অক্সাইড ও ২০ টন বিষাক্ত কার্বন মনোক্সাইড নির্গত করছে। বছরে এক হাজার ৪১৬ ঘন মিটার কাঠ নষ্ট হচ্ছে। এর প্রভাবে খালবিল, নদী ও পুকুরে মাছের অস্বিত্ব নেই। ইটভাঁটিসংলগ্ন জমিতে ফসল হয় না, গাছপালা মরে যাচ্ছে। পরিবেশ অধিদফতর সূত্র জানায়, ইটভাঁটি তৈরির আগে সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভা বা উপজেলা পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স আবশ্যক। এছাড়া রয়েছে ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট, দেড় একর জায়গার মালিকানা দলিল ও পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র। ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা বিনিয়োগ ফি জমা দিতে হয় ১০ হাজার টাকার। ১ কোটি থেকে ২০ কোটি টাকা বিনিয়োগের জন্য ছাড়পত্র নিতে হয় ২৫ হাজার টাকার। কোনক্রমেই যেন পরিবেশ দূষণ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখার শর্ত থাকে অধিদফতরের। এছাড়া জনমানব শূন্য এলাকা জনবসতি এলাকা থেকে কমপক্ষে ৩ কিলোমিটারের দূরত্বে ইটভাঁটি তৈরি করার বিধান রয়েছে। কিন্তু এসব রীতিনীতির তোয়াক্কা না করে এবং জলাশয় ভরাট করে ইটভাঁটিতে ইট তৈরি করে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে কেরানীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পারভেজুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, কেউ আইনের ঊর্ধে নয়। অতিদ্রুত এদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাছাড়া পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন সভাপতি (পবা) আবু নাসের খান বলেন, ভারতবর্ষের সময় থেকে আমরা দেখে আসছি কেরানীগঞ্জ টলমলে বিশুদ্ধ পানিতে ভরপুর ছিল। গত কয়েক বছরে ভূমিদস্যুরা দখল ও দূষণে মেতে উঠেছে। তারা বিনা বাধায় দখল করে নিয়েছে নদী নালা, খালবিল ও শাখা খালগুলো। সরকারের উচিত ওই ভূমিদস্যুদের অর্থ জরিমানাসহ গ্রেফতার করে তাদের জেলহাজতে পাঠাতে হবে। তা নাহলে তাদের টনক নড়বে না। ভূমিদস্যু নুরে আলমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
×