ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম শহরের ওপর চলছে দূরপাল্লার বাস

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

চট্টগ্রাম শহরের ওপর চলছে দূরপাল্লার বাস

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম শহরের ভেতর দিয়ে অবৈধভাবে চলছে কক্সবাজারগামী বাসসহ ভারি যানবাহন। অবৈধভাবে শহরের ভেতর দিয়ে দূরপাল্লার গাড়ি চলার পেছনে পুলিশের অর্থ বাণিজ্যের বিষয়ে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানও এড়িয়ে চলছে বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার। দূরপাল্লার ভারি যানবাহনগুলো বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার দিয়ে কর্ণফুলী সেতু অতিক্রম করার কথা থাকলেও ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজির সুযোগ নিয়ে ফিরিঙ্গীবাজারের মেরিনার্স সড়ক ব্যবহার শুরু করেছে। একই ভাবে পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও লরিও শেষ পর্যন্ত পুলিশী সহায়তায় এ সড়ক ব্যবহার করে শহরের ভেতর গাড়ির জ্যাম সৃষ্টি করছে। চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও ফিরিঙ্গীবাজারের বিভিন্ন ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি এ ধরনের অভিযোগ তুললেও আমলে নিচ্ছে না পুলিশ প্রশাসন। অভিযোগ রয়েছে, মেরিনার্স সড়কে ফিরিঙ্গীবাজার মোড়ে ওতপেতে থাকে ট্রাফিক পুলিশের টিম। মাছের গাড়ি থেকে শুরু করে ভারি যানবাহন ট্রাক কোনটিরই রক্ষা নেই থামানোর কবল থেকে। বাম হাত আর ডান হাত উঁচু করে দিলেই চলে আসে টাকা, যেন আলাদীনের চেরাগ হাতের মুঠোয়। এ অর্থ আদায়ে নতুন প্রক্রিয়া সোর্স নিয়ে। এ প্রক্রিয়ায় একের পর এক ছোট গাড়িগুলোকে লাইনে দাঁড়িয়ে ডকুমেন্ট পরীক্ষার নামে অর্থ আদায় চলে, তেমনি বড় গাড়িগুলোর কোন ডকুমেন্ট না দেখেই হাতের মুঠোয় নেয়া হয় অর্থ। তবে ডকুমেন্ট যদি ঠিক থাকে তাতেও নিস্তার নেই, কোন না কোনভাবে অর্থ আদায়ের কৌশল অবলম্বন করা হয়। এ ব্যাপারে ট্রাফিক বিভাগের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অর্থ বাণিজ্যেরে অভিযোগ পেলেই সঙ্গে সঙ্গে ওই টিমকে তুলে এনে প্রশাসনিক শাস্তির ব্যবস্থা করা হয় ঠিকই। কিন্তু আরেকটি টিম ওই স্থানে দেয়া হলেও চিত্র একই থাকে। এর কারণ হচ্ছে অসাধু গাড়ি মালিকরা তাদের কাগজপত্র যেমন ঠিক রাখেন না, সে সুযোগটি কাজে লাগায় অসাধু ট্রাফিক পুলিশ। মূলত মেরিনার্স সড়ক দিয়ে ভারি যানবাহন চলাচলের কথা নয়। কিন্তু সুযোগ সন্ধানীরা ওই সড়ককে ঘিরে যেমন পরিবহন নিয়ে পার হয়, তেমনি পুলিশ সদস্যরাও নিজেদের অপরাধ জনসমক্ষে প্রদর্শন করে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) পক্ষ থেকে ২০১৪ সালে বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে শুধুমাত্র নগরীর যানজট নিরসনে। কিন্তু চট্টগ্রামের সর্বপ্রথম ফ্লাইওভার হিসেবে খ্যাত বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারটি অতিক্রম করে ছোট-বড় যানবাহনের শহর পেরিয়ে তৃতীয় কর্ণফুলী সেতুর গোল চক্কর পর্যন্ত যেতে প্রায় আধ ঘণ্টারও বেশি সময় ক্ষেপণ হয়। গাড়ির সময় ক্ষেপণকে কেন্দ্র করে ট্রাফিক পুলিশ ভারি যানবাহন থেকে অর্থ আদায় ও ছোট যানবাহন থেকে ডকুমেন্ট পরীক্ষার নামে অর্থ আদায়ের চিত্র প্রতিদিনের। নগরী থেকে গত কয়েক বছর আগেও ভারি যানবাহনগুলো কালুরঘাট সেতু হয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে চলাচল করত। এক্ষেত্রে বাস মালিকরা তথা সৌদিয়া, এস আলম, হানিফ, শাহ আমিনসহ বেশ কয়েকটি বাসের মালিক কোস্টার আকারে বাস তৈরি করে কর্ণফুলী বেইলি ব্রিজের ওপর দিয়ে চলাচল করত। কিন্তু ঢাকা থেকে আসা বৃহদায়তন এসি ও নন এসি বাসগুলো চলাচল করত কালুরঘাট সেতু হয়ে। আরও অভিযোগ রয়েছে, কর্ণফুলী তৃতীয় সেতু হওয়ার পর ছোট বাসগুলো বর্তমানে নগরীর এ কে খান থেকে জিইসি পর্যন্ত কাউন্টারে কাউন্টারে যাত্রী ওঠানামায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। বড় বাসগুলো সরাসরি বহদ্দারহাট হয়ে কর্ণফুলী সেতু দিয়ে কক্সবাজারের উদ্দেশে চলাচল করছিল। নৈশবাসগুলোর ক্ষেত্রেও একই ধরনের চিত্র ছিল গত কয়েক মাস আগেও। গত কয়েক মাস ধরে নৈশকোচগুলো এ কে খান থেকে টাইগারপাস-নিউমার্কেট হয়ে মেরিনার্স সড়ক দিয়ে কর্ণফুলী সেতু অতিক্রম করছে। সম্প্রতি নৈশকোচগুলো দিনের আলোতেও মেরিনার্স সড়ক দিয়ে কর্ণফুলী সেতু অতিক্রম করার ঘটনায় দেখা দিয়েছে দীর্ঘ যানজট। গত শুক্রবার ফিরিঙ্গীবাজার মেরিনার্স সড়ক পরিদর্শনে প্রত্যক্ষভাবে দেখা যায়, সকাল ৭টার দিকে এ সড়ক দিয়ে বেশকিছু নৈশকোচ, মাইক্রোবাস, কারসহ ছোট-বড় যাত্রীবাহী গাড়ি চলাচল করছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই ছিল নৈশকোচ। তবে সকাল ৮টার দিকে এ চিত্র পরিবর্তন হয়ে দেখা গেছে, দূরপাল্লার নৈশকোচ ও কক্সবাজারগামী ডে-কোচগুলোও চলছে এ সড়ক দিয়ে। একপর্যায়ে ফিরিঙ্গীবাজার মোড়ে দেখা গেছে, ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্টসহ তিন সদস্য মিলে ভারি যানবাহন থেকে অর্থ আদায় শুরু করেছে। ওভারলোড ট্রাক থামিয়ে সোর্স লাগিয়ে ট্রাফিক পুলিশের অর্থ আদায়ের কারণে শুরু হয়েছে দীর্ঘ যানজট। অপরদিকে, কর্ণফুলী সেতু গোল চক্করের একটু আগে মেরিনার্স সড়কের ক্রসিংয়ে ট্রাফিক পুলিশের আরও তিন সদস্য ভারি যানবাহন থেকে চাঁদা আদায়ের কারণে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। একই সড়কে দু’ভাগে ভাগ হওয়া ট্রাফিক পুলিশের দুটি দল যখন ভারি যানবাহন থেকে চাঁদা আদায় করছিল তখন দীর্ঘ প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার যানজট লেগে যায়। এ যানজট গোল চক্কর থেকে কোতোয়ালি মোড় পর্যন্ত পৌঁছায়, তখন প্রায় সকাল সাড়ে ৯টায়। দীর্ঘ প্রায় দেড়-দুই ঘণ্টার যানজটে নাকাল অবস্থা গাড়িতে থাকা যাত্রীদের। বিশেষ করে পিকনিকের বাস থেকে ফেলে দেয়া খাবারের বর্জ্যে পুরো সড়কটি যেন শেষ পর্যন্ত ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে।
×