স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ৬ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য উপজেলা নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ভূমিকা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে বিএনপি। শুক্রবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ সংশয় প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলা নির্র্বাচনে বিএনপি মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজারী জাকির হোসেনের বাড়িতে হামলার ঘটনায় কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি নির্বাচন কমিশন। নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের সময়ে এ ঘটনায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তাদের অধীনে নির্বাচন কতটুকু সুষ্ঠু হবে। এ ঘটনায় ফেনী স্টাইলের আলামত শুরু হয়ে গেছে। রিজভী আরও বলেন, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিন ছিল শুক্রবার। সে জন্য আওয়ামী লীগ প্রার্থীর লোকেরা জোর করে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্যই বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় মাইক্রো ও মোটরসাইকেলে করে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। হাজারী জাকির হোসেনকে বাসায় না পেয়ে তারা তার বাসায় ভাংচুর চালায় এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করে ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। ভাংচুর শেষ করে যাওয়ার সময় তারা বাড়ির লোকদের হুমকি দিয়ে বলে, যদি হাজারী জাকির হোসেন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করে তবে দেখে নেয়া হবে।
রিজভী বলেন, কানাডিয়ান আদালতে রায়ের পর সরকারের মন্ত্রীরা বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করায় সম্পর্কের অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতাদের লাফালাফি ও দাম্বিকতা দেশের সঙ্গে সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা বিশ্বব্যাংকের সম্পর্কের অবনতি হতে পারে। এতে করে বাংলাদেশে চলমান অনেক উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়নে সঙ্কট সৃষ্টি হতে পারে। কারণ, দেশে এখনও তাদের হাজার হাজার কোটি টাকার কাজ চলমান।
বিএনপি নেতা বলেন, সরকারের নির্দেশেই এনবিআর ও দুদক বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের কার্যক্রম খতিয়ে দেখে তাদের দুর্নীতির তদন্ত করছে। ইতোমধ্যে এনবিআর বিশ্বব্যাংকের ১৬টি গাড়ি তলব করেছে। বিশ্বব্যাংক সম্পর্কে সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের দায়িত্বজ্ঞানহীন নেতারা যেভাবে বক্তব্য রাখছেন, তা আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য অশনি সংকেত, যা দেশের জন্য বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।
কানাডার আদালতের রায়ের পরও বিশ্বব্যাংকের অবস্থানের পরিবর্তন হয়নি মন্তব্য করে রিজভী বলেন, এমনকি বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসে এত কিছুর পরও বিশ্বব্যাংক তাদের অবস্থান থেকে সরে আসেনি। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক স্বল্প সুদে বাংলাদেশকে ঋণ দেয়। দেশের অকাঠামো উন্নয়ন থেকে শুরু করে প্রতিটি খাতে তাদের বড় বড় প্রকল্প রয়েছে।
রিজভী অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের আমলে দেশে এমন কোন খাত নেই যেখানে দুর্নীতি নেই। দুর্নীতি করে দেশের সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ফোকলা করে ফেলা হয়েছে। শেয়ারবাজার থেকে লক্ষ কোটি টাকা লোপাট করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও তাদের আত্মীয়স্বজনরা। হাজার হাজার কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার করে সুইস ব্যাংক ভরে ফেলেছে। এছাড়া কেউ কেউ কানাডায় বাড়ি তৈরি করেছে, মালয়েশিয়ায় সুরম্য ভিলা বানিয়েছে। তারাই এখন নিজেদের সাফসুতরো হিসেবে জাহির করে উচ্চস্বরে চিৎকার করছেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের দেয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, নির্বাচন কী তাহলে শুধু শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের উপরই নির্ভর করবে। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও তার দলকে বাদ দিয়ে কোন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারবে না।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শাহজাদা মিয়া, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, আইনবিষয়ক সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়া।
খালেদাকে বাইরে রেখে নির্বাচন চেষ্টা সফল হবে না ॥ খালেদা জিয়াকে বাইরে রেখে নির্বাচনের চেষ্টা সফল হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার একটি বহুমুখী নির্বাচনী প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তারা বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়াকে বাইরে রেখে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে চায়। সে চেষ্টা করা হলে বিএনপি আন্দোলন করবে, তবে নেতিবাচক রাজনীতি করবে না। শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ডেমোক্রেটিক কাউন্সিল নামক একটি সংগঠন আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: