ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল কারচুপি করতেই ইভিএমে ভোটের কথা বলছেন ॥ রিজভী

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল কারচুপি করতেই ইভিএমে ভোটের কথা বলছেন ॥ রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ডিজিটাল কারচুপির জন্য প্রধানমন্ত্রী ইভিএমে ভোটের কথা বলছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নিজেদের অভিপ্রায় পূরণ করতে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে, নিজেদের ঘরের ছেলেকে সিইসি বানিয়েছে। তাই এ নির্বাচন কমিশন জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাবে, এটা কেউ বিশ্বাস করে না। রিজভী বলেন, প্রধান নির্বাচন কশিমনারকে নিয়ে সমালোচনার যে ঝড় উঠেছে তা থেকে জনগণের দৃষ্টি সরানোর জন্যই প্রধানমন্ত্রী ইভিএমে ভোটের কথা বলে আরেকটি ম্যাজিক জনগণের সামনে প্রদর্শন করছেন। তবে ইভিএমে ভোটের কথা বলার পেছনে কোন দুরভিসন্ধি রয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে আমি দৃঢ়কণ্ঠে বলতে চাই, প্রধানমন্ত্রীর উচ্চাভিলাষের কাছে সংগ্রামী জনগণ নিজেদের সপে দেবে না। ইভিএমে ভোট হলে জনগণ মেনে নেবে না। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সকল ষড়যন্ত্র জনগণ রুখে দেবে। বিএনপির মুখপাত্র রুহুল কবির রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজেকে চিরস্থায়ীভাবে ক্ষমতায় রাখার জন্য গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থাটাই আওয়ামী বস্তার মধ্যে পুরে বন্ধ করে রেখেছেন। সুতরাং তার পক্ষে নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ই-ভোটিং চালু করার ঘোষণা জনগণকে আরেকটি তামাশার বায়োস্কোপ দেখানো ছাড়া অন্য কিছু নয়। রিজভী বলেন, ইভিএমে ভোট গ্রহণ ও গণনা দ্রুত হয়। এ পদ্ধতিতে ব্যালট পেপার, বাক্স ও সিল লাগে না বলে তা অর্থ সাশ্রয়ীও। এর মাধ্যমে ভোটার একটি যন্ত্রে বোতাম চেপেই তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন এবং গণনা হয় স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে। তবে স্বয়ংক্রিয় এই ইভিএমে জালিয়াতির আশঙ্কার পাশাপাশি এর কারিগরি বিষয় উপলব্ধি করতে এ দেশের নিরক্ষর জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ সমস্যায় পড়তে পারে। কারণ, দেশে এখনও অনেক মানুষ নিরক্ষর। এত টেকনিক্যাল বিষয় উপলব্ধি করা বা বোঝা তাদের জন্য কষ্টসাধ্য। আর এই পদ্ধতিতে ভোটিংয়ের সার্ভার সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। সুতরাং তাদের জন্য ভোট কারচুপি করা খুবই সহজ হবে। রিজভী বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও যারা ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণের নিয়ম চালু করেছিল, এই ব্যবস্থায় ক্রটি থাকায় তারাও সেটি বন্ধ করে দিয়েছে। ভারত, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশ ই-ভোটিং পদ্ধতি চালু করলেও এটির বিরুদ্ধে মামলা করা হয় এবং সেটি বন্ধ করে দেয়া হয়। তাই ইভিএম চালুর বিষয়ে সরকারের আগ্রহ গোটা নির্বাচন ব্যবস্থাকে আওয়ামীকরণের মাধ্যমে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। নতুন সিইসির সমালোচনা করে রিজভী বলেন, উনি কে? বিসিএস ৭৩ ব্যাচের অফিসার। মানুষের একটা আসল নাম আরেকটা ডাক নাম থাকে। ‘নতুন সিইসির আসল নাম হচ্ছে বিসিএস ৭৩ ব্যাচ আর ডাক নাম হচ্ছে তোফায়েল সার্ভিস।’ অর্থাৎ কোন পরীক্ষা নেই সুপারিশ দিয়ে বিসিএস ৭৩ ব্যাচে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এরা চাকরিজীবনে কোন যোগ্যতাই দেখাতে পারেননি। এমন এক ব্যক্তিকে করা হয়েছে সিইসি। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, সহ-প্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন, আবদুল আউয়াল খান প্রমুখ। সহায়ক সরকার ছাড়া গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না- দুদু ॥ নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার ছাড়া দেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু। বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘জাতীয়তাবাদী দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন’ নামে একটি সংগঠন আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচীতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। দুদু বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যুতে সরকার সংবিধানের দোহাই দিয়ে আমাদের হাইকোর্ট দেখাচ্ছে। আমি সরকারকে বলব, নির্বাচনের ইস্যুতে সংবিধানে দোহাই না দিয়ে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার নিয়ে দেশের সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করুন। কারণ, সহায়ক সরকার ছাড়া দেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে না। দুদু বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে যারা নির্বাচনের কথা ভাবছেন তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। তিনি বলেন, দেশের মানুষ ভোটাধিকার, গণতন্ত্র ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য বিএনপির নেতৃত্বে আন্দোলন করতে রাস্তায় নামবে। মানবন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম, গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া প্রমুখ।
×