ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নিরাপদ আবাসন সঙ্কট কর্মজীবী নারীর প্রধান সমস্যা

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

নিরাপদ আবাসন সঙ্কট কর্মজীবী নারীর প্রধান সমস্যা

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ দেশের অর্থনীতিতে কর্মজীবী নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় কর্মক্ষেত্রে নারীর অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো। সেই সঙ্গে আবার বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়ে কর্মক্ষেত্র থেকে নারীর একাংশ ঝরে পড়তেও দেখা যাচ্ছে। প্রতিবন্ধকতার মধ্যে অন্যতম নারীর আবাসন সংকট। নারীর নিরাপদ আবাসন সঙ্কটের সমস্যা শুধু রাজধানীতেই নয় বরং দেশের বিভিন্ন বিভাগ, জেলা, উপজেলা ও গ্রামেও। কর্মজীবী নারীর জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হোস্টেলের সংখ্যা মাত্র সাতটি। এসব হোস্টেলে মোট আসনের বিপরীতে শুধু রাজধানীতেই কর্মজীবী নারীর সংখ্যা কয়েক হাজার গুণ বেশি। সরকারি হোস্টেলে আসন ফাঁকা না পেয়ে বাড়তি ভাড়াসহ নানা ভোগান্তি সঙ্গী করে ব্যক্তিমালিকানাধীন হোস্টেলে উঠতে বাধ্য হচ্ছেন অনেক নারী। আর নারীর আবাসন সংকটকে পুঁজি করেই গড়ে উঠছে একের পর এক ব্যক্তিমালিকানাধীন ছাত্রী হোস্টেল। নিরাপদ বাসস্থানের নিশ্চয়তা না পেয়ে কর্মবিমুখও হচ্ছেন এদের কেউ কেউ। আবাসন সঙ্কট নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় এই সঙ্কট মোকাবেলায় সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে আরও হোস্টেল নির্মাণের গুরুত্ব অপরিসীম। কর্মজীবী মহিলাদের নিরাপদ আবাসন সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে মহিলাবিষয়ক অধিদফতর নিজ অর্থায়নে সারা দেশে ৭টি কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল পরিচালনা করে আসছে। রাজধানী ঢাকার নীলক্ষেত, মিরপুর ও খিলগাঁওয়ে মোট ৩টি এবং খুলনা, যশোর, রাজশাহী ও চট্টগ্রামে ১টি করে হোস্টেলের মাধ্যমে কর্মজীবী নারীদের নিরাপদ আবাসন সেবা প্রদান করা হচ্ছে। মহিলাবিষয়ক অধিদফতর থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলগুলোর আসন সংখ্যা খুবই কম দেখা যায়। নীলক্ষেত কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলে মোট আসন সংখ্যা ৪৯৪। এর মধ্যে ৪৮২টি আসন সাধারণের এবং ১২টি অতিথি আসন। বেগম রোকেয়া কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল, খিলগাঁও। এখানে ২১০টি আসনের মধ্যে ২০০টি সাধারণের এবং ১০টি অতিথি আসন। মিরপুরের নওয়াব ফয়জুন্নেসা কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলে ১৫৪টি আসন। কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল চট্টগ্রাম, মোট আসন সংখ্যা ২১৫টি। খুলনা কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলের আসন সংখ্যা ১৫০টি। যশোরের কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলের আসন সংখ্যা ৪৫টি। রাজশাহী কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলে মোট ১১২টি আসন রয়েছে। সরকারী সাতটি কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলে মোট আসন সংখ্যা ১ হাজার ৩৮০টি। আফরিন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকতেই ছাড়তে হয় ছাত্রী হল। নিজের যোগ্যতায় বেসরকারী একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি হলেও, রাজধানীতে মাথা গোঁজার একটু ঠাঁই খুঁজতে গিয়ে নানা তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি কর্মজীবী এই নারী। কর্মজীবী নারী শারমিন বলেন, ‘বাসার সামনে ‘টুলেট’ দেয়া থাকলেও যখন জানতে চাচ্ছি তখন বলা হচ্ছে, ‘না’ এটা ব্যাচেলরদের জন্য ঠিকই তবে মেয়ে ব্যাচেলরদের জন্য না। সামাজিক কুসংস্কার, লিঙ্গ বৈষম্য আর নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও গত দুই দশকে যথেষ্ট এগিয়েছে এ দেশের নারীরা। তবে এ অগ্রযাত্রায় সব থেকে বড় বাধা নারীর আবাসন সঙ্কট। কয়েকজন কর্মজীবী নারী অভিযোগ করে বলেন, অফিসের কাজে ফিরতে দেরি হয়ে গেলে হোস্টেলে ঢোকার বিষয়ে অন্যান্য মেয়েদের মতো তাদের ক্ষেত্রেও নিয়মটা কড়াকড়ি থাকে এবং ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয় না। এমনই কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি শহুরে কর্মজীবী নারীর জন্য সরকারী উদ্যোগে রাজধানীতে পরিচালিত হোস্টেলের সংখ্যা মাত্র তিনটি। প্রাইভেট হোস্টেলের চেয়ে নিরাপদ ও কিছুটা নিরিবিলি হলেও সরকারী হোস্টেল নিয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ। নীলক্ষেত কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলের কয়েকজন কর্মজীবী নারী অভিযোগ করে বলেন, দ্রুত সিট ভাড়া বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের মাধ্যমে হোস্টেলের সিট পাওয়ার বিষয়টিও এখন অজানা নয়। এছাড়া অভিযোগ আছে অস্বাস্থ্যকর খাবারেরও। একই খাবার প্রতিদিন খেতে খেতে অনীহা জন্মেছে অনেকের মধ্যেই। তাই বাইরে থেকে খাবার কিনে এনে কিংবা খাবারের দোকান থেকে খেয়েও আসেন অনেকে। এছাড়া তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের এই সময়ে কর্মজীবী নারী হোস্টেলে নেই ইন্টারনেট সংযোগের কোন ব্যবস্থা। কয়েকবার কর্মজীবী নারীরা সংশ্লিষ্ট বিষয়টি উচ্চপর্যায়ে জানিয়ে আবেদন করলেও এখনও এ বিষয়ে কোন অগ্রগতি নেই। কয়েকজন নারী অভিযোগ করে বললেন, ‘আমরা ইচ্ছে করলেও ইন্টারনেট সংযোগ নিতে পারছি না। তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে আজ সব কিছুই সহজতর হয়েছে। কিন্তু আমরা হোস্টেল থেকে এর কোন সুবিধা ভোগ করতে পারছি না। আজকাল বাসে, ট্রেনে, ক্যাফেটেরিয়া, রেস্টুরেন্টের মতো জায়গাতেও ওয়াইফাই আছে। কিন্তু আমরা এখনও এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। আমাদেরও বিনোদনের দরকার আছে। প্রত্যেক তলায় একটি করে টিভি আছে। কিন্তু টিভি দেখার প্রতি অনীহা রয়েছে অনেকের।’ এ বিষয়ে মিরপুরের নওয়াব ফয়জুন্নেসা কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলের সুপার লতিফা বেগম জনকণ্ঠকে বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত সরকারী কোন কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলে ইন্টারনেট অথবা ওয়াইফাই সংযোগ দেয়া হয়নি। বোর্ডাররা অবশ্য মহিলা অধিদফতরে এ বিষয়ে আবেদন দিয়েছেন। আমরা হোস্টেল সুপাররাও এ বিষয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তবে এখনও এ বিষয়ের কোন প্রস্তাবনা রাখা হয়নি। তবে মিরপুরের এ হোস্টেলের অবকাঠামোগত উন্নয়নে অর্থাৎ এ হোস্টেলটি উর্ধমুখী করে ১০ তলায় সম্প্রসারণের কাজ শীঘ্রই শুরু হবে বলে জেনেছি। বর্তমানে তিনতলা বিশিষ্ট এ হোস্টেলে বোর্ডারের সংখ্যা ১৫৪ জন। তবে এটি সম্প্রসারণ হলে বোর্ডার সংখ্যা বাড়বে এবং কর্মজীবী নারীদের আবাসন সঙ্কটও কমবে।’ কর্মজীবী নারীদের আবাসন সমস্যা প্রকট রাজধানীতে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় যে চারটি কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল রয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। যেহেতু সরকারী কর্মজীবী হোস্টেলে এসব কর্মজীবী নারীদের আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত হচ্ছে না সেহেতু তাদের কোথাও না কোথাও তো ঠাঁই নিতে হবে। এ জন্য বেশিরভাগ ছাত্রী ও কর্মজীবী নারীরা প্রাইভেট হোস্টেলের পোস্টার, বিজ্ঞাপনে খুশি হয়ে হাজার হাজার টাকা খরচ করছেন ব্যক্তিমালিকানাধীন হোস্টেলে বসবাসের জন্য। কর্মজীবী নারী হোস্টেলের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথা বলা হলেও বাস্তবে তা নেই। এসব হোস্টেলের মালিকরা অধিক অর্থ লাভের জন্য দু’তিনজন থাকতে পারে এমন রুমে পাঁচ-ছয়জনকে ভাড়া দেন। ফার্মগেটের কয়েকটি ছাত্রী হোস্টেল ও মেসে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, একটি রুমে শুধু হার্ডবোর্ড দিয়ে আলাদা করে শুধু একটি সিঙ্গেল চৌকি রাখা যাবে এমন একাধিক রুম করা হয়েছে। এছাড়া চার-পাঁচটা রুমের জন্য মাত্র একটি বাথরুম রয়েছে। অর্থাৎ বিশ-পঁচিশজন নারীর জন্য মাত্র একটি বাথরুম বরাদ্দ রয়েছে। অনেক সময় তিন-চার দিন পর্যন্ত লাইনে পানি থাকে না। প্রতিবাদ করতে গেলে হোস্টেল ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দেয়া হয়। এসব হোস্টেলের ভাড়া নিয়েও আছে নানা অভিযোগ। কিন্তু সে অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয় না বলে জানিয়েছে অনেক নারীরা। বছরের পর বছর গেলেও রুমে রং করা হয় না। রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় কোচিং সেন্টার ও বিসিএস কোচিং সেন্টার থাকার কারণে ছাত্রছাত্রীদের একটি বিরাট অংশ প্রতিবছর ঢাকায় এসে বসবাস শুরু করছে। এ জন্য এ এলাকার বিভিন্ন হোস্টেলের মালিকরাও পাঁচজনের জায়গাতে ১০ জনকে বাড়ি ভাড়া দেয়ার মাধ্যমে রমরমা ব্যবসা করে যাচ্ছেন। অন্যদিকে রাজধানীর ধানম-ি এলাকায় বিভিন্ন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় থাকার কারণে এর আশপাশের এলাকা যেমনÑ ধানমন্ডি-১৫ নম্বর, ঝিগাতলা, লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুরে জালের বিস্তৃত রয়েছে মহিলা হোস্টেল ও মেস। এখানকার প্রায় প্রতিটি এলাকাতেই ব্যক্তিমালিকানাধীন হোস্টেলগুলোতে চলছে উচ্চ ভাড়ার দৌরাত্ম। ঝিগাতলার একটি বেসরকারী ছাত্রী হোস্টেলে থাকেন তাজরীন রহমান। তিনি বলেন, ‘মাত্র দুই মাস আগে হোস্টেলে এসেছি। আমার কাছ থেকে প্রতিমাসে হোস্টেল চার্জ বাবদ সাড়ে ৩ হাজার টাকা রাখা হয়। খোঁজ নিয়ে জেনেছি, অনেকের কাছ থেকে কম নেয়া হচ্ছে। আমার কাছ থেকে কেন বেশি নেয়া হচ্ছে সে বিষয়ে কিছু বলতে গেলে হোস্টেল কর্তৃপক্ষ বলেছেন, আপনি তো সব জেনে-বুঝেই এখানে এসেছেন।’ যদিও সব ধরনের বিজ্ঞাপনেই বোর্ডারদের জন্য সব সময় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথা বলা থাকে। কিন্তু রাজধানীর বেশ কয়েকটি হোস্টেলগুলোতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ কর্মজীবী নারী হোস্টেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক। হোস্টেলগুলোতে বিভিন্ন অসুবিধাকে পায়ে ঠেলে যারা ছাত্রী মেসে উঠতে চান তাদেরও কম ভোগান্তি সহ্য করতে হয় না। দুই রুম কিংবা তিন রুমের ফ্ল্যাট বাসা যে কোন এক নারী ভাড়া নিয়ে অন্য মেয়েদের সেই বাসায় উঠিয়ে ব্যবসা করে থাকেন। মেসগুলোতেও এক রুমে তিনজনসহ ডাইনিংয়ে একজন অথবা দুইজনের থাকার ব্যবস্থা করা হয়। এ ক্ষেত্রে মেসের অন্যান্য সদস্যরা বাড়ির ভাড়া সম্পর্কে জ্ঞাত না হওয়ায় তাদের কাছ থেকে যে ভাড়া চাওয়া হয় তারা সে ভাড়াতেই থাকতে রাজি হয়। তাই ভাড়ার নৈরাজ্য থেকেই যাচ্ছে। অনেকেই আবার ফ্যামিলি বাসায় এক রুম ভাড়া নিয়ে সাবলেটে থাকেন। এখানেও বিড়ম্বনার শেষ নেই। বাসা খুঁজতে গিয়ে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হন অনেক নারীরা। কর্মজীবী নারীরা সাবলেটে থাকছেন কিছু ছাত্রী কিংবা পরিচিত পরিবারের সঙ্গে। আর সাবলেটে থাকাটা যে কতটা বিপত্তিকর, তা একজন সাবলেটে থাকা মেয়ে ছাড়া কেউ উপলব্ধি করতে পারেন না। সাবলেট থাকার জন্য প্রত্যেককেই গুনতে হয় অতিরিক্ত ভাড়া। তারপরও তারা রান্নাবান্নাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। রাজধানীর ধানম-ি-১৫ নম্বর স্টাফ কোয়ার্টারের সাবলেটের বাসিন্দা নওশীন আরা। তিনি কাজ করেন ধানম-ি ২৭-র একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘রাত দশটার আগে বাসায় আসতে হবে। কিন্তু যখন ভাড়া নিয়েছিলাম তখন বলা হয়েছিল রাত ১২টার মধ্যে আসলেও হবে। আমি আমার রুমে উচ্চঃস্বরে কথা বলতে পারি না। ঘরে ফ্রিজ রাখা যাবে না। রান্নাঘরে আমাকে পরে ঢুকতে হয়। পানি ব্যবহার করতে হবে হিসাব করে। এমনটা হাজারো অভিযোগ আর বিধিনিষেধ মেনে চলতে হয়। মাঝে মাঝে নিজেকে বন্দী মনে হচ্ছে। একবার বাসা ছাড়লে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তাই বাসাটি ছাড়তেও পারছি না।’ সাবলেটে থাকা প্রত্যেক মেয়েকেই ছোট-বড় এমন সমস্যা মোকাবেলা করে থাকতে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, সাবলেট বাসায় থাকা মেয়েদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কুপ্রস্তাবও দেয়া হয়ে থাকে। রাজি না হলে বাসা ছেড়ে চলে যেতে হয়। লালমাটিয়ার এক কর্মজীবী নারী বলেন, তিনি যে বাসায় সাবলেটে থাকতেন সে বাসার গৃহকর্তা প্রায়ই তাকে দেখলে বিভিন্ন ইঙ্গিত করতেন। প্রথমত, সন্দেহের চোখে না দেখলেও কিছুদিন পর সেই লোকটি রাতে তার রুমে টোকা দিতেন। এ পরিস্থিতিতে ভয় পেয়ে কিছুদিন পরই তিনি ওই বাসা ছেড়ে চলে আসতে বাধ্য হন। কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রধান অন্তরায় নারীর আবাসন সংকট বলে মনে করেন নারী নেত্রীরা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম জনকণ্ঠকে বলেন, ‘সরকারী পরিচালনা রাজধানীতে যে তিনটি সরকারী কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল আছে সেগুলোতে বোর্ডারের সিট সংখ্যা সামান্য। বাকি নারীরা কোথায় যাবে? সবার আগে কর্মজীবী নারীর আবাসন সঙ্কট নিরসনে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা এখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আবাসিক সমস্যাসহ কর্মক্ষেত্রে নানান সমস্যায় আজকের নারীরা কর্মক্ষেত্র বিমুখ হচ্ছে। অনেকেই রাজধানী ছেড়ে চলে যাচ্ছে নিজ নিজ অঞ্চলে। অনেক আগে থেকেই কর্মজীবী নারীদের আবাসন সঙ্কট সমাজে চিত্রায়িত হয়েছে। কিন্তু এখনও তার অগ্রগতির চিত্র পাল্টেনি।’ তবে মহিলা ও শিশু অধিদফতরের তথ্যমতে, বাজধানীর তিনটি সরকারী কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল সম্প্রসারণসহ উপজেলা পর্যায়ে সরকারী কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ প্রক্রিয়াধীন। এ বিষয়ে মহিলা ও শিশু অধিদফতরের প্রোগ্রাম অফিসার শরীফা আক্তার জনকণ্ঠকে বলেন, ‘রাজধানীর খিলগাঁওয়ের বেগম রোকেয়া কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল ও মিরপুরের নওয়াব ফয়জুন্নেসা কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলের ১০ তলায় উর্ধমুখী করতে ইতোমধ্যে বিল পাস হয়েছে। বাজেটেও তৈরি। শীঘ্রই কাজ বাস্তবায়ন হবে। এছাড়া নীলক্ষেত কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল সম্প্রসারণের বিলটি প্রস্তাবিত রয়েছে। সেই সঙ্গে, দেশের বেশ কয়েকটি উপজেলায় কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলের কাজ চলমান রয়েছে। এগুলোর মধ্যেÑ শেরপুরের নালিতাবাড়িতে কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল ও ট্রেনিং সেন্টার, আশুলিয়াতে নারী গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল, সোনাইমুড়ী কালিগঞ্জ আড়াইহাজারের মতবাড়িয়া উপজেলায় কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল, গাজীপুরের কালিগঞ্জে কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল ও শিশু দিবাযতœ কেন্দ্রের কাজ শীঘ্রই শেষ হবে।’ ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে বহু দূর। সঙ্গে এগোচ্ছে অর্থনীতি। তাই পুরুষের পাশাপাশি নারীকেও নিতে হবে যৌথ প্রয়াস। আর তাই নারীবান্ধব কর্ম পরিবেশ তৈরির চ্যালেঞ্জ সকলের। সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে এগিয়ে আসতে হবে নারীর নিরাপদ আবাসন সঙ্কট সমাধানে। তাহলেই বাড়বে কর্মক্ষেত্রে নারীর সমান অংশগ্রহণ। স্বাবলম্বী হবে নারী জাতি। মিলবে নারীর অর্থনৈতিক মুক্তি।
×