ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

আক্রান্ত উদ্ভিদে ভিন্ন ঘ্রাণ

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

আক্রান্ত উদ্ভিদে ভিন্ন ঘ্রাণ

উদ্ভিদভোজী প্রাণীদের দ্বারা আক্রান্ত হলে উদ্ভিদরা তাদের স্বাভাবিক ঘ্রাণের পরিবর্তে ভিন্ন ধরনের ঘ্রাণ ছাড়ে। আবার আক্রমণকারী একেক রকম উদ্ভিদভোজীর ক্ষেত্রে বিকীরিত ঘ্রাণ হয় একেক রকম। বিজ্ঞান সাময়িকী ‘নিউফাইটোলজিস্ট’-এ প্রকাশিত এক নতুন সমীক্ষা রিপোর্টে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। সমীক্ষায় যুক্ত গবেষকরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করেছেন যে দেশীয় উদ্ভিদ বিজাতীয় বা বিদেশী তৃণভোজীর দ্বারা আক্রান্ত হলে এক বিশেষ ধরনের ঘ্রাণ ছাড়ে। উদ্ভিদ ঘ্রাণ ছাড়ে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য। যেমন পরজীবী বোলতাকে জানিয়ে দেয়ার জন্য যে একটা শুয়াপোকা এসে হাজির হয়েছে। এতে উদ্ভিদটির হয়ত তাৎক্ষণিক কোন সাহায্য হয় না তবে দীর্ঘ বিচারে এর অর্থ দাঁড়ায় এই যে পরবর্তী প্রজন্মের উদ্ভিদের বেলায় কমসংখ্যক প্রজাপতি ও অতিভোজী শুয়াপোকার উপস্থিতি ঘটবে। হল্যান্ডের ফিল্ড মাস্টার্ড উদ্ভিদ যার বোটানিক্যাল নাম ব্রাসিকা রাপা দেশীয় শুয়াপোকা, জাবপোকা ইত্যাদির দ্বারা আক্রান্ত হলে যে ঘ্রাণ ছাড়ে, বিজাতীয় পোকাদের দ্বারা আক্রান্ত হলে তা থেকে ভিন্ন ধরনের ঘ্রাণ ছাড়ে। সুইজারল্যান্ডের দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানীরা ১২ ধরনের তৃণভোজীর প্রভাব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছেন। এর মধ্যে বিশেষ ও সাধারণ, চোসক ও চর্বনকারী এবং দেশজ ও বিজাতীয় তৃণভোজী রয়েছে। আর জাতের মধ্যে আছে বাঁধাকপির পোকা থেকে শুরু করে ছোট ছোট সাদা থেকে সবুজ রঙের পিচ ফলের জাবপোকা। গবেষকরা গ্যাস ক্রোমোটোগ্রাফ ব্যবহার করেও অতিমাত্রায় নির্ভুল স্পেকট্রোমিটার দিয়ে উদ্ভিদ থেকে নির্গত ঘ্রাণের ক্ষেত্রে সূক্ষ্ম পার্থক্য তা তারতম্য চিহ্নিত করেন। সুনির্দিষ্ট উদ্ভিদ কিভাবে পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী সাড়া দেয় ওই তারতম্যগুলোই ছিল তার দর্শনীয় প্রমাণ। ভ্যান ডাম নামে এক গবেষক বলেন, ‘ওদের স্নায়ুতন্ত্র না থাকতে পারে, চোখ, কান, মুখ না থাকতে পারে তথাপি ওরা কে বা কারা ওদের আক্রমণ করছে তা নির্ণয় করতে সক্ষম। এর ভিত্তিতে তারা পরজীবী বোলতাগুলোকে নির্ভরযোগ্য তথ্য প্রেরণ করতে পারে। যেটা বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো উদ্ভিদরা দেশজ ও বিদেশী বা বিজাতীয় তৃণভোজীর মধ্যে পার্থক্যও টানতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তন ও বিশ্বায়নের কারণে নেদারল্যান্ডসে ক্রমবর্ধমান সংখ্যক বিদেশী তৃণভোজীর আগমন ঘটেছে। এতে উদ্ভিদ, তৃণভোজী ও পরজীবী বোলতার মধ্যকার বর্তমান মিথষ্ক্রিয়া নস্যাত করে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করেছিলেন গবেষকরা। তাদের প্রাথমিক ধারণা ছিল এই যে বিদেশী বা বিজাতীয় তৃণভোজীদের দ্বারা আক্রান্ত হলে উদ্ভিদ যে নতুন ধরনের ঘ্রাণ ছাড়বে তাতে পরজীবী বোলতারা বিভ্রান্ত হতে পারে। এতে করে জীবতাত্ত্বিক উপায়ে কীট নিয়ন্ত্রণের কার্যকারিতা হ্রাস পেতে পারে। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে যে স্থানীয় পরজীবী বোলতারা ঘ্রাণের মধ্যে পার্থক্য শনাক্ত করে এসব উদ্ভিদ পরিহার করা শিখতে পারে। সূত্র : ন্যাশনাল জিওগ্রাফি
×