ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পরীক্ষার মুখোমুখি মোদির তিন বছরের শাসনামল

প্রকাশিত: ০৪:৫২, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

পরীক্ষার মুখোমুখি মোদির তিন বছরের শাসনামল

উত্তর প্রদেশ ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য। সেখানকার স্থানীয় ভোটার সমর্থনেই মূলত তিন বছর আগে নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু এখন সেখানে যে রাজ্য বিধানসভা হচ্ছে তাতে ক্ষমতাসীন বিজেপি শক্ত চ্যালেঞ্জের মুুখোমুখি হয়েছে। তিন বছর আগে যারা দলটিকে ভোট দিয়েছিল তারা সম্ভবত এবার তাকে ভোট দিচ্ছে না। নিউইয়র্ক টাইমস। উত্তর প্রদেশে সমাজবাদী দল আগে থেকেই মোটামুটি ভাল অবস্থানে ছিল। দলটি সেখানকার রাজ্য সরকারে। সেই সমাজবাদী দলের সঙ্গে কংগ্রেসের জোটকে বিজেপি কিভাবে আটকে দেয় সেটি এখন দেখার বিষয়। ওই রাজ্যে বিধানসভার আসন সংখ্যা ৪০৩। লোকসংখ্যা প্রায় ২০ কোটি। নির্বাচনে প্রধান প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলো হলো ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি), সমাজবাদী পার্টি ও কংগ্রেস জোট এবং ভারতীয় সমাজবাদী পার্টি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে এবার উত্তর প্রদেশের লড়াইটা হচ্ছে মূলত বিজেপি ও কংগ্রেস সমাজবাদী জোটের মধ্যে। সাত পর্বের এ নির্বাচন এ মাসের ১১ তারিখ শুরু হয়েছে, চলবে আগামী মাসের ৮ তারিখ পর্যন্ত। ধর্ম পাল সিং নামে রাজ্যের ৪০ বছর বয়সী এক কৃষক বলছেন, ‘কৃষকরা খুব আশা নিয়ে মোদিকে গত নির্বাচনে ভোট দিয়েছিল। কিন্তু আমরা চরমভাবে হতাশ হয়েছি।’ এবারের ভোটকে তাই মোদির তিন বছরের শাসনামলের জন্য একটি গণভোট হিসেবে দেখা হচ্ছে। মেয়াদের বাদ বাকি সময়ে তিনি তার অবশিষ্ট উচ্চাভিলাষী কর্মসূচী গ্রহণ করতে পারবেন কিনা তা অনেকাংশে নির্ভর করছে বিধানসভা নির্বাচনের ফলের ওপর। ভারতের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত চিনির কলগুলোর কাছে আখ চাষীদের কয়েক মাসের পাওনা বাকি পড়েছে। সেখানকার পল্লী এলাকার দিনমজুর ও খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষজন জানিয়েছেন কয়েক মাস আগে মোদির নোট বাতিলের ফলে তারা ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে মোদি গত নবেম্বরে ৫শ’ ও ১ হাজার রুপীর পুরনো নোট বাাতিল করে নতুন নোট চালু করেন। উত্তর প্রদেশে বিজেপি ক্ষমতায় নেই। তাই সেখানকার আখ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যনীতির সঙ্গে সরাসরি তাদের যোগাযোগ নেই তা সত্ত্বেও ভোটের রাজনীতিতে তাদের এসবের দায় নিতে হচ্ছে। কারণ ২০১৪ সালে মোদির অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির ওপর সারাদেশের মতো উত্তর প্রদেশের জনগণও আস্থা রেখেছিল। বিজেপির উল্লেখযোগ্য প্রার্থীরা হলেন- রাজনাথ সিংয়ের ছেলে পঙ্কজ সিং। তিনি নয়ডা আসন থেকে লড়ছেন। এছাড়া মথুরা আসন থেকে লড়ছেন বিজেপি নেতা শ্রীকান্ত শর্মা। মিরাট থেকে লড়ছেন লক্ষ্মীকান্ত বাজপেয়ি। নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। মুজাফফরাবাদের মতো স্পর্শকাতর জেলাগুলোতে নির্বাচন কমিশনের বিশেষ নজর রয়েছে। সেখানে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। উত্তর প্রদেশে দারিদ্র্য ও দুর্নীতিকে সামনে রেখে প্রচার চালিয়েছেন মোদি। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় সরকারের নোট বাতিলকে ইস্যু করে প্রচার চালিয়েছেন রাহুল গান্ধী ও অখিলেশ যাদব। তবে ভোটের লড়াইয়ে আগে থেকে কিছু বলা কঠিন। তবে একটি জনমত জরিপে অবশ্য কংগ্রেস-সমাজবাদী জোটের তুলনায় বিজেপিকে এগিয়ে থাকতে দেখা গেছে। শেষ মুহূর্তে সংখ্যালঘু ভোট ট্রাম্পকার্ড হয়ে উঠতে পারে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। সেক্ষেত্রে কংগ্রেস-সমাজবাদী জোট মোদির বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। ২০১৯ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রেও এই রাজ্যে শক্ত অবস্থান দরকার মোদির। তাই এবার উত্তর প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছে বিজেপি।
×