ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

চাঁদা না দেয়ায় নয় বছর ধরে হয়রানির অভিযোগ

মুক্তিযোদ্ধা পিতা খুনের আর পুত্র ছিনতাই মামলার আসামি

প্রকাশিত: ০৪:৪৯, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

মুক্তিযোদ্ধা পিতা খুনের আর পুত্র ছিনতাই মামলার আসামি

গাফফার খান চৌধুরী ॥ চাঁদা না দেয়ায় ঢাকায় সত্তর বছর বয়সী এক মুক্তিযোদ্ধাকে খুনের মামলার আসামি করে নয় বছর ধরে নানাভাবে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া সম্প্রতি এই মুক্তিযোদ্ধার জাপান থেকে আসা এক ছেলেকে ছিনতাই মামলার আসামি করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সামাজিক লোকলজ্জায় এই মুক্তিযোদ্ধার এক ছেলের বিয়ের অনুুষ্ঠান অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বিয়ের অনুষ্ঠানে অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা করছে এই মুক্তিযোদ্ধা পরিবার। জসীম নামে স্থানীয় এক ডিশ ব্যবসায়ী এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। জসীমের দুই ভাই সন্ত্রাসী কর্মকা-ে জড়িত থাকার সূত্র ধরে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হয়েছে। আরেক ভাই সন্ত্রাসীদের গুলিতে চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছে। নিহত এক ভাই পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ছিল। খোদ ঢাকার গেন্ডারিয়া থানার কয়েক গজ সামনেই ফরিদাবাদ এলাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় নীরব উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোন ধরনের অরাজক পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশ সতর্ক রয়েছে বলে জানিয়েছেন গেন্ডারিয়া থানার ওসি। এ ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা (গ্রুপ কমান্ডার) আবুল হাসেম হাওলাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, তিনি গেন্ডারিয়া থানাধীন ফরিদাবাদ ৫৩/১/এ নম্বর বাড়ির মালিক। ছয়তলা বাড়িটি প্রায় দশ কাঠা জমির ওপর নির্মিত। এর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০০৮ সালে। বাড়ি নির্মাণের সময় স্থানীয় চাঁদাবাজ ও পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী দীন ইসলাম দিলা ও তার ভাই জসীম মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে তারা হুমকি দিতে থাকে। এমন হুমকির প্রেক্ষিতে দুই ছেলেকে জাপান পাঠিয়ে দিই। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই ২০১০ সালের ৫ নবেম্বর নিজ বাসার সামনে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন দীন ইসলাম দিলা। এ মামলায় তাকে আসামি করা হয়। যা হয়রানির উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। মামলাটি বিচারাধীন। মামলার আসামি হয়ে নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন তিনি ও তাঁর পরিবার। এরই মধ্যে গত ৬ ফেব্রুয়ারি দিলার ভাই জসীম তার ছেলে জাপান প্রবাসী (সম্প্রতি দেশে এসেছে) ফরহাদ হোসেন অলুকে আসামি করে গেন্ডারিয়া থানায় একটি ছিনতাই মামলা দায়ের করেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, তার ছেলে ও লিটন নামের একজন জসীমের স্ত্রীর গলার সোয়া লাখ টাকা মূল্যের স্বর্ণের চেইন ও নগদ সাড়ে নয় হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। যা একেবারেই মিথ্যা। তিনি ব্যক্তিগতভাবে কোটিপতি। ঢাকায় নিজস্ব বাড়ি ছাড়াও তার ঢাকার সদরঘাটে বহুতল গ্রেটওয়াল মার্কেট রয়েছে। তার ছেলের ছিনতাই করার প্রশ্নই আসে না। এ মাসেই তার ছেলের বিয়ে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সামাজিকভাবে তিনি রীতিমতো লজ্জায় পড়েছেন। এমনকি বিয়ে ভেঙ্গে যেতে পারেÑ স্থানীয়রাও এমনটাই জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে গেন্ডারিয়া থানার ওসি মাহবুব আলম জনকণ্ঠকে বলেন, জসীমের দায়ের করা মামলায় লিটন গ্রেফতার হয়। লিটন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। পুলিশ কারও পক্ষ নিয়ে মামলা তদন্ত করছে না। নিরপেক্ষভাবে মামলাটির তদন্ত করছে। মামলার বাদী জসীমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জনকন্ঠকে বলেন, তার দায়েরকৃত মামলাটি সঠিক। অলুর পিতা আবুল হাসেম হাওলাদার দীলা হত্যা মামলার আসামি। মামলাটি আদালতে বিচারাধীন। মামলা তুলে নিতেই অলু ও লিটন তাকে এবং তার স্ত্রীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এরপর যাওয়ার সময় তার স্ত্রীর গলায় থাকা স্বর্ণের চেইন ও তার পকেটে থাকা নগদ সাড়ে নয় হাজার টাকা নিয়ে যায়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে দীলা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিল। তার হরিচরণ রোডের বাড়ি থেকে অস্ত্র গোলাবারুদ উদ্ধার হয়েছিল। পরবর্তীতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দীলা ২০১০ সালে নিহত হন। সন্ত্রাসী কর্মকা-ে জড়িত থাকার কারণে তার আরেক ভাই ফারুক সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। এছাড়া সন্ত্রাসী কর্মকা-ে জড়িত থাকার দায়ে ওয়াসিম নামে আরেক ভাই বাসার সামনেই সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত হয়ে চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন।
×