ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জয়পুরহাটে লাইব্রেরীর কাজ বন্ধের প্রতিবাদে মানববন্ধন

প্রকাশিত: ০৪:৪৮, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

জয়পুরহাটে লাইব্রেরীর কাজ বন্ধের প্রতিবাদে মানববন্ধন

নিজস্ব সংবাদদাতা, জয়পুরহাট, ১৬ ফেব্রুয়ারি ॥ ১৯৪৭ থেকে ২০১৭। দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে সংস্কৃতি চর্চার মিলনকেন্দ্র হিসেবে যে প্রতিষ্ঠানটি আলো জ্বালিয়ে রেখেছে, সে প্রতিষ্ঠানের চলমান কর্মকা-কে বাধাগ্রস্ত করার জন্য বিশেষ গোষ্ঠী নেপথ্যে থেকে সরকারের প্রশাসনকে ব্যবহার করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। দীর্ঘদিনের এ প্রতিষ্ঠানটি জয়পুরহাটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ ঘেঁষে জেলা পরিষদের জায়গায় টিনশেডের তিনটি ঘরে পাঠাগার ও সাংস্কৃতিক কর্মকা- পরিচালিত হয়ে আসছিল। জয়পুরহাটের বেশ কয়েকজন সংস্কৃতিমনস্ক মানুষ প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। প্রতিষ্ঠানের ধারাবাহিকতায় জায়গা সঙ্কুলান না হওয়ায় এবং পুরানো টিনশেডের ভবন জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় ১৯৭৬ সালে রাজশাহী উন্নয়ন বোর্ডের আর্থিক সহায়তায় লাইব্রেরী ভবনটি পাকা করা হয় এবং টিনশেড ভবনটির সংস্কার করা হয়। বইপ্রেমিক স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী ছাড়াও কয়েক শ’ পাঠক প্রতিদিন লাইব্রেরী থেকে বই নিয়ে জ্ঞানার্জন করে আসছে। এছাড়া ঢাকা থেকে প্রকাশিত সকল দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকা এ পাঠাগারে সংরক্ষণ করা হয়, যা থেকে অসংখ্য সংবাদ পাঠকের আনাগোনা গড়ে ওঠে। প্রায় ১৪ হাজার বই ও কয়েক হাজার সংবাদপত্র এবং ম্যাগাজিন এ লাইব্রেরীতে সংরক্ষিত আছে। জাতীয় দিবসগুলো ছাড়াও কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাস, লালন ফকির, জয়নুল আবেদিন, পল্লীকবি জসীমউদ্দীনসহ বিশিষ্ট কবি-সাহিত্যিকদের জন্ম ও মৃত্যু দিবস উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রতি বছর বইমেলায় লাইব্রেরী এ্যান্ড ক্লাবের উদ্যোগী ভূমিকা সংস্কৃতিসেবী মানুষদের জমায়েত করে। সে প্রতিষ্ঠানটিকে ঘিরে কিছু মানুষ ষড়যন্ত্র শুরু করেছে, যারা প্রশাসনের একটি অংশকে ব্যবহার করছে। জয়পুরহাটের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আলোকবর্তিকা হিসেবে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করে। সংস্কৃতিসেবী মানুষদের প্রতিনিয়তই লাইব্রেরী এ্যান্ড ক্লাবকেন্দ্রিক সচেতনতা গড়ে ওঠে, সেই প্রতিষ্ঠানের টিনশেডের ভবনটি পাকা করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে লাইব্রেরী এ্যান্ড ক্লাব কর্তৃপক্ষ যখন নির্মাণকাজ শুরু করে তখনই জেলা পরিষদ থেকে লাইব্রেরী এ্যান্ড ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বরাবর চিঠি দিয়ে জানানো হয়, এ ভবনের দক্ষিণ অংশ যেখানে নির্মাণকাজ চলছে তা জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের প্রশাসক এসএম সোলায়মান আলীর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত জিল্লুর রহমানের নামে লিজ দেয়া হয়েছে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে জয়পুরহাটের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। শুরু হয় প্রতিবাদ, সমাবেশ, মানববন্ধন। ঠিক এর পরপরই জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষরে আরও একটি চিঠি লাইব্রেরী এ্যান্ড ক্লাবের সম্পাদক বরাবর দেয়া হয় যেখানে বলা হয়, জেলা পরিষদের জায়গায় লাইব্রেরী এ্যান্ড ক্লাবে নামে প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে নির্মাণকাজ করছে। তা অবিলম্বে বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়। এ নির্দেশনামা লঙ্ঘন করলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবেও বলে জানানো হয়। ওই চিঠিপ্রাপ্তির পর জয়পুরহাটের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে প্রশ্ন উঠেছে- সংস্কৃতিবান্ধব বর্তমান সরকারের প্রশাসন জয়পুরহাটের লাইব্রেরী এ্যান্ড ক্লাবের মতো প্রাচীন প্রতিষ্ঠান যা জেলা পরিষদের জায়গায় দীর্ঘদিন ধরে পরিচালিত হয়ে আসছে তা অপসারণে তৎপর হয়েছে যা নিন্দাজনক।
×