ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যোগাযোগ বেহাল

সুতাবাড়িয়া নদীর সেতু বিধ্বস্ত

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

সুতাবাড়িয়া নদীর সেতু বিধ্বস্ত

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার সুতাবাড়িয়া শাখা নদীর ওপরের সেতুটি গত দুই মাস ধরে বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এটি মেরামত, সংস্কার কিংবা নতুন সেতু নির্মাণে নেই কর্তৃপক্ষের তৎপরতা। ফলে নদীর দু’পারের এগারোটি গ্রামের মানুষ যাতায়াতে প্রতিনিয়ত চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এর মধ্যে ৬ গ্রামের মানুষের উপজেলা সদরে যোগাযোগ বেহাল দশার সৃষ্টি হয়েছে। পার্শ্ববর্তী গলাচিপা উপজেলার সঙ্গেও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মানুষের দুর্ভোগের সত্যতা স্বীকার করলেও নতুন সেতু নির্মাণে অর্থ বরাদ্দের অভাবকে দায়ী করেছেন। দশমিনা উপজেলা প্রকৌশল দফতর সূত্রে জানা গেছে, দশমিনা উপজেলার ঠাকুরেরহাট সংলগ্ন পরিত্যক্ত লোহার সেতুটি ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে বেতাগীসানকিপুর ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত সুতাবড়িয়া শাখা নদীর জমির মৃধা বাজার এলাকায় স্থাপন করা হয়। দেড়শ’ ফুট লম্বা লোহার বিমের ওপর আরসিসি কংক্রিট ঢালাই সেতুটির প্রায় ২৫ ফুট অংশ গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর বালু বোঝাই কার্গোর ধাক্কায় ভেঙ্গে পড়ে। ওই দুর্ঘটনায় নুসরাত জাহান নামের শিশু মারা যায়। আহত হয় কয়েক পথচারী। কিন্তু দুর্ঘটনার দুই মাস পেরিয়ে গেলেও অদ্যাবধি সেতুটি সংস্কার, মেরামত কিংবা নতুন সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এলাকাবাসী জানান, নদীর পূর্বপারের মরদানা, গরমআলী, জাফরাবাদ, খারিজাবেতাগীর একাংশ ও তফালবাড়িয়ার একাংশ এবং পশ্চিমপারের রামবল্লভ, দাবাড়ি, চিঙ্গুরিয়া, চন্দ্রাবাজ, খারিজাবেতাগী, তফালবাড়িয়ার একাংশ এ এগারো গ্রামের মানুষের সহজ যোগাযোগ ছিল জমির মৃধা বাজার এলাকার সেতুটি। পূর্বপারের লোকজন নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজার-হাট, জরুরী স্বাস্থ্যসেবায় কমিউনিটি ক্লিনিক, মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার জন্য পশ্চিমপারে আসতে হয়। আবার পশ্চিমপারের লোকজন সরাসরি উপজেলা সদরে যোগাযোগে এ সেতু পার হতো। নদীর পশ্চিমপারের খারিজা বেতাগী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিরন আহমেদ নদী পারাপারে দুর্ভোগ প্রসঙ্গে বলেন, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৩২০ শিক্ষার্থী ও খারিজাবেতাগী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২১৩ শিশু শিক্ষার্থী রয়েছে। এদের মধ্যে অন্তত দেড়শ’ শিক্ষার্থী নদীর পূর্বপারের বাসিন্দা। সেতুটি বিধ্বস্ত হয়ে পড়ায় এখন শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে। সেতুটি ভেঙ্গে একটি শিশু মারা যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে রয়েছে। ছোট্ট খেয়া নৌকায় নদী পারাপার হচ্ছে। ফলে সবসময় আমাদের ভয়ের মধ্যে থাকতে হয়, কোন ধরনের দুর্ঘটনা ঘটল কিনা। স্থানীয় কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ কেয়ার প্রভাইডার ফারিয়া সুলতানা জানান, ইউনিয়নে দুটি ক্লিনিক রয়েছে। একটি দশমিনা-পটুয়াখালী সড়কের ঠাকুরেরহাট এলাকায়, অপরটি জমির মৃধা বাজারে। এখানে এক সময় প্রচুর রোগী আসত। বিশেষ করে গর্ভবতী মা ও শিশুর সংখ্যা ছিল বেশি। সেতুটি ভেঙ্গে পড়ায় এখন রোগী খুব কম আসছে। খেয়া নৌকায় পার হয়ে গর্ভবতী মা ও শিশুদের আসা-যাওয়া চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বাজারের ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর মালকার বলেন, সেতুটি ভেঙ্গে পড়ায় ব্যবসা বাণিজ্যে ভাটা পড়েছে। বেতাগীসানকিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মহিবুল আলম বলেন, সেতুটি ভেঙ্গে পড়ায় আমার ইউনিয়ন এখন বিচ্ছিন্ন। পুরনো সেতু স্থাপন করা হলেও মজবুত ছিল না। নতুন সেতুর জন্য এলজিইডি কার্যালয়ে বার বার অনুরোধ করা হলেও কোন উদ্যোগ নেই। দশমিনা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাখাওয়াত হোসেন শওকত বলেন, ইউনিয়নবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল সংযোগ এ সেতুটি। উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে মানুষের চলাচলের জন্য পুরনো লোহার সেতুটি এখানে স্থানান্তর করা হয়েছিল। সেতুটি ইউনিয়নসহ গলাচিপা উপজেলার সঙ্গে সড়ক পথে সহজ যোগাযোগের মাধ্যম ছিল। সেতুটি বিধ্বস্ত হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভেঙ্গে পড়েছে। তবে নতুন সেতু নির্মাণের ব্যবস্থা হচ্ছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের পটুয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সালেহ মোঃ হানিফ জানান, বালু ভর্তি কার্গোর ধাক্কায় লোহার সেতুটি বিধ্বস্ত হয়। তবে এখন সেখানে লোহার সেতু নির্মাণ সঠিক হবে না। সেতু স্থানে নদী ভাঙ্গন, তাই স্থান পরিবর্তন করে আরসিসি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হবে।
×