ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এই কি মানব জন্ম!

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

এই কি মানব জন্ম!

কাজের সন্ধানে কিংবা জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে মানুষকে যেতে হয় দেশ থেকে দেশান্তরে, দূর থেকে দূরান্তে। কিন্তু এই যাত্রাপথ খুব মসৃণ নয়। আবার জোরপূর্বক নর-নারী ও শিশু-কিশোরদের ধরে নিয়ে অন্য দেশে পাচার এবং বেচাকেনার ঘটনা ঘটেই চলেছে। অবশ্য সেই আদিকাল থেকেই প্রচলিত মানবপাচার বা দাস ব্যবসা। আর একালে নানা কায়দায়, নানারূপে বিভিন্ন প্রকরণ ও ছদ্মাবরণে মানবপাচার হয়েই চলেছে এবং তা আন্তর্জাতিক পরিম-লে পরিব্যপ্ত। এমনটা হচ্ছে মূলত বেকার সমস্যা থেকেই। জীবিকার জন্য মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের বাইরে যেতে চায়। দুবেলা দুমুঠো খাবারের জন্য অসহায় মানুষ স্থান থেকে স্থানান্তর হয়ে যায়। এই যে মানুষ পাচার হয়ে যাচ্ছে অজানার পথে, অচেনা জগতে ভাগ্য তাদের পরিণত হচ্ছে দুর্ভাগ্যে। তা থেকে উদ্ধারের পথ বুঝি দূর অস্্ত্্। এ এক করুণ অবস্থা ও অবস্থান। মানবপাচার বাংলাদেশের অন্যতম শিরঃপীড়ায় পরিণত হয়েছে। জল-স্থল আকাশপথে মানবপাচার চলছে নানা পথ ও পদ্ধতিতে। মূলত জীবন ও জীবিকার কারণে, দেশে কর্মসংস্থানের অভাবে, দারিদ্যের পীড়নে, সচ্ছল জীবনযাপনের লক্ষ্যে মানুষ দেশান্তরী হচ্ছে। আবার এসব মানুষের বেশিরভাগই প্রতারিত হচ্ছে, হচ্ছে সর্বস্বান্ত। বাংলাদেশের দালালদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারীদের ভাল যোগসূত্র রয়েছে। মাফিয়াগোষ্ঠী এসব নিয়ন্ত্রণ করে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বেকার মানুষকে টার্গেট করে নীরবে পাচার চালায়। ভারত, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার বিভিন্ন অচেনা দেশে কাজের নামে ভ্রমণ ভিসায় পাচার হচ্ছে মানুষ। কাজের কথা বলে নারীদের দেশের বাইরে পাঠানো হলেও তাদের কোন কাজ দেয়া হয় না। দিনের পর দিন তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। আবার বিদেশে জিম্মি করে দেশে তাদের স্বজনদের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করা হয়। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে নিরীহ ও গরিব নারীদের বিদেশে ভাল চাকরি দেয়ার লোভ দেখিয়ে এনে পাচার করে দেয় তারা। কারও ঠাঁই হয় ভারত ও পাকিস্তান কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের পতিতালয়ে। কোথাও হয়ে যায় তারা যৌনদাসী। অনেক সময় কিডনি ক্রয়-বিক্রয় চক্রের কাছেও বিক্রি করে দেয়া হয় নারীদের। গৃহকর্মে নিযুক্ত নারীদের অবস্থা হয় খুবই শোচনীয়। অনেকে কাজ শেষে বেতন পায় না। জাল ভিসা, জাল পাসপোর্টের কারণ ছাড়াও অন্যান্য কারণে যেতে হয় জেলে। সেখানে বছরের পর বছর পচতে হয়। যেমন ভারতের বিভিন্ন কারাগারে সরকারী হিসাবমতে দুই হাজারের বেশি বন্দী রয়েছে। এদের অধিকাংশই অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে অভিযুক্ত। এরকম এশিয়া, আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর কারাগারে বহু বাংলাদেশী দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য স্থানীয় মিশন ও দূতাবাসগুলো সক্রিয় হয় না। আদম ব্যবসায়ী আর দালালের দৌরাত্ম্য সীমাহীন পর্যায়ে উপনীত দীর্ঘদিন ধরেই। তাদের হাতে নির্যাতিত-নিগৃহীত, নিঃস্ব হচ্ছে যারা তারা দেশে এসেও তাদের বিরুদ্ধে মুখ পর্যন্ত খুলতে সাহস পায় না। এখন তো রোহিঙ্গা শরণার্থীরা নতুন উপদ্রবে পরিণত হয়েছে। নির্যাতিত পরিচয় দিয়ে তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচার হচ্ছে। এসব শরণার্থী মানবেতর জীবন থেকে বাঁচার জন্য দেশান্তরী হতে গিয়ে মারাও যাচ্ছে। এই কি মানব জন্ম এই ব্রহ্মা-ে! মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ সালে পাস হলেও তা কিতাবেই রয়ে গেছে। আইনের বিধিমালা চূড়ান্ত না হওয়ায় পাচার বাড়ছেই। বিষয়গুলো অনুধাবন করা কর্তৃপক্ষের যেমন দায়, তেমনি জনগণকেও সচেতন হতে হবে পাচার থেকে মুক্তির লক্ষ্যে।
×