ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতারণার অভিযোগে ৪ প্রতিষ্ঠানকে বহিষ্কার করেছে রিহ্যাব

প্রকাশিত: ০৩:৩৬, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

প্রতারণার অভিযোগে ৪ প্রতিষ্ঠানকে বহিষ্কার করেছে রিহ্যাব

রহিম শেখ ॥ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও কিছু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কারণে ইমেজ সংকটে পড়েছে আবাসন খাত। সময়মতো বা ছয় মাস বর্ধিত সময়ের মধ্যেও সম্পূর্ণভাবে নির্মাণ, স্থাপনা, ফিটিংস ইত্যাদি সমাপ্ত করে ফ্ল্যাট হস্তান্তর না করার মাধ্যমে অনেক গ্রাহক প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। এছাড়া কাজ অসম্পূর্ণ রেখে কোম্পানি আত্মগোপনে যাওয়ার ফলে জমির মালিকরা পড়েন বিপাকে। জমির মালিককে চাঁদাবাজ সাজিয়ে মামলা মোকদ্দমার ঘটনা ঘটছে কখনও। অফিস পরিবর্তন এমন কি ফোন না ধরার কৌশলকে বেছে নেয় এক শ্রেণীর প্রতারক কোম্পানি। সম্প্রতি এমন ভয়ঙ্কর প্রতারণার অভিযোগে চার প্রতিষ্ঠানকে বহিষ্কার করেছে আবাসন মালিকদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং সোসাইটি অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)। বহিষ্কৃত কোম্পানিগুলো হলো ডাবল এ প্রপার্টিজ লিমিটেড, ম্যানট্রাস্ট প্রপার্টিজ লিমিটেড, সিম্বল হোল্ডিংস লিমিটেড ও জেনোভ্যালি মডেল টাউন লিমিটেড। জানা গেছে, আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ করেছেন প্লট-ফ্ল্যাট ও ভূমি মালিকরা। এরমধ্যে ডাবল এ প্রপার্টিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে ফ্ল্যাট হস্তান্তর না করার অভিযোগ বেশি। বিভিন্ন সময়ে জমির মালিকের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়ায় নিবন্ধনে সম্পন্ন করেননি কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল্লাহ আহসান। প্রতিষ্ঠান গত ৬ বছরে উত্তরা এলাকায় চারটি এ্যাপার্টমেন্ট তৈরির কাজ হাতে নিলেও এর একটিও চুক্তি অনুযায়ী গ্রাহকদের বুঝিয়ে দেয়নি। এমনকি জমির মালিকরাও তাদের কাছ থেকে ন্যায্য পাওনা বুঝে পায়নি। এ ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি রড, সিমেন্ট, বালু ও স্যানিটারি ফিটিংসহ বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রীর সরবরাহকারীদের বিপুল অঙ্কের অর্থ নিয়ে হাওয়া হয়ে গেছে। চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে ক্রেতাদের ফ্ল্যাট হস্তান্তর করতে না পারার অভিযোগ উঠেছিল ম্যানট্রাস্ট প্রপার্টিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধেও। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধাররাই এ প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সংস্থায় অভিযোগ করার পরও কোন প্রতিকার পাননি ভুক্তভোগী গ্রাহকরা। সিম্বল হোল্ডিংস লিমিটেড একটি ছয়তলা ভবন নির্মাণ করে তিন গ্রহীতাকে ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন করে দিয়েছেন। জেনোভ্যালি মডেল টাউন লিমিটেড নির্ধারিত সময় ফ্ল্যাট বুঝিয়ে না দিয়ে ফ্ল্যাট ক্রেতা ও জমির মালিকদের নানাভাবে হয়রানি করেছে। কাজ সম্পন্ন করে ফ্ল্যাট জমির মালিককে বুঝিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও আজ পর্যন্ত তা করেনি। ভবনটির লিফটি, জেনারেটর ও সাবস্টেশনসহ আনুষঙ্গিক প্রায় এক কোটি টাকার কাজ বাকি রয়েছে। রিহ্যাব সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ ফেব্রুয়ারি রিয়েল রিহ্যাব-এর পরিচালনা পর্ষদের অষ্টম সভায় এ চার সদস্য ডেভেলপার কোম্পানিকে রিহ্যাব থেকে বহিষ্কার করা হয়। রিহ্যাব জানিয়েছে, সদস্যপদ বহিষ্কারের ফলে এই চারটি কোম্পানি রিহ্যাব সদস্যপদ সংবলিত সিল, বিলবোর্ড ও বিজ্ঞাপন প্রচার-প্রদর্শন কিংবা ব্যবহার করতে পারবে না। একই সঙ্গে এর ফলে দেশে-বিদেশে রিহ্যাবের বিভিন্ন মেলায় অংশগ্রহণ, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, পরিদফতর ও সংস্থায় রিহ্যাব সদস্য পরিচয়ে সুযোগ সুবিধা আদায়, রিহ্যাবের সুনাম ও সুখ্যাতি ব্যবহারে প্লট-ফ্ল্যাট, বাণিজ্যিক স্পেস বিক্রয়, বিভিন্ন অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান থেকে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ, রিহ্যাব নির্বাচনে ভোটার হওয়া, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা, রিহ্যাবের বার্ষিক সাধারণ সভাসহ যেকোন সভায় অংশগ্রহণসহ সব ধরনের অধিকার ও সুযোগ রহিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে রিহ্যাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নুরন্নবী চৌধুরী (শাওন) এম.পি জনকণ্ঠকে বলেন, ডেভেলপার এসব কোম্পানির অধিকাংশের বিরুদ্ধে ক্রেতাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্লট বুঝিয়ে না দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। ক্রেতাদের বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে রিহ্যাবের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে বার বার সতর্ক করা হলেও তারা সঠিক পথে চলেনি। সংগঠনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ৪ কোম্পানিকে বহিষ্কার করা হয়েছে। রিহ্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট লিয়াকত আলী ভূইয়া জানান, নিয়ম-শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে চার সদস্যকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি বলেন, এটা প্রথম নয়, এর আগেও বেশ কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। ভবিষ্যতে কোন সদস্য প্রতিষ্ঠান প্লট-ফ্ল্যাট ক্রেতা ও ভূমি মালিকদের সঙ্গে প্রতারণা করলে এমন ব্যবস্থাই নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
×