ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিএসজেএ ও বিএসপিএর নিন্দা

মাহফুজা কিরণের দুঃসাহস!

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

মাহফুজা কিরণের দুঃসাহস!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আন্তর্জাতিক ও মহাদেশীয় পর্যায়ের আসরে ধারাবাহিক ব্যর্থতায় খাবি খাচ্ছে দেশের ফুটবল। বাঁচার চেষ্টা করছে খড়কুটো ধরে। এই ব্যর্থতায় ফুটবলের জনপ্রিয়তা এখন তলানিতে। ঢাকার ফুটবলে গ্যালারিতে দর্শক খুঁজতে হয় দুরবীণ দিয়ে। এক সময়কার ফুটবল পাগল মানুষও এখন ন্যূনতম খোঁজ-খবর রাখেন না ঘরোয়া আসরের, পেশদার লীগের। দেশের দুই ঐতিহ্যবাহী দল মোহামেডান-আবাহনীর ম্যাচে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের বাইরে মানুষ একজন আরেকজনকে জিজ্ঞেস করেন, কোন কোন দলের খেলা হচ্ছে। এরপর আর ঘরোয়া ফুটবলের করুণ দশা নিয়ে বেশি কিছু আলোচনার প্রয়োজন পড়ে না। আর এই ব্যর্থতার দায়ভার চাপানো হচ্ছে ক্রীড়া সাংবাদিকদের ওপর। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ইস্যুতে গণমাধ্যমের ঢালাওভাবে সমালোচনা করার পাশাপাশি ক্রীড়া সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অযাচিত অভিযোগ করা হয়। কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করায় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) মহিলা উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণকে বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ক্রীড়া সাংবাদিকরা। কিছুদিন আগে বাংলাদেশ মহিলা দলের অফিসিয়াল স্পন্সর স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে কিরণ অভিযোগ করেন গণমাধ্যমের নেতিবাচক লেখালেখির কারণে ‘স্পন্সর আসে না’ ফুটবলে। মিডিয়া প্রোপাগা-া নাকি এরজন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। এর আগে তার নির্দেশে বাফুফে ভবনে ঢুকতে দেয়া হয়নি প্রথম আলো ও দৈনিক জনকণ্ঠের ফটো সাংবাদিককে। যোগ্যতা থাক বা না থাক, বাফুফের একটি গুরুত্বপূর্র্ণ পদে থেকে কিরণের ঔদ্ধত্যপূর্ণ এই আচরণে তাকে বয়কট করা হয়েছে। একইসঙ্গে কিরণের উপস্থিতিতে সবধরনের সংবাদ সম্মেলন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গণমাধ্যমকর্মীদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্টস এ্যাসোসিয়েশন (বিএসজেএ) ও বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতি (বিএসপিএ) এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। একইসঙ্গে কিরণকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে। অন্যথায় দেশের সাংবাদিক সমাজ বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে। যদিও এটা মশা মারতে কামান দাগানোর মতোই। কিরণের মতো সংগঠককে সাইজ করতে আন্দোলনের ডাক একটু বেশি হয়ে গেল বলে মনে হয় । যা খুশির কারণ হয়ে গেল সম্ভবত কিরণের জন্য, খবরের শিরোনাম হয়ে উঠায়। জনশ্রুতি রয়েছে দেশের কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি রয়েছেন তারা নাকি হরতাল, আন্দোলন চলার সময় পুলিশকে ঘুষ দিয়ে থাকেন তাকে গ্রেফতার করার জন্য। এতে লাভ? কালার (বয়রা) ভাই অন্ধের কাছেও বিষয়টা অজানা নয়। সস্তা প্রচারের জন্যই ঘুষ দিয়ে এই স্বেচ্ছা কারাবরণ। কিরণ কি সেই পথই ধরলেন ক্রীড়া সাংবাদিকদের ‘ফিঙ্গারিং করে’? বাংলাদেশের পুরুষ ফুটবল খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে ভুটানের কাছে নির্লজ্জভাবে পরাজিত হওয়ায়। অথচ এ নিয়ে বস্তবসন্মত, নির্জলা সত্য কোন নিউজ করা যাবে না, সমালোচনা করা যাবে না। কিরণের ভাবখানা এমনই। ফলে ক্রীড়া সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ক্ষেপেছেন তিনি। আর প্রতিনিয়ত পাগলের প্রলাপতুল্য অশালীন মন্তব্য করে যাচ্ছেন, ঢালাওভাবে দোষ চাপাচ্ছেন সাংবাদিকদের ওপর। অনেকেরই অভিমত মাহফুজা আক্তার কিরণ নিজে কতোটা ‘ক্লিন’ এটা তিনি নিজেই ভাল জানেন। একজন বিতর্কিত নারী সংগঠক হিসেবে কিরণের জুড়ি নেইÑ বিষয়টা ‘ওপেন সিক্রেট’। কাজেই উদোর পি-ি বুদোর ঘাড়ে চাপিয়ে কিরণ নিজেকে ‘মিসেস ফ্রেস’ প্রমাণ করতে পারবেন বলে মনে হয় না। কিরণের বাস্তব বিবর্জিত বক্তব্যে প্রমাণ হচ্ছে, ক্রীড়া সাংবাদিকরা ফুটবলের শত্রু। পাড়া মহল্লা, মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে তারা ক্যানভাস করে বলছেন, ’ভাই কেউ ফুটবল খেলা দেখতে যাবেন না’। ক্রীড়াপ্রেমী শিল্পপতি, ব্যবসায়ীরা খেলাধুলায় স্পন্সর করে থাকেন শুধু মনের খোরাক থেকে নয়। কিছুটা প্রচার-পাবলিসিটিও তারা চান। এখন খেলার মাঠই যদি থাকে ফাঁকা-দর্শকশূন্য তাহলে স্পন্সরের পণ্যের প্রচার পাবে কিভাবে? সঙ্গত কারণে ফুটবলে এখন আর আগের মতো স্পন্সর নেই। আর এখানেই আতে ঘা লেগেছে কিরণের। যার দায়ভার তিনি প্রকাশ্যে চাপিয়ে দিলেন সাংবাদিকদের ওপর। অবশ্য হওয়ারই কথা। কারণ খেলা জমজমাট থাকলে নানা আয়োজন, অনুষ্ঠানের নামে পকেটটাও ভারি করে নিতে কার্পণ্য করেন না বাফুফের সংগঠক নামক কিছু ধান্ধাবাজ। কিরণ তো তাদেরই একজন। উল্লেখ্য, গত রবিবার অনুষ্ঠিত বাফুফের এক সংবাদ সম্মেলনে কিরণ গণমাধ্যমের বিপক্ষে নেতিবাচক ও আপত্তিকর মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘ভুটানের কাছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের হারের সংবাদ নেতিবাচকভাবে প্রকাশ করেছে মিডিয়া। আর এ কারণেই স্পন্সর পাচ্ছে না ফুটবল। মূলত এরপরই সাংবাদিকরা প্রতিবাদ করেন তার অবান্তর বক্তব্যের। যা এখন মহীরুহে রূপ নিয়েছে। কোথাকার কোন কিরণের কারণে ‘মাইনকার চিপায়’ ফেঁসে গেছে গোটা ফুটবল, তথা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। কিরণ নিঃশর্ত ক্ষমা না চাইলে আন্দোলোনের ডাক ফুটবলের জন্য লজ্জার (যদি থেকে থাকে)। বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন এখন কিভাবে তা সামলাবেন তার প্রিয় তথাকথিত সংগঠক কিরণ ও সাংবাদিকদের সেটাই এখন দেখার।
×