ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মলয় বিকাশ দেবনাথ

একজন মানবিক দস্যু জ্যাক স্প্যারো

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

একজন মানবিক দস্যু জ্যাক স্প্যারো

বিশ্বব্যাপী দর্শকের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে এ বছরই মুক্তি পাচ্ছে ‘পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান (ডেডম্যান টেল নো টেইলস)।’ জেফ নাথানসনের গল্প ও চিত্রনাট্যের ওপর মানবিক দস্যু বলে খ্যাত সেই জ্যাক স্প্যারোর পুনরাবির্ভাব ঘটাচ্ছেন চলচ্চিত্রের পরিচলাকদ্বয় জ্যাসিম রনিং এবং স্পেন সেনবার্গ। জ্যাক স্প্যারো। নিজ সময় থেকে এগিয়ে থাকা একজন দস্যু, যিনি নিজেকে স্বাধীন সত্তার প্রতীক বলে বিবেচনা করেন। জীবনে তার চলার পথ কিছুটা মন্দ হলেও তাতে আছে প্রজ্ঞার ছাপ। হয়ত কিছুটা পাগলাটে। কিন্তু সেই সঙ্গে পরিত্যক্ত প্রতিকূলতায় প্রবল আত্মশক্তির অধিকারী। কঠিন সেই পৃথিবীতে যে কোন কঠিন পরিস্থিতিতে টিকে থাকা এবং তার ইচ্ছা পূরণের সামর্থ্য তিনি রাখেন। ঘটনাক্রমে তিনি একদিন বলেছিলেন, ‘যখন সমঝোতার মাধ্যমে উদ্দেশ্য পূরণ সম্ভব তবে অহেতুক কেন যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া?’ এ কথা থেকে তাকে কাপুরুষ মনে হতে পারে আর সত্যি বলতে কি, তাকে সেভাবে বীর বলারও কোন উপায় নেই। তিনি দেখেন এবং লোক চরিত্র বিশ্লেষণ করে নিজের উদ্দেশ্য সাধনে তাদের সেভাবে ব্যবহার করেন। বলা যায়, চরম অবস্থায় উপনীত না হলে বা নেহায়ত শাস্তিপ্রাপ্ত না হলে তিনি কারও ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকেন। স্প্যারোর আছে সত্য যাচাই করার মন এবং পরিস্থিতি বাধ্য না করলে তিনি সহজ পথেই চলেন আর এও সত্য যে, তার আছে প্রবল আত্মসম্মানবোধ। যখন পরিস্থিতি প্রতিকূলে তখনও বন্ধু কিংবা সমষ্টির মঙ্গলের জন্য জ্যাক স্প্যারো মানবিক বোধ থেকে এগিয়ে আসেন। জ্যাক যে স্থানগুলোতে গেছেন অথবা যাদের সঙ্গে মিশেছেন তাদের সবারই কিছু না কিছু স্মারকচিহ্ন বহন করেন। তার অভ্যাস আছে চলার পথে অনেক কিছুই উঠিয়ে নেয়া যেমনÑ যে আংটিগুলো তিনি পরিধান করেন আর তার পোশাকের মধ্যে তার টুপিটি বোধকরি তার সবচেয়ে প্রিয়। আর একটি কম্পাস, যা তাকে তার পৃথিবীর যে কোন সঙ্কটকালীন পথ দেখায়। তিনি বহন করেন একটি রৌপ্যম-িত পিস্তল আর ছোট্ট কাটলাস। স্প্যারো একজন দক্ষ তলোয়ারবাজ। কিন্তু ছবির অন্য অসিবাজদের চেয়ে বেশি দক্ষ এ কথা বলার উপায় নেই। তার পরও যে জিতে যান। তার মূলে সম্ভবত তার কৌশল উদ্ভাবনী ক্ষমতা, সেই সঙ্গে অভিনব কায়দায় নারিকেলকেও কাজে লাগান অস্ত্র হিসেবে। তার চলনে এ্যাথলেটিক আছে, আছে তীক্ষè দৃষ্টি এবং নিপুণ নিশানা। রামের (মদের) প্রতি অন্য দস্যুদের মতো তার আছে আত্মিক ভালবাসা আর তিনি গর্বিত তার জাহাজ ব্ল্যাক পার্লের জন্য। যাকে বলা হয় উইকেড উইঞ্চ পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ানে ছিল ব্ল্যাক পার্লের প্রতি তার দাবি বহাল সম্পর্কিত। ছবিতে সেভাবে উঠে না এলেও জ্যাক স্প্যারোর রয়েছে মানুষের ইচ্ছার স্বাধীনতার প্রতি অগাধ সম্মান। এর কিছু প্রমাণ উঠে এসেছে পাইরেটস অব দ্য ক্যারাবিয়ানের মূল বইয়ে। মূল বইয়ের নামের সঙ্গে সংযুক্ত দ্বিতীয় অংশ দ্য প্রাইস অব ফ্রিডম। অর্থাৎ মুক্তির জন্য মূল্য, যা জ্যাক স্প্যারোর মূল্যবোধকে নির্দেশ করে। যেখানে লেখক এসি ক্রিসপিনের বর্ণনায় উঠে এসেছে ‘উইকেড উইঞ্চ’-এর ক্যাপটেন হিসেবে কৃতদাস চাম্বাকে মুক্ত করে দেয়ার ঘটনাটি। আরেক ঘটনায় আমরা দেখি জ্যাককে পরীক্ষার্থে ব্যাকেট তাকে কৃতদাসভর্তি কার্গোটি দিয়েছিলেন। জ্যাক তার আত্মার আহ্বানে আজীবন বন্দিত্বের সাজাবরণ নিশ্চিত জেনেও ঠিকই তাদের মুক্ত করে দিয়েছেন। আর এটি জ্যাক স্প্যারো দস্যু, যিনি বুকে বইয়ে বেড়ান মানুষের স্বাধীনতার প্রতি সম্মান এবং ঠিক এ কারণে দস্যুতা সত্ত্বেও লাখো-কোটি দর্শক তার সঙ্গে একাত্ম হয়ে যায়। পাইরেটস অব দ্য ক্যারাবিয়ান সিনেমায় তার চাতুরী, অপরাধ, মন্দ প্রবৃত্তি সবকিছু নিয়েই কেবল মানবিক বোধের কারণে ক্ষমার তরীতে উতরে যান দস্যু জ্যাক স্প্যারো। নায়ক থেকে হয়ে ওঠেন মহানায়ক আর জনি ডেপ তাকে ধারণ করে রঙিন পর্দায় নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলে হয়ে ওঠেন প্রকৃত জ্যাক স্প্যারোÑ মানবিক মুক্তির প্রতীক।
×