ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

শহীদ মিনারে বরেণ্য শিল্পীদের চিত্রকর্মে আর্ট ক্যাম্প

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

শহীদ মিনারে বরেণ্য শিল্পীদের চিত্রকর্মে আর্ট ক্যাম্প

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শিল্পীদের ভিন্ন ভিন্ন ক্যানভাসে ভেসে উঠছে ভিন্ন ভিন্ন চিত্রকর্ম। কিন্তু বিষয়বস্তু এক। কেউ আঁকছেন একটি শিশুর মস্তিষ্ক। তার চার পাশ দিয়ে কাকে ঠোকর দিচ্ছে। বোঝানোর চেষ্টা হচ্ছে শিশুদের মস্তিষ্কে বিদেশী ভাষার আগ্রাসন। কোন শিল্পী মা চিহ্ন এঁকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন, এই শব্দটির মর্মার্থ কত বড়। কেউ আঁকছেন শহীদ মিনারের পশ্চাতে লাল সূর্য। যেখানে কোন এক সময় ছিল নীলাকাশ। অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই ভাষা শহীদদের স্মৃতি পরতে পরতে বয়ে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন পরিবেশ এবং শেষে আবার ফিরে যাচ্ছে নীলাকাশে। প্রতিটি চিত্রকর্মে উঠে এসেছে ৫২’র ভাষা আন্দোলন, বাংলা ভাষার প্রতি মমত্ববোধ, বিশ্বের দরবারে বাংলা ভাষার মর্যাদার বিষয়। দেশের বরেণ্য ৩৫ জন শিল্পীর অংশগ্রহণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বুধবার অনুষ্ঠিত হয় দিনব্যাপী আর্ট ক্যাম্প। শিল্পী অধ্যাপক সমরজিৎ রায় চৌধুরী থেকে শুরু করে শিল্পী আব্দুল মান্নান, অলকেশ ঘোষ, বীরেন সোম, বিপাশা হায়াত, সমীরণ চৌধুরী, অভিজিৎ চৌধুরীসহ প্রথিতযশা শিল্পীদের তুলির ছোঁয়ায় আর্ট ক্যাম্প ভিন্ন এক মাত্রা পায়। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে চারুকলা বিভাগের ব্যবস্থাপনায় এদিন সকালে আর্ট ক্যাম্পের উদ্বোধন করেন শিল্পী অধ্যাপক সমরজিৎ রায় চৌধুরী ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে লিয়াকত আলী লাকী বলেন, ‘শিল্পের আলোয় ভাষা আন্দোলন’ চেতনাকে ধারণ করে আমাদের এই আয়োজন। এ আয়োজনে যেসব শল্পীরা অংশ নিচ্ছেন তারা দেশের প্রতি, মাতৃভাষার প্রতি সর্বোপরি দেশের মানুষের প্রতি এক দায়বদ্ধতা থেকে এ কাজ করছেন। যে শহীদ মিনারের সামনে আমরা দাঁড়িয়ে শিল্পের যে আয়োজন করেছি, এ শহীদ মিনার শিল্পের মানুষের জন্য এক অন্য রকম উৎস। শিল্পকলা একাডেমির পক্ষ থেকে এই প্রথম বারের মতো আমরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে আর্ট ক্যাম্পের আয়োজন করেছি। এখানে অংশ নিচ্ছেন দেশের বরেণ্য সব শিল্পীরা। আমাদের সংস্কৃতির চেতনা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে যাক। আমরা ভাষা আন্দোলনের চেতনায় স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলব এই প্রত্যাশা করি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালক চিত্রশিল্পী মনিরুজ্জামান। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চলছে একুশে অনুষ্ঠানমালা: ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’ মর্মবাণীতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চলছে একুশে অনুষ্ঠানমালা। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত এ অনুষ্ঠানমালার বুধবার ছিল অষ্ঠম দিন। এদিন বিকালে শিল্পী দিলবাহার খানের একক গানের মধ্যদিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। তিনি প্রথমে পরিবেশন করেন দেশের গান ‘কিসের এত ভাবনা মাগো’। তার পরের পরিবেশনায় ছিল ‘আমি বাংলা মায়ের ছেলে’। এরপর সাংস্কৃতিক সংগঠন বহ্নি শিখার শিল্পীদের সম্মেলক কণ্ঠে পরিবেশিত হয় পর পর তিনটি গান। এগুলো হচ্ছে ‘সোনা সোনা সোনা লোকে বলে সোনা’, ‘অপমানে তুমি জ্বলে উঠেছিলে সেদিন বর্ণমালা’ ও ‘বাংলার হিন্দু বাংলার বৌদ্ধ, বাংলার খ্রীস্টান বাংলার মুসলমান’। এছাড়া দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে আওয়ামী শিল্পীগোষ্ঠী, আনন্দন ও উজান। দলীয় আবৃত্তিতে ছিল ধ্বনি ও মুক্তবাক। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে নন্দন কলা কেন্দ্র ও কত্থক সম্প্রদায়। একক গান পরিবেশন করেন শিল্পী সালমা চৌধুরী, মহাদেব ঘোষ, সুরাইয়া পারভীন ও ফয়জুল বারী ইমু। একক আবৃত্তিকে ছিলেন ড. শাহাদাৎ হোসেন নিপু ও তামান্না তিথি। সবশেষে পথ নাটক পরিবেশন করে বাংলা নাট্যদল ও নাট্যদীপ। চারুকলার জয়নুল গ্যালারিতে ‘এ্যামিতি অব নাইন্টিন’ শীর্ষক প্রদর্শনী উদ্বোধন : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারি টুতে বুধবার থেকে শুরু হয়েছে ‘এ্যামিতি অব নাইন্টিন’ শীর্ষক যৌথ চিত্র প্রদর্শনী। নেপাল বাংলাদেশ সংস্কৃতি বিনিময়ে এ চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করে প্লেম আর্ট ওপেন স্টুডিও। চিত্র প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের ১৪জন ও নেপালের ৫জন শিল্পীর চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছে। এদিন সকালে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থপতি ও চিত্র সমালোচক প্রফেসর শামসুল ওয়ারেস। প্রদর্শনী চলবে ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এবং প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকবে। নৃত্যের ছন্দে শেষ হলো শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত বসন্ত উৎসব : নৃত্যের ছন্দে শেষ হলো বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ‘বসন্ত উৎসব’। শিল্পকলা একাডেমির নন্দন মঞ্চে বুধবার সন্ধ্যায় দেশের নৃত্যশিল্পীদের নূপুরের ঝংকারে ভিন্ন এক মাত্রা পায়। শুরুতে ‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে’ গানের সঙ্গে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে নটরাজের শিল্পীরা। পরে ‘বসন্ত বাতাসে’ গানের সঙ্গে নাচ পরিবেশন করে স্পন্দনের শিল্পীরা। দিব্য নৃত্য সংগঠনের শিল্পীদের পরিবেশনায় ছিল ‘গ্রাম ছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ’ গানের সঙ্গে নৃত্য।
×