ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশে এসে মাকে খুঁজে না পেয়ে রানী আত্মহত্যা করেন

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

বাংলাদেশে এসে মাকে খুঁজে না পেয়ে রানী আত্মহত্যা করেন

রাজন ভট্টাচার্য ॥ মার সঙ্গে কোনদিন দেখা হয়নি। কিন্তু তিনি বিশ্বাস করতেন মাকে দেখেছেন। ভাল আছেন মা। তার সঙ্গে কথা হয়েছে। কথা হয় প্রতিদিন। মা তাকে ডাক দেন। স্নেহ করেন। জন্মদাত্রী মায়ের জন্য শোকও পালন করেছেন তিনি। জীবন ও কল্পনার রাজ্যজুড়ে মায়ের অসংখ্য স্মৃতি। জন্মের ১৫ বছর বয়সে তিনি জানতে পারেন যাদের আদর স্নেহ, মায়া, মমতা আর ভালবাসায় বড় হয়েছেন; তাদের সঙ্গে তার কোন রক্তের সম্পর্ক নেই। পরিবারের অন্য সদস্যদের কেউই আপনজন নয়। পরের ঘরই আপন হয়েছে তার। একথা শোনার পর যে কারও চোখ কপালে ওঠার কথা। এর পরের তথ্য আরও কষ্টের। বেদনার। জানা গেল, তিনি যে শহরে বড় হয়েছেন এটি তার দেশ নয়। জন্ম বাংলাদেশে। পালিত হয়েছেন কানাডায়। জীবনে ফেলে আসা অতীতের ইতিহাস শোনার পর যুদ্ধ শিশু রানী আর স্বাভাবিক থাকতে পারেননি। পরিবারের কাছ থেকে জানতে পারেন, তার পিতৃপরিচয় নেই। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বর্বর পাকিস্তানী ও তাদের দেশীয় দোসরদের যৌন লালসার শিকার তার জন্মদাত্রী মা। জন্মের পর পরই মা তাকে মাদার তেরেসা শিশু ভবনে রেখে চলে গেছেন! একথা শোনার পর মায়ের খোঁজে বাংলাদেশে আসেন রানী। চেষ্টা করেন মাকে পাবার। সম্ভব হয়নি। কিন্তু নিজের চোখে দেখে গেছেন জন্মস্থান ও প্রমাণপত্র। তার জন্মের করুণ ইতিহাস মনের মধ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলতে থাকে। মানসিক রোগে আক্রান্ত হন রানী। ধ্বংসাত্মক আচরণ করতে থাকেন। বড় বড় ডাক্তাররাও তার রোগের প্রকৃত কারণ বের করতে পারেননি। ফেরাতে পারেননি স্বাভাবিক জীবনে। অতঃপর ২৭ বছরে বয়সে আত্মহত্যা করেন রানী! এভাবেই যুদ্ধশিশু রানীর বেঁচে থাকার ইতিহাসের মর্মান্তিক সমাপ্তি ঘটে। কিন্তু কানাডায় দত্তক বাবা-মার বুকে শূন্যতা আর হাহাকার লেগেই আছে। এখনও সন্তান হারানোর শোকের পাথর বয়ে বেড়াচ্ছেন এই দম্পতি। মেয়ের স্মৃতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বাড়ির সবখানেই। রক্তের সম্পর্ক না থাক। নিজের মেয়ে হিসেবেই বড় হয়েছিল রানী। তাকে কি করে ভুলবেন ড. রবিন ও বারবারা মরাল! রানী থেকে জয় মরাল ॥ ১৯৭২ সালের ৩০ মার্চ মাদার তেরেসার শিশু সদনে রানীর জন্ম। জন্মের সময় পুষ্টিহীন এই শিশুটির ওজন হয় মাত্র এক কেজি। শিশু ভবনের রেজিস্টার বইতে তার নাম ‘রানী’ লেখা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানে শিশুদের সেবায় যারা নিয়োজিত ছিলেন তারাই এই নবজাতকের নাম রাখেন। জন্মের পর পরই ‘মা’ শিশু ভবন কর্তৃপক্ষের কাছে তাকে শপে দিয়ে চলে যান। প্রায় চারমাস রানী এখানেই ছিলেন। ১৯৭২ সালের ২০ জুলাই তাকে কানাডা নিয়ে আসা হয়। তার দত্তকগ্রাহী বাবা-মা মেয়ের নাম বদলে রাখেন ‘রানী জয় মরাল’। পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, রানীর মধ্য নাম জয়, দ্বৈত অর্থ বহন করে। ইংরেজীতে জয় অর্থ আনন্দ। বাংলা অর্থ ‘বিজয়’। দত্তক বাবা-মা বলেন, তাদের কাছে রানীর সুদূর কানাডাতে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ থেকে আসাটা এক রকম বিজয় ছিল বটে। প্রকৃত অর্থে তাদের পরিবারে মেয়ে হিসেবে শিশুটির আগমন ছিল; তাদের জন্য বিশ্বের তাবৎ আনন্দ নিয়ে আসার মতো একটি ঘটনা। মরাল পরিবারে রানীর মধ্য নাম প্রতীকী ও সত্যিকারের অর্থে জয়ই ছিল, যদিও সে জীবনযুদ্ধে জয়ী হতে পারেননি। কানাডায় বেড়ে ওঠা ॥ কানাডার সাসকাচিওয়ান প্রদেশের সাসকাট্যুন শহরে রানীর বেড়ে ওঠা। ছোটবেলার কথা বলতে গিয়ে ‘৭১-এর যুদ্ধশিশু অবিদিত ইতিহাস’ গ্রন্থের লেখক মুস্তফা চৌধুরীকে দত্তক বাবা-মা জানান, রানী ছোটবেলা থেকেই সঙ্গীতে বেশ আগ্রহী ছিল। তিন বছর বয়সে সুজুকি বেহালার ক্লাসে যেতে শুরু করেন তিনি। ১৯৭৬ সালে সাসকাট্যুন ফরাসী মাধ্যমের স্কুলে যাওয়া শুরু হয়। সেখানে তিনি মিশ্র সংস্কৃতি ও মিশ্র বর্ণের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে মেশেন। যা তাকে একসময় কানাডীয় বহুমুখী সংস্কৃতির মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। ছোটবেলা থেকেই রানী দেখতে খুবই সুন্দর ছিলেন। বড় ভাই ‘জনের’ সঙ্গে তার খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। ওরা দু’জনে খেলত আর ঝগড়া করত’। ১৯৮১ সালে মরালরা আবার ফ্রান্সে চলে যান। সেখানে পরিবার নিয়ে আরও এক বছর কাটান রানীর বাবা-মা। ১৯৮৬ সালে বিশপ জ্যামস ম্যাহোনি হাই স্কুলে তাকে ভর্তি করা হয়। তখন রানীর বয়স ১৪। সে তখন সৃজনশীল চারুকলা ও নানা বিষয়ে অধ্যয়ন করে। হাই স্কুলের বছরগুলোতে রানী সাসকাট্যুন ইয়ুথ অর্কেস্ট্রায় বেহালা বাজাত। প্রশিক্ষণ নিয়ে বাঁশি বাজাতেও শেখেন তিনি। পরবর্তীতে তিনি খুব ভাল বাঁশি বাজাতেন বলেও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। অল্প বয়স থেকেই গান লেখায় দখল আসে তার। এজন্য হাইস্কুলে ছন্দের মাস্টার আখ্যা পেয়েছিলেন তিনি। এককথায় বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। মা বারবারা জানান, যারা রানীর লেখা পড়েছেন, তাদের মতে অল্প বয়সে লেখা এবং গানে রানীর অন্তরতম চিন্তা ভাবনার ইঙ্গিত ছিল। ১৯৮০ দশকে কানাডীয় বহু সাংস্কৃতিক আন্দোলন তাকে বেশ আলোড়িত করে। মায়ের খোঁজে বাংলাদেশে ॥ ১৫ বছর বয়সে রানীকে একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়। তিনি খোলাখুলি দত্তক সন্তানের পরিচিতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন। এর প্রভাবে ১৬ বছর বয়সে রানী অল্প সময়ের জন্য উদাসীন হয়ে যান। তাই শুধু নয়, রানী প্রচ-ভাবে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে তার চারদিকের লোকজনের কাছ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক মুস্তফা চৌধুরীকে রানীর মা আরও জানান, এক সময় আমরা তাকে নিয়ে বাংলাদেশে যাই। উদ্দেশ্য ছিল রানীর প্রকৃত মায়ের সন্ধান পাওয়া। আমরা তখন বুঝতে পারিনি রানীর জীবন তখন কি অসহনীয় অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল। ভয়, ভীতি, নীরবতা এবং দুশ্চিন্তা তাকে এত দমিত করে রাখে যে, সে পুরোপুরি নিরুৎসাহিত হয়ে যায়। রানী চেয়েছিলেন বাংলাদেশে পৌঁছামাত্রই গর্ভধারিণী মায়ের সম্পর্কে জানতে পারবেন। হয়তবা দেখতেও পারবেন, তা যতই অসম্ভব হোক না কেন। মরালরা রানীর উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করছিলেন। যখন রানী তার বাড়িতে অর্থাৎ শিশু ভবনে গিয়েছিলেন। শিশু ভবনে গিয়ে যে মুহূর্তে রানী তার নিজের নামটি রেজিস্টার বইতে দেখেন, তখন তার ভাবাবেগ যেন এক নতুন উচ্চতায় ওঠে। নিজের নাম, জন্মের তারিখ এবং জন্মস্থানের নাম নিজের চোখে দেখার অভিজ্ঞতা তার মনের ভেতরে এক ধরনের আলোড়ন সৃষ্টি করে। সেই অনুভূতির সূত্র ধরেই তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে যেন যোগাযোগ স্থাপন করে নেন। এটি ছিল তার জীবনের এক নতুন অভিজ্ঞাতার যাত্রা। রানী শিশু ভবনের কর্মকর্তাদের কাছে জানতে পারেন কোন পরিস্থিতিতে তার জন্ম হয়েছিল। তাকে কখন তার মা পরিত্যাগ করেছিলেন। তাদের কিভাবে কানাডা পাঠানো হয়েছিল। যেখানে তার কানাডীয় বাবা-মা দত্তক নিয়েছিলেন। কানাডায় ফেরা ॥ বাংলাদেশ সফর করে রানী ফিরে যান কানাডায়। দুই বিশ্বের সেরা অভিজ্ঞতা তার ঝুলিতে নিয়ে পুরো ব্যস্ত ছিল রানী। কানাডার বিশ্ব তিনি যেখানে বাস করেন, সেখানে তার বিদ্যার্জন, রুটি রুজি এবং বাংলাদেশের বিশ্ব যেখানে তিনি জন্মের পর পরিত্যক্ত। তবে জীবনের অতীত নিয়ে রানী কখনই বিব্রত হননি। তার জন্মের পর যে কাহিনী সুতোছেঁড়া অবস্থায় মনের অজান্তে ভেসে বেড়াত সে সুতোকে রানী তার কানাডীয় বাবা-মায়ের সঙ্গে যুক্ত করে নিয়েছিলেন সহজেই। তবে মনের আবেগ আর ক্রোধ ছিল যথেষ্ট। কবিতা লিখতেন রানী। তার অগণিত কবিতার মধ্যে একটি কবিতায় মনের অসহনীয় অবস্থার প্রতিফলন ঘটেছে। ‘নদীর সন্তান’ শিরোনামে লেখা মর্মস্পর্শী কবিতাটিতে রানী দু’দেশের প্রতি তার সে সময়ের অনুভূতি ফুটিয়ে তোলেন। ‘তারাই তোমার হয়ে রেখেছে আমাকে নিরাপদ’ ॥ নিজের লেখা কবিতায় রানী লেখেন, ‘ত্যাগ করেছিলে তুমি আমাকে যখন আমি শিশু, কেন তা জানি না আমি, কখনো জানব না, কিন্তু তুমি সারাক্ষণ থাকবে মা আমার ভাবনায়, ভালোবাসবই জেনো, যেমন এখন ভালোবাসি। ছিলাম বিষণœ সদা, কেঁদেছি তোমার জন্য কত, জর্জর ব্যথায় ভরা কত যে রাত্রিতে, তোমাকে ছোবার আগে, জড়িয়ে ধরার আগে, মনে হতো এই ব্যথা কখনই যাবার নয় আর; নদীর সন্তান বলে শস্য-শ্যামলিম, এদেশকে সব জানে, জল চারিদিকে আর সরলতা সকলের মুখে : এইতো আমার দেখা সবচেয়ে রূপবতী দেশ। অনাথ আশ্রমে গিয়ে শিশুদের কোলে তুলে নিতে, মনে হলো তারা চায় আলিঙ্গন, নিবিড় আশ্রয়, সকল অনিষ্ট থেকে নিরাপত্তার বরাভয়’। কবিতায় তিনি আরও লেখেন, ‘যেখানে নথিতে দেখি রয়েছে আমার নাম লেখা, আমার সকল আদৌ জননীর সঙ্গে সাক্ষাত, কবোষ্ণ আশ্রয় যাতে সুরক্ষিত ছিল, তোমার জঠর থেকে লাভ করা আমার জীবন। ...মায়ের প্রতি ভালবাসা জানাতে গিয়ে তিনি কবিতায় লেখেন, ‘তোমায় বাসবো ভালো, রাখবো স্মরণে, থাকবে না ব্যথাবোধ, জানি সব জানি, দেখেছি আমার নাম, আছে আজ আমারও স্বজন, তারাই তোমার হয়ে আমাকে রেখেছে নিরাপদ। জানি একদিন শেষে বদলে গেছে আমার জীবন; পেয়েছি প্রশান্তি মনে, আনন্দ অপার, যেদিন দেখেছি লাল সূর্যের উদয়, আদিগন্ত বাংলার সবুজের ছড়ায় ছড়ায়’। কৃতজ্ঞতার সাথে রাণী একসময় জানিয়েছিলেন, কানাডীয় বাবা-মা তাকে বুকে তুলে নিয়ে লালন করেছেন। নিরাপদে রেখেছেন। তিনি বলেন, আমার জন্মদেশটি পুরোটাই যেন নদীরই শিশু। কানাডাতে বাংলাদেশের মতোই নিজেকে নদীর জাতিকা হিসেবে শনাক্ত করেছেন। শিক্ষাজীবন ॥ ১৯৯০ সালে গ্রেড-১২ বাইলিংগুয়াল ডিপ্লোমা নিয়ে রানী গ্রাজুযেট হন। তারপর তিনি অন্টেরিও’র কিংস্টনস কাইনস বিশ্ববিদ্যালয়ে নার্সিং পড়তে যান। ১৯৯২ সালে দ্বিতীয় বছরে পড়াশোনার সময় মানসিক দুর্বলতায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে বাবা-মায়ের কাছে ফিরে আসেন রানী। ১৯৯২ সালে তার শিক্ষা জীবনের সমাপ্তি ঘটে। একের পর এক অভিজ্ঞ মানসিক ডাক্তারের কাছে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। ডাক্তাররা তার সুনির্দিষ্ট কোন রোগ ধরতে পারেননি। মনোবল ভেঙ্গে যাওয়ায় তার বিষণœœতা আরও বেড়ে যায়। তখন রানী সবার সঙ্গে স্বেচ্ছায় কথা বলা বন্ধ করে দেন। রানীর বাবা রবিন বলেন, মেয়েটির যা অবস্থা ছিল তাতে ওর পশ্চাতপটের কারণে এ রকম নাও হয়ে থাকতে পারে। কারণ বিষাদগ্রস্থতা একটা সাধারণ অসুখ। মা বারবারা জানান, রানীর অসুস্থতা তার আবেগী প্রয়োজন ও হতাশার কারণে জটিল হয়েছিল। এসবের বিপরীতে ছিল রানীর উৎসের সন্ধান। তার জন্ম ও পরিত্যাগকে ঘিরে অস্বাভাবিক ঘটনাবলী। দু’জনেই বিশ্বাস করেন যে, রানীর যে বিষণœœতার রূপে পুনরাভিযান ঘটেছিল, তার পেছনে ছিল রানীর জন্মদাত্রী মায়ের বিষয়ে একাগ্র ভাবনা ও ধ্যান ধারনা। তিনি মনে করতেন জন্মদাত্রী মাকে দেখতে পেয়েছিলেন বাংলাদেশে। মূলত ঢাকা সফরের পর থেকেই রানী বিষণœœতায় আক্রান্ত হতে থাকেন। অনেক সময় তিনি চুপ করে বসে শুধু কাঁদতেন। পরিস্থিতি যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তখন রানীকে ভর্তি করা হতো হাসপাতালে। কিন্তু পালিয়ে আসতেন তিনি। অনেক সময় ধ্বংসাত্মক আচরণ করতেন। ২৭ বছর বয়সে ১৯৯৯ সালের সাত জুন বিষণœœতায় আক্রান্ত হয়ে নিজের হাতেই জীবনের অবসান ঘটান। মৃত্যুর আগেও সে আরেকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী এরিক এরিকসন তার বই ‘আইডেন্টিটি : ইয়ুথ এন্ড ক্রাইসিস’-এ বলেছেন, পোষ্য সন্তানের পরিচিতির বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। কেননা মনোবিজ্ঞানের পশ্চাদপট এটি ব্যক্তির বংশবৃত্তান্ত সম্পর্কে যে ধারণা দেয় তারই সঙ্গে সেটা বর্তমান ও অতীত জীবন সূত্রে গাঁথা। এরিকসনের তথ্য অনুযায়ী ব্যক্তির অতীতের গুরুত্বপুর্ণ পর্যায় সম্পর্কে অজ্ঞতা বা জ্ঞান না থাকা মানসিক ধারাবাহিকতা ক্ষুণœœ করে; যার ফলে ব্যক্তির পক্ষে বিশেষ করে তার বয়ঃসন্ধিকালে প্রাপ্তবয়স্ক হবার প্রক্রিয়ায় বাধা পড়ে। যদিও রানীর সঙ্গে কানাডায় একসাথে আর চার শিশু এসেছিল। তাদের কারও ক্ষেত্রে এরকম মানসিক সমস্যা হয়নি। রানীর বাবা ছিলেন ড. রবিন ও মা বারবারা মরাল। তাদের বিবাহিত জীবনের আট বছর পর ১৯৬৯ সালে এক সন্তানের জন্ম হয়। বাবা ছিলেন বায়োলজির অধ্যাপক। মা গৃহিনী। দত্তকের মাধ্যমে আরেকটি সন্তান নেবেন তারা এমন চিন্তা থেকেই বাংলাদেশ থেকে রানীকে পরিবারের সদস্য করে নেন।
×