ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ জার্মানি যাচ্ছেন

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ জার্মানি যাচ্ছেন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ক্লাইমেট এ্যান্ড হিউম্যান সিকিউরিটি’ সম্মেলনে যোগ দিতে আজ জার্মানি যাচ্ছেন। জার্মানির মিউনিখে অনুষ্ঠেয় নিরাপত্তা সম্মেলন ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঙ্গেলা মেরকেলের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুটি তুলে ধরবেন। প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা ছাড়ার আগে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী সফরের বিস্তারিত তুলে ধরেন। মন্ত্রী জানান এবারই প্রথম বাংলাদেশকে এই সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গারা কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করছে। আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোও রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে সমর্থন করছে। মালয়েশিয়া সরকার বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিতে রোহিঙ্গাদের জন্য প্রতীকী ত্রাণ পাঠিয়েছে। মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বন্দরে এসে ওই ত্রাণ পৌঁছানোর পর রোহিঙ্গাদের মধ্যে তা বিতরণ শুরু হয়েছে। রোহিঙ্গাদের যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশ আশ্রয় দেয়ায় সরকারের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়েছে মালয়েশিয়া সরকারের বিশেষ দূত। তারাও রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের পাশে থাকার আগ্রহ ব্যক্ত করেছে। সম্প্রতি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গারা আবারও বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা মিয়ানমারের, তাই তাদেরই এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। ঠেঙ্গারচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরিত করার বিষয়ে তিনি বলেন, সেখানে তাদের নিয়ে যাওয়ার আগে বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের সুবিধাসহ অবকাঠামো তৈরি করতে হবে। এসব কাজ শীঘ্র শুরু হবে। রোহিঙ্গাদের সেখানে নিয়ে যেতে নৌপরিবহন জেটি স্থাপন করা হবে, খাদ্যের সংস্থান করা হবে। এ জন্য উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলো সহায়তা করতে চায়। একই লক্ষ্যে এদেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের আমি নিজে ঠেঙ্গারচর পরিদর্শনে নিয়ে যাব। তিনি বলেন, বিদেশী মিডিয়ায় ঠেঙ্গারচর নিয়ে নেতিবাচক প্রতিবেদনের প্রকাশিত ছবিগুলো স্ববিরোধী। যেখানে প্রথমে দেখানো হয়েছে শুধু ডুবন্ত দ্বীপ, তারপর দেখানো হয়েছে মহিষ দৌড়ে বেড়াচ্ছে, আবার আরও একটি ছবিতে দেখা গেল ঘন বনাঞ্চল। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১৯৬৩ সালে মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সের যাত্রা শুরু হয়। স্নায়ুযুদ্ধের পটভূমিতে তৈরি হলেও পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে এই সম্মেলন বিশ্ব নিরাপত্তা ও বিভিন্ন পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিত নিয়ে আলোচনা হয়। সময়ের সঙ্গে এটি বর্তমান বিশ্ব নিরাপত্তা আলোচনায় সেরা ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্ক কনফারেন্স’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। পররাষ্ট্র্রমন্ত্রী বলেন, এবারই প্রথম বাংলাদেশ এ সম্মেলনে আমন্ত্রণ পেয়েছে। আগামী ১৭-১৯ ফেব্রুয়ারি মিউনিখে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে ১৮ ফেব্রুয়ারি ‘ক্লাইমেট এ্যান্ড হিউম্যান সিকিউরিটি’ শীর্ষক একটি অধিবেশনে আলোচনায় অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। এই অধিবেশনে ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট ও নরওয়ের প্রধানমন্ত্রীর অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী এ সম্মেলনের জলবায়ু নিরাপত্তা-সংক্রান্ত বিষয়সহ বিভিন্ন আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন। জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত আলোচনায় বিশ্বের দেশগুলোর প্রাপ্তি, অপ্রাপ্তি, সম্মেলনের দাতা দেশগুলোর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন অঙ্গীকারসহ বিশ্ব নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে খাদ্য, পানি, পরিবেশ ও উদ্বাস্তু-সংক্রান্ত বিষয় স্থান পাবে। এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে নিরাপত্তা-সংক্রান্ত বিষয়গুলোর সংশ্লিষ্টতা, পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জলবায়ু আলোচনার আগামী দিনের রূপরেখা ও নেতৃত্ব, জলবায়ু-সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সামরিক বাহিনীর সম্পৃক্তকরণসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা হবে। মন্ত্রী জানান আমরা আস্থার সঙ্গে বলতে পারি এ সম্মেলনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বিশ্ব আলোচনায় আমাদের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে এবং আমাদের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে। একই দিন সম্মেলনের ফাঁকে জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঙ্গেলা মেরকেলের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জলবায়ু পরিবর্তন ও অভিবাসনসহ দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে। বৈঠক শেষে যৌথ ঘোষণাপত্র সই হওয়ার কথা রয়েছে। মিউনিখ নিরাপত্তাবিষয়ক শীর্ষ সম্মেলনে শতাধিক দেশের প্রতিনিধি যোগ দেবেন। পোল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে, তুরস্কসহ ২০টি দেশের রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান নিরাপত্তা সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়াও জাতিসংঘের মহাসচিব, ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট, ন্যাটোর মহাসচিব, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট, আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট, নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী, হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী, ইরাকের প্রধানমন্ত্রীসহ বিশ্ব নেতারা অংশ নেবেন। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, চলতি মাসে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এস জয়শঙ্কর ঢাকা আসছেন না। তবে আগামী একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বাংলাদেশে আসছেন নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বোরগি ব্রেন্ডা। মাহমুদ আলী গত সেপ্টেম্বরে নরওয়ে সফর করেন বলে জানান তিনি। ওই সফরে নরওয়ের পররাষ্ট্র্রমন্ত্রী বোরগি ব্রেন্ডাকে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানালে তিনি চলতি ফেব্রুয়ারিতে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এরপর বোরগি ব্রেন্ডাকে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানালে তিনি এতে সম্মতি দেন। দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন ইস্যুতে তার সঙ্গে আলাপ হবে। সামুদ্রিক সম্পদ আহরণে নরওয়ের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ কাজে লাগাতে চায় বলে জানান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
×