ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নয়া ইসিকে প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন, সহায়তার প্রতিশ্রুতি

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

নয়া ইসিকে প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন, সহায়তার প্রতিশ্রুতি

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা পরবর্তীতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে উপযুক্ত আইন প্রণয়ন এবং জনগণের ভোটাধিকার সুনিশ্চিতের স্বার্থে আগামী সংসদ নির্বাচনে ‘ই-ভোটিং’র প্রবর্তনের কথা বলেছেন। নবগঠিত নির্বাচন কমিশনকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নবনিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার শপথ গ্রহণ করেছেন। তাদের সকলকে আমরা অভিনন্দন জানাই। পুনর্গঠিত নির্বাচন কমিশনের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নির্বাচন কমিশনার হিসেবে একজন নারীকে নিয়োগ প্রদান করায় আমরা আনন্দিত ও গর্বিত। আমাদের পবিত্র সংবিধানের প্রতি অনুগত থেকে নতুন নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ ও স্বাধীনভাবে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে দেশবাসীর আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হবে বলে বিশ্বাস করি। সরকার নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহায়তা প্রদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির বেগম নুর-ই-হাসনা লিলি চৌধুরীর প্রশ্নের লিখিত উত্তরে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আমাদের এই কষ্টসাধ্য কিন্তু অঙ্গীকারদীপ্ত স্বপ্নযাত্রায় আমরা সফলভাবে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার সকল অঙ্গ ও প্রতিষ্ঠানকে সীমাহীন উচ্চতায় শক্তিশালী ও সক্ষম করে গড়ে তুলতে চাই। তারই ধারাবাহিকতায় জনমানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিতকল্পে আমরা নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল সহায়তা প্রদান করে আসছি এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত রাখতে বদ্ধপরিকর। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই, পরবর্তীতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের লক্ষ্যে একটি উপযুক্ত আইন প্রণয়ন করা হোক। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের নির্দেশনার আলোকে এখন থেকেই সে উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। আর সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য বর্তমানে বিরাজমান সকল বিধিবিধানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে জনমানুষের ভোটাধিকার সুনিশ্চিত করার স্বার্থে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘ই-ভোটিং’র প্রবর্তন করার পকিকল্পনাও বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে। শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধানের আলোকে যে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক প্রক্রিয়ায় এখন স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করা হচ্ছে, সে অবস্থাটি একদিনে তৈরি হয়নি। এর একটি সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। দীর্ঘদিন রাজপথে থেকে আমাদের আন্দোলন করতে হয়েছে। আর এ আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম ও সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতৃত্ব প্রদানকারী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। তিনি বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে দেশের উন্নয়ন- অগ্রযাত্রার প্রতি বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের অবিচল আস্থা ও অকুণ্ঠ সমর্থন রয়েছে। কোন অপশক্তিই বাংলাদেশের এ গণতান্ত্রিক ধারার উন্নয়ন অভিযাত্রার পথকে রুদ্ধ করতে পারবে না। মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে আপামার জনসাধারণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা আমাদের পবিত্র সংবিধান, গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মর্যাদাকে সমুন্নত রেখেছি, ভবিষ্যতেও রাখব ইনশাল্লাহ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের সংস্কার এবং গৃহীত নির্বাচন ব্যবস্থার উন্নয়নে যে সকল গুণগত পরিবর্তন এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গৃৃহীত হয়েছে তার প্রায় সবই সূচিত ও সম্পন্ন হয়েছে আওয়ামী লীগ কর্তৃক দেশ পরিচালনার সময়েই। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সাংবিধানিক পদের অধিকারীদের সমন্বয়ে সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দেয়ার যে প্রথা চালু হয়েছে তা আমাদের গণতন্ত্রকে মজবুত ও সমুন্নত করেছে। নির্বাচনে জনমানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিতকল্পে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন¯œাত উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা বিনির্মাণের বিরামহীন পথপরিক্রমায় আমরা সকলে শামিল হয়েছি। আমাদের এই কষ্টসাধ্য কিন্তু অঙ্গীকারদীপ্ত স্বপ্নযাত্রায় আমরা সফলভাবে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার সকল অঙ্গ ও প্রতিষ্ঠানকে সীমাহীন উচ্চতায় শক্তিশালী ও সক্ষম করে গড়ে তুলতে চাই। সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য নুরজাহান বেগমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, বর্তমান সরকরের সুদৃঢ় পররাষ্ট্রনীতির কারণে দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখনই স্বাধীনতাবিরোধী পরাজিত শক্তি ও তাদের দোসররা দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে উঠেপড়ে লেগেছে। ইতোপূর্বে সরকার হটাতে তারা আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও এবং আগুন সন্ত্রাস চালিয়ে শতাধিক নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। সরকার পতন ইস্যুতে জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়ে তারা বেশ কিছুদিন যাবত বিদেশী সহায়তায় ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখছে। তারা বিদেশে প্রতিনিধি পাঠিয়ে তাদের সমর্থন লাভের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এটা স্বাধীন ও সার্বভৌম জাতি হিসেবে আমাদের জন্য মোটেও সম্মানজনক নয়। দিদারুল আলমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি ও রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে গত সাত বছরে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছে। এ কারণে রিজার্ভ অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়েছে গেছে। রেমিটেন্স প্রবাহও অনেক বেড়েছে। এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা জানান, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেসরকারী খাতের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। অর্থনৈতিক উন্নয়নের নিমিত্ত বেসরকারী খাতের বিনিয়োগ বাড়ানোই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বিনিয়োগের মহাপরিল্পনা গ্রহণ করেছে।
×