ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অনিয়মের অভিযোগে বিশ্বব্যাংকের ১৬ কর্মকর্তার গাড়ি তলব

প্রকাশিত: ০৫:০২, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

অনিয়মের অভিযোগে বিশ্বব্যাংকের ১৬ কর্মকর্তার গাড়ি তলব

আজাদ সুলায়মান ॥ অনিয়মের অভিযোগে বিশ্বব্যাংকের ১৬ কর্মকর্তার গাড়ি তলব করা হয়েছে। শুল্কমুক্ত সুবিধার অপব্যবহারের মাধ্যমে দুর্নীতির অভিযোগ এনে এসব গাড়ি তলবের নোটিস দিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ। নোটিসে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের ১৬ গাড়ি পাসবুক তলব করেছে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ। এজন্য বুধবার এক নোটিসের সাতদিনের সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। এ সম্পর্কে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান জানিয়েছেন, ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর বরাবর পাঠানো শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের নোটিসে ১৬ গাড়ির নম্বর ও ব্র্যান্ডসহ বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। আগামী সাতদিনের মধ্যে এগুলো কোথায় ও কী অবস্থায় আছে তা জানাতে হবে। সাতদিনের মধ্যে না জানালে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। কেননা শুল্ক গোয়েন্দার প্রাথমিক তদন্তে এ ১৬ কর্মকর্তা দেশত্যাগের আগে নিজ নিজ গাড়ির কোন সুরাহা করেননি। অথচ বিশ্বব্যাংক কর্মকর্তা হিসেবে বাংলাদেশের শুল্ক আইনে বিশেষ সুবিধাভোগী (প্রিভিলেজড পার্সন) হওয়ায় এ ১৬ কর্মকর্তা বিনা শুল্কে গাড়িগুলো এদেশে এনেছেন এবং ব্যবহার করেছেন। যাওয়ার সময় গাড়িগুলো যেভাবে সরকারের কাছে হস্তান্তর করার নিয়ম- সেটা তারা করেননি। এমন অভিযোগের ভিত্তিতেই শুল্ক গোয়েন্দারা তদন্তে নামে। তখনই বেরিয়ে আসে এ তথ্য। এসব গাড়ির শুল্ক ফাঁকি থেকে উৎসারিত অর্থ মানিলন্ডারিং করা হয়েছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জানা যায়, এই ১৬ গাড়ি শুল্কমুক্ত সুবিধায় যাদের নামে কেনা হয়েছে তারা বিক্রি করে দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করেছেন বলে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের কাছে তথ্য রয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংক মিশন প্রধানকে দায়ী করার সুযোগ রয়েছে প্রচলিত আইনে। আইন অনুযায়ী, শুল্কমুক্ত সুবিধায় কেনা গাড়ি বিক্রি করা যায় না। কর্মকাল শেষে মিশন প্রধানকে গাড়ি বুঝিয়ে দিতে হয়। এরপর মিশন প্রধান শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগকে অবহিত করে গাড়ির বিষয়টি নিষ্পত্তি করে থাকেন। কিন্তু এ ১৬ গাড়ির ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। সেক্ষেত্রে মিশন প্রধান দায় এড়াতে পারেন না বলে জানিয়েছেন শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগে মহাপরিচালক ড. মইনুল খান। সূত্রমতে, যদি শুল্কমুক্ত গাড়ি বিক্রি করতেই হয় তাহলে তা সরকারকে জানাতে হবে। সেক্ষেত্রে গাড়ির নতুন ক্রেতা শুল্কমুক্ত কোন সুবিধা পাবেন না। তখন তাকে শুল্কসহ যাবতীয় সবকিছু পরিশোধ করতে হবে। বিভিন্ন সময় কর সুবিধার আওতায় যেসব গাড়ি বাংলাদেশে এনেছিলেন বিশ্বব্যাংকের বিভিন্ন কর্মকর্তা, তার মধ্যে বিলাসবহুল গাড়িও ছিল। কিন্তু তারা বাংলাদেশ থেকে ফিরে যাওয়ার সময় বিধি না মেনে গাড়িগুলো অন্য ব্যক্তিদের কাছে হস্তান্তর করেন। মহাপরিচালক ড. মইনুল খান ধারণা করছেন, শুল্ক ফাঁকি ও ব্যক্তিগতভাবে লাভের উদ্দেশ্যে এ গাড়িগুলো বিক্রি করা হয়েছে। গত প্রায় দেড় মাস ধরে এই ১৬টি গাড়ির বিষয়ে তারা তদন্ত করেছেন। এ সময় গাড়ি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে তদন্তকারীরা আইনের ব্যত্যয় চিহ্নিত করেছেন বলে শুল্ক গোয়েন্দা দফতর দাবি করছে। বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় কর সুবিধা নিয়েছে বিদেশ থেকে আনা বিলাসবহুল গাড়ি নিয়ে অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে শুল্ক গোয়েন্দারা। এর আগে ঢাকায় জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচীর সাবেক কান্ট্রি ডিরেক্টর এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার কর্মকর্তার গাড়ি জব্দ করা হয়েছিল। এদিকে বিশ্বব্যাংকের যেসব কর্মকর্তা এসব গাড়ির কোন সুরাহা না করে ঢাকা ছেড়েছেন তারা হলেনÑ প্রমিতা দাস গুপ্তা পাসবুক, গাড়ির রেজি. নং এজব ০৭৭, শুকন্তলা আকমিমানা রেজি. নং এজে-২৭-০৪৩, কাথিনোয়েল খুউউ, রেজি. নং ডিএ ৪০২৫, ভিনায়া সরুপ রেজি. নং এজে-২৭-০৪২, আউসমানে সেকল রেজিঃ নং এজেবি-০৬৩, জোস এডগারডো লজেকামডোস রেজিঃ নং এজে-২৭- ০৪৩, মিরভা টুলিয়া রেজি. নং এজেবি -০৭১, ডেয়িড রেজি. নং ডিএ ৪১-০৩৪, গ্রিনা ইগরসিনা রেজি. নং এজেজে -২৭-০৩১, মৃদুলা সিং রেজি. নং এজেটি-০৬৮, তাহসিন সাইয়েদ খান, এজেবি ০৬৮, মেউমি ইসুগেইন জেআরই ০৫৬, তানিয়া মানা মিতরাচেককো রেজি. নং ডিএ-৩১-০৫, চেরেন উজার এজেটি ০৩০, ফেবিও পিটালুগা রেজি. নং একেডি -২৮১ ও হেলেন জয় ক্রেগ রেজি. নং- ডিএ ০১৪। ড. মইনুল খান জনকণ্ঠকে বলেন, এ সব গাড়ি কোথায় রাখা হয়েছে, সে সম্পর্কে অনুসন্ধান চলছে। ঢাকায় কারা এসব গাড়ি ব্যবহার করছে, কারও কাছে বিক্রি করা হয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারণ এ ধরনের গাড়ি হস্তান্তর করার সুনির্দিষ্ট আইন কানুন রয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ২৩৭ (২০১৩) ধারা মতে সুস্পষ্টভাবে এ ধরনের গাড়ির নিষ্পত্তি (ডিসপোজাল) করার সুনির্দিষ্ট নিয়ম হচ্ছে প্রথমত এ ধরনের বিশেষ সুবিধাভোগী বিদেশী কর্মকর্তারা কর্ম শেষে দেশত্যাগের সাতদিন আগেই নিজস্ব পাসবুক ও গাড়ি শুল্ক কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে হয়। দ্বিতীয়ত শুল্ক কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে আরেকজন প্রিভিলেজড কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করা। তৃতীয়ত এই গাড়ির পুরো শুল্ক পরিশোধ করে অন্যের কাছে বিক্রি করা যায়। কিন্তু এ ১৬ গাড়ির ক্ষেত্রে কোনটিই করা হয়নি বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রেকর্ডে দেখা গেছে। তাহলে কি করা হয়েছে-সেটাই জানতে চাওয়া হয়েছে। জানা যায়, দি কাস্টমস এ্যাক্ট ১৯৬৯ এর (এসআরও ২৩৭৮ /২০০৩ /২০১৫ ) অনুচ্ছেদ ৯ (২) অনুযায়ী কোন প্রতিষ্ঠানের কোন কর্মকর্তা যদি এভাবে গাড়ি ও পাসবুক হস্তান্তর না করে দেশত্যাগ করে তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধানকেই সব দায়ভার বহন করতে হবে। এই এখতিয়ার বলেই ঢাকার বিশ্বব্যাংকের প্রধান কান্ট্রি ডিরেক্টরের কাছে গাড়ি তলবের নোটিস পাঠিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতর।
×