ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কাবিন নিয়ে যেতে হয় যে গ্রামে-

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

কাবিন নিয়ে যেতে হয় যে গ্রামে-

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ১৫ ফেব্রুয়ারি ॥ গ্রামীণ জনপদে ফাইল পার্টির উপদ্রবে সাধারণ মানুষ অতীষ্ঠ হয়ে গেছে। এরা নানান কেওয়াজ সৃষ্টি করে কৌশলে একে অপরের সঙ্গে ঝগড়া-ফ্যাসাদ তৈরি করে শালিসে আবার সমাধানের নামে এক ধরনের বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। প্রত্যেক গ্রামে এ চক্রের তিন থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ সদস্য রয়েছে। যদিওবা এ চক্রের লোকজন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী। কিন্তু এরা সরকারী দলের নাম ব্যবহার করে মানুষকে জিম্মিদশায় ফেলে শালিসের নামে মূলত টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয়। কারও বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন পর্যন্ত বেড়াতে এলে এ চক্রের সদস্যরা তাদের চাঁদার দাবিতে হয়রানি করে। নারী-পুরুষ এলে তাদের বিয়ের কাবিননামা দেখতে চায়। এসব ফাঁদে ফেলে হয়রানি কিংবা মামলার ভয় দেখিয়ে এক পর্যায়ে টাকা হাতিয়ে নেয়। এ চক্রের এক থেকে দশ হাজার টাকার টার্গেট থাকে। আবার জমি-জমার ফাঁকফোকরকে পুঁজি করে চক্রটি লাখ লাখ টাকার ধান্ধা চালায়। মারধর কিংবা লাঞ্ছনার ভয়ে এসব ভুক্তভোগী মানুষ প্রশাসনের কাছে যায় না। এরা স্থানীয় হাট-বাজারের চায়ের দোকানে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডা দেয়। এ চক্রের সীমাহীন দৌরাত্ম্যে এখন ইউনিয়ন পর্যায়ের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি চেয়ারম্যান-মেম্বার পর্যন্ত অসহায়। এ চক্রের নিয়ন্ত্রণে আবার গ্রামের নির্দিষ্ট অন্তত ২০-২২টি পয়েন্টে গাঁজা, ইয়াবাসহ মাদক বিক্রি হয়। বসে জুয়াড় জমজমাট আসর। এ চক্রের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে সোমবার উপজেলা পরিষদের আইন-শৃঙ্খলার সভায় বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রতিকার চেয়েছেন। মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী হেমায়েত উদ্দিন বলেন, তার ইউনিয়নের মেলাপাড়া গ্রামের ইদ্রিছ আলীর বাড়িতে বছরের পর জুয়াড় আসর বসে। সেখানে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা আসা-যাওয়া করছে। চলে সেখানে মাদকের ব্যবসা। এছাড়া আবগঞ্জ খালের কালভার্টের পাশে দুই চিহ্নিত সন্ত্রাসী সরকারী খালে বাঁধ দিয়ে মাছের ঘের করে ছোট্ট ঝুপড়ি ঘর করে সেখানে জুয়াড় আসর বসায়। চলে মাদকের রমরমা ব্যবসা। অসামাজিক কর্ম চালায়। বালিয়াতলীর চেয়ারম্যান এবিএম হুমায়ুন কবির বলেন, কোম্পানিপাড়া বাজারের কাছে একটি চক্র জুয়াড় আসর বসায়। সেখানে মাদকের ব্যবসার পাশাপাশি বহিরাগত সন্ত্রাসীর আনাগোনা রয়েছে। গরু চোরাই চক্রের সঙ্গে এদের যোগাযোগ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাবলাতলা বাজারের চিহ্নিত সিন্ডিকেট মানুষকে জিম্মি করে শালিস বাণিজ্য চালাচ্ছে। এরা সবাই সরকারী দলের নাম ব্যবহার করছে। এমনকি এ চক্রের সদস্যরা নিজেরা আইন হাতে তুলে সংলগ্ন রামনাবাদ মোহনায় ট্রলার নিয়ে জাটকা ধরার নামে জেলেদের হয়রানি করছে। যে কোন সময় বড় ধরনের সংঘাতের শঙ্কা রয়েছে। একই বক্তব্য রাখেন ডালবুগঞ্জ, লালুয়া, টিয়াখালী, নীলগঞ্জ ও ধুলাসারের চেয়ারম্যান। পাখিমারা বাজারে চিহ্নিত চক্র দীর্ঘদিন শালিস বাণিজ্য করে মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টিও আলোচিত হয়। টিয়াখালীর চেয়ারম্যান জানান, প্রভাবশালী মহল ছ-আনিপাড়ার স্লুইসখাল আটকে জমি দখল করে যাচ্ছে। সভায় এই শালিসচক্রকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
×