ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ঠিকাদারের উপহার বাঁশের সাঁকো

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ঠিকাদারের উপহার বাঁশের সাঁকো

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও, ১৫ ফেব্রুয়ারি ॥ ‘আমাদের কী সৌভাগ্য, পাকা সেতুর বদলে বাঁশের সাঁকো উপহার পেয়েছি’। কয়েকদিন আগে সদর উপজেলার শিবগঞ্জ-নেকমরদ সড়কে বাঁশের সাঁকোয় পারাপারে বিড়ম্বনার কথা বলতে গিয়ে এ কথা বলেন জামালপুর ইউনিয়নের ভগদগাজী গ্রামের আবদুল জব্বার। ওই সড়কের কাশিডাঙ্গা এলাকায় পুরনো পাকা সেতু ছিল। গত বছরের শুরুতে সেতুর মাঝখানে গর্তের সৃষ্টি হয়। গত ফেব্রুয়ারিতে নতুন সেতু নির্মাণে সেটি ভেঙ্গে ফেলা হয়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের জুলাই মাসে নর্দার্ন বাংলাদেশ ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় এলজিইডি ভগদগাজী থেকে শিবগঞ্জ পর্যন্ত ৪ দশমিক ২ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক মেরামতের উদ্যোগ নেয়। সেতুটি ওই সড়কে পড়ায় সেটিও নির্মাণের আওতায় আনা হয়। সেতুসহ সড়ক মেরামতের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৫ কোটি ২৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। কাজটি পান শহরের প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদার রামবাবু। ওই বছরের ২৬ আগস্ট তাকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। কার্যাদেশের শর্তানুযায়ী কাজটি গত ৩০ নবেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। সেজন্য গত ফেব্রুয়ারি মাসে নতুন সেতু নির্মাণের জন্য পুরনো সেতুটি ভেঙ্গে ফেলা হয়। সেতুটি ভেঙ্গে ফেলার সময় ঠিকাদার সেতুর পাশে বিকল্প সড়ক নির্মাণ করে দেন। বর্ষা শুরু হলে বিকল্প সড়কটি পানিতে তলিয়ে যায়। এতে ওই পথে চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে লোকজনের পারাপারে ওই জায়গায় বাঁশের সাঁকো বানিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা করে দেন ঠিকাদার। সরেজমিনে দেখা যায়, বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে শিশু, বৃদ্ধসহ নানা বয়সের মানুষ। ওই এলাকার চলাচলের সময় লোকজন বলেন, ‘কষ্ট হলেও ভাঙ্গা সেতু দিয়ে যাতায়াত করা যেত। সেতুটি ভেঙ্গে ফেলার পর ঠিকাদার বাঁশের সাঁকো তৈরি করায় চলাচল আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। গত কয়েক দিনে সাঁকো থেকে পাঁচ থেকে ছয়জন মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেলের আরোহী পানিতে পড়ে গেছেন।’ স্থানীয়রা বলেন, ওই সেতু দিয়ে এলাকার কয়েক গ্রামের মানুষ চলাচল করত। কিন্তু সেখানে বাঁশের সাঁকো দেয়ায় উৎপাদিত পণ্য পাশের হাটবাজারে নিয়ে যেতে তাদের ভোগান্তি হচ্ছে। মাধবপুরে হাজারমানুষের দুর্ভোগ সংবাদদাতা, মাধবপুর, হবিগঞ্জ থেকে জানান, বিজয়নগর গ্রামের কাছে সোনাই নদীর পারের কয়েক হাজার মানুষ একটি পাকা ব্রিজের অভাবে সারা বছরই যোগাযোগের ক্ষেত্রে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। নদীর ওপর বাঁশের সাঁকো তৈরি করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্থানীয় লোকজন ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের চলাচল করতে হচ্ছে। একটি মাত্র ব্রিজের অভাবে সোনাই নদীর পারের বিজয়নগর গ্রামসহ কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ যেন বিচ্ছিন্ন জনপদের বাসিন্দা। সরেজমিন দেখা গেছে, মাধবপুর উপজেলার ধর্মঘর ইউনিয়নের পূর্ব-উত্তরে ফতেহপুর ও বিজয়নগর গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রভাবিত খরস্রোতা সোনাই নদী। নদীর পূর্বপারে বিজয়নগরসহ এলাকার মানুষের হাটবাজার, ছেলেমেয়েদের স্কুল-কলেজ সবকিছুই নদীর পশ্চিমপারে। তাই বাধ্য হয়ে নিত্যদিন সোনাই নদী পার হতে হয় ওই জনপদের হাজারো মানুষের। সেজন্য নদীর ওপর বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে যুগের পর যুগ ধরে যাতায়াত রক্ষা করা হচ্ছে। অনেক সময় নড়বড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো পারাপার হতে গিয়ে পা ফসকে অনেকেই দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। গ্রামের ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ব্রিজ পার হচ্ছে। বৃষ্টি হলে নদীতে জোয়ার আসে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে শিক্ষার্থী ও জনসাধারণের মারাত্মক ঝুঁকি হয়ে ওঠে। তাই বাধ্য হয়ে ৪ কিলোমিটার ঘুরে চৌমুহনী ইউনিয়নের মহব্বতপুর এলাকা রাবার ড্যামের ব্রিজ ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু মাত্র এক শ’ ফুট এলাকায় নদীর ওপর পাকা ব্রিজ নির্মাণ করা হলে ৪ কিলোমিটার এলাকা ঘুরতে হয় না। এ বিষয়ে ধর্মঘর ইউপি চেয়ারম্যান শামসুল ইসলাম কামালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সোনাই নদীর ওপর পাকা ব্রিজ খুবই জনগুরুত্বপূর্ণ। এলজিইডিকে এখানে ব্রিজ নির্মাণের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ব্যাপারে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী তানজির উল্লাহ সিদ্দিকীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, প্রস্তাবটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। তিতাসে দুঃখের সাঁকো নিজস্ব সংবাদদাতা, দাউদকান্দি থেকে জানান, কুমিল্লার তিতাসে প্রথম সরস্বতিরচর ও দ্বিতীয় সরস্বতিরচর গ্রামের মাঝখানের খালের ওপর পাকা সেতু না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন শতশত শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে চলাচল করতে হয় বাঁশের সাঁকো দিয়ে। স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকে অদ্যাবধি ওই স্থানে কোন সেতু/কালর্র্ভাট নির্মাণ না হওয়ায় দু’গ্রামবাসীর দুঃখের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সাঁকোটি। জানা যায়, উপজেলার সাতানী ইউনিয়নের দ্বিতীয় সরস্বতিরচর থেকে প্রথম সরস্বতিরচর গ্রামে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম এ বাঁশের সাঁকোটি। প্রথম সরস্বতিরচর গ্রামে কোন প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা না থাকায় শতাধিক শিক্ষার্থী প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইউনিয়ন কারিগরি উচ্চ বিদ্যালয়, সরস্বতিরচর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, দ্বিতীয় সরস্বতিচর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চরকুমারিয়া মাদ্রাসায় যাতায়াত করে। শুধু শিক্ষার্থী নয়, সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন প্রথম স্বরসতিরচর গ্রামের দু’শতাধিক লোক জীবনের তাগিদে ও দৈনন্দিন কাজে যেমন যাতায়াত করে তেমনি দ্বিতীয় সরস্বতিরচর গ্রামের শতাধিক কৃষক কৃষিকাজের জন্য সাঁকোটি ব্যবহার করে। দ্বিতীয় সরস্বতিরচর গ্রামের আফিয়া খাতুন জানান, আমাদের চাষাবাদের জমি নদী এলাকায় হওয়ায় এই সাঁকো দিয়ে ফসল আনা-নেয়া করতে হয়। প্রতিদিনই এখান দিয়ে ছোট ছোট ছেলেমেয়ে স্কুলে যাতায়াত করে।
×