ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ইন্স্যুরেন্স এ্যাসোসিয়েশনে আবার আসছে প্রধান নির্বাহীরা

প্রকাশিত: ০৪:০২, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ইন্স্যুরেন্স এ্যাসোসিয়েশনে আবার আসছে প্রধান নির্বাহীরা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সদস্য হিসেবে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারাও (সিইও) থাকতে পারবেন। এ জন্য সংশোধনী সংঘবিধি আবারও সংশোধন হচ্ছে, যা ২৩ ফেব্রুয়ারি বিআইএ’র অতিরিক্ত সাধারণ সভায় (ইজিএম) পাস হবে। সূত্র জানায়, এ সংশোধনীর ফলে সিইওরা বিআইএ’র কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হওয়ার সুযোগ পাবেন। তবে সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। এর আগে সিইওরা যাতে বিআইএ’র সদস্য হতে না পারে সেজন্য গত জুনে সংঘবিধি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়, যা ওই মাসেই সংশোধনী কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে নির্বাহী কমিটিতে পাস হয়। ফলে সিইওদের জন্য বন্ধ হয়ে যায় বিআইএ’র সদস্য হওয়ার পথ। সংশোধনী ওই সংঘবিধিতে উল্লেখ রয়েছে, প্রত্যেক সাধারণ সদস্য (বিআইএ’র সদস্য কোম্পানি) সমিতির সাধারণ পরিষদে নিজেদের প্রতিনিধিত্বের জন্য বীমা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানসহ মোট তিনজনকে মনোনয়ন করবে। বাকি দুজন হবেন কোম্পানির পরিচালক অথবা স্পন্সর। তবে বিদেশে সংঘবিধিবদ্ধ কোম্পানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অবস্থিত কার্যালয়ের প্রধান এবং অব্যবহৃত নিম্নপদের দুজনকে প্রতিনিধি হিসেবে মনোনয়ন করা যাবে। একটি কোম্পানির তিনজন প্রতিনিধির মধ্যে একজন ভোট প্রদানের এবং নির্বাহী কমিটির সদস্য হওয়ার সুযোগ পাবেন। এ পরিবর্তনের বিষয়ে সংশোধনী কমিটির মন্তব্যে বলা হয়, বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস, ব্যাংকার এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ লিজিং এ্যান্ড ফিন্যান্স কোম্পানিজ এ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক কাঠামো এবং সংগঠনগুলোর বাস্তব অবস্থা গুরুত্বের সঙ্গে পর্যালোচনা করা হয়েছে। এ তিন সংগঠনের কোনটি নির্বাহী কমিটি অথবা কার্যনির্বাহী পরিষদে কোম্পানির চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, পরিচালক এবং মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা একই সঙ্গে বাস্তবে বিদ্যমান নেই। বিআইএ’র সংঘবিধিতে যখন এ সংশোধনী আনা হয় সে সময় সংগঠনটির সহ-সভাপতির পদে ছিলেন সন্ধানী লাইফের সিইও আহসানুল ইসলাম টিটু। তিনি এখনও বিআইএ’র ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে রয়েছেন। সংশোধনীর ফলে বীমা মালিকদের মধ্যে প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত হাজি মোকবুলের ছেলে টিটুর জন্যও নতুন করে বিআইএ’র সদস্য থাকার পথ বন্ধ হয়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে সংশোধনীর বিরোধিতা করে সন্ধানী লাইফ থেকে বিআইএকে উকিল নোটিস পাঠানো হয়। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর চাচা হিসেবে পরিচিত শেখ কবির হোসেনের হস্তক্ষেপে বিষয়টি নিস্পত্তি হয়। সেই সঙ্গে গত জুনে সংঘবিধিতে সংশোধন আনার পর ইজিএম না করেই ১৫ ডিসেম্বর বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করে বিআইএ। পাশাপাশি ২০১৭-১৮ মেয়াদের নির্বাচন আগামী ৫ মার্চ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এরপর ভোটারদের নাম চেয়ে বিআইএ থেকে কোম্পানিগুলোতে চিঠি দেয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা ইন্স্যুরেন্স, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স, ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স, হোমল্যান্ড লাইফ, এনআরবি গ্লোবাল লাইফ, শিকদার ইন্স্যুরেন্স, রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স এবং পাইওনিয়ার ইন্স্যুরন্সসহ আরও কয়েকটি কোম্পানি ভোটার হিসেবে সিইওদের নাম পাঠায়। ফলে নতুন করে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে বিআইএ। এ পরিস্থিতিতে বিআইএ’র প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেনের হস্তক্ষেপে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে নির্বাচন দুই মাস পিছিয়ে দেয়া হয়। সেই সঙ্গে সংশোধনী সংঘবিধিতে পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নেয়া হয়। এ বিষয়ে ইন্স্যুরেন্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে সিইওদেরও সদস্য হওয়ার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। তবে সেটি কোম্পানির ওপর নির্ভর করবে। বিআইএতে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য কোম্পানিগুলোর কাছে নাম চাইব। কোন কোম্পানি চাইলে সিইওদের নাম দিতে পারবে। তবে সিইও সংগঠনের প্রেসিডেন্ট বা ভাইস প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। আগামী ইজিএমর মাধ্যমে বিষয়টি পাস হবে। বীমা কোম্পানির মালিক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ১৯৮৮ সালে গড়ে ওঠে বীমা খাতের এই সংগঠনটি। প্রতিষ্ঠার পর গত জুনের আগে সাতবার বিআইএর সংঘবিধি পরিবর্তন হয়। তবে ওই সাতবারের মধ্যে একবারও বিআইএতে বীমা কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বা ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) না রাখার বিষয়ে কোন আলোচনা হয়নি। কিন্তু গত বছর বীমা খাতে নতুন গড়ে ওঠা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরাম (বিআইএফ)’-এ বিআইএ’র নির্বাহী কমিটি ছেড়ে রূপালী ইন্স্যুরেন্সের সিইও পি কে রায় এবং পিপলস ইন্স্যুরেন্সের সিইও মোহাম্মদ হোসাইন খালেদ যোগদান করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠার ২৮ বছর পর বিআইএতে সিইও বা এমডিদের না রাখার পরিকল্পনা নেয় বিআইএ। শেখ কবির হোসেন বলেন, যেহেতু সিইওদের জন্য নতুন একটি সংগঠন করা হয়েছে; তাই আমরা চেয়েছিলাম বিআইএতে তাদের না রাখতে। কারণ ব্যাংকের সংগঠনেও একই সঙ্গে কোম্পানির চেয়ারম্যান ও সিইওদের উপস্থিতি নেই।
×