ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্লাস্টিক শিল্পে বিপ্লব

প্রকাশিত: ০৪:০০, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

প্লাস্টিক শিল্পে বিপ্লব

এম শাহজাহান ॥ চা-চামচ থেকে শুরু করে ঘরের দরজা সব কিছুই তৈরি হচ্ছে প্লাস্টিক দিয়ে। কাঠের বিকল্প হিসেবে জায়গা করে নিচ্ছে প্লাস্টিকের ফার্নিচার। আর ইউপিভিসি ফিটিংসে প্লাস্টিকের জুড়িমেলা ভার। নীরবে দেশে যেন প্লাস্টিক শিল্পের বিপ্লব ঘটে চলছে। আমদানি নয় বরং সময়ের ব্যবধানে প্লাস্টিক পণ্যে স্বনির্ভরতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। মেইড ইন বাংলাদেশ খ্যাত প্লাস্টিক পণ্য দেশের গ-ি ছাড়িয়ে রফতানি হচ্ছে বিদেশেও। প্লাস্টিকের এই জয়জয়াকর দেখতে হলে ঢু’ মারতে হবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। কারণ সেখানে শুরু হয়েছে প্লাস্টিক পণ্যের আন্তর্জাতিক মেলা। এই শিল্পের সঙ্গে কিভাবে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী কাজ করছেন সেই প্রদর্শনী চলছে সম্মেলন কেন্দ্রে ঢুকতে হাতের বাম পাশে। আর ডান পাশে আলাদা ভেন্যুতে চলছে দেশীয় উদ্যোক্তাদের তৈরি প্লাস্টিক পণ্যের মেলা। এখানে যেন সকলের ব্যস্ততাও একটু বেশি। আস্থা শতভাগ সেøাগানে বেঙ্গল গ্রুপ তাদের উৎপাদিত প্লাস্টিকের তৈরি হাজারো আইটেমের পণ্য প্রদর্শনী করছে। মেলায় অংশ নিয়েছে ন্যাশনাল পলিমার, প্রাণআরএফএলের মতো শতাধিক বড় বড় প্রতিষ্ঠান। বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুরু হয়েছে চার দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক প্লাস্টিক পণ্যের মেলা। শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু মেলার উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর মেলায় দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। এবারের মেলায় ১৪টি দেশের প্রতিনিধিরা স্টল নিয়ে অংশগ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে চীন, ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ডের স্টল সবচেয়ে বেশি। এসব স্টলে প্লাস্টিক শিল্পের প্রয়োজনীয় মেশিনারিজ থেকে শুরু করে কাঁচামাল প্রদর্শন করা হচ্ছে। চীনের বিখ্যাত রিয়েদ প্রতিষ্ঠানের ভাইস প্রেসিডেন্ট কেটি জিয়াং জনকণ্ঠকে বলেন, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার দ্রুত বেড়ে চলছে। বিশেষ করে রিয়েদ কোম্পানির প্লাস্টিক প্যাকেজিং মেশিনারির যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে এই দেশে। এছাড়া ফ্লেক্সো প্রিন্টিং মেশিন পিভিসি কম্পাউন্ড, ইনজেকশন মোল্ডিং মেশিন স্পেয়ার পার্টস এবং ইউসড মেশিন বিক্রি হচ্ছে বাংলাদেশে। আর এ কারণে গত দশ বছর ধরে বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে চীনের এই প্রতিষ্ঠানটি। তিনি জানান, বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্যের দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। আর এ কারণে চীন থেকে এখন মেশিন আমদানি করা হলেও অদূর ভবিষ্যতে চীনে প্লাস্টিক পণ্য রফতানি করতে সক্ষম হবে বাংলাদেশ। তবে কেটি জিয়াংয়ের চেয়ে এ শিল্পখাত নিয়ে বেশি আশাবাদী বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জসিম উদ্দিন। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত রূপকল্প-২১ এবং উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্ন পূরণে রূপকল্প-৪১ বাস্তবায়নের জন্য যে বিপুল পরিমাণ কর্মসংস্থানের প্রয়োজন তা কেবল প্লাস্টিক শিল্প খাতে সম্ভব। কৃষিনির্ভর অর্থনীতি থেকে দেশ এখন শিল্পনির্ভর অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ছোট বড় মিলিয়ে দেশে বর্তমান প্রায় ৩ হাজার প্লাস্টিক শিল্প কারখানায় প্রতি বছর ২০ হাজার কোটি টাকার পণ্য উৎপদান ও বিক্রি করছে। আর এ শিল্প খাত থেকে সরকার রাজস্ব পাচ্ছে ৩ হাজার কোটি টাকা উপরে। তিনি বলেন, রফতানি বাজার ধরে রাখতে কারখানা কমপ্লায়েন্স হওয়া জরুরী। এ লক্ষ্যে শিল্পের কারখানাগুলো কমপ্লায়েন্স করতে আলাদা প্লাস্টিক শিল্পনগরী চাওয়া হয়েছে। গার্মেন্টসের কারণে রফতানিতে জিএসপি হারিয়েছে প্লাস্টিক শিল্প খাত। এ কারণে কারখানা কমপ্লায়েন্সে এখন সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হয়েছে। জসিম উদ্দিন আরও জানান, এ শিল্প খাত উন্নয়ন এবং কাঁচামাল আহরণে রিসাইক্লিনটা জরুরী। এক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনকে উদ্যোগী হতে হবে। পুরান ঢাকায় ইতোমধ্যে বেশকিছু রিসাইক্লিন কারখানা গড়ে উঠেছে। এদিকে এবারের মেলায় দেশী ও বিদেশী ৪৫০টি স্টল রয়েছে। দেশীয় মোট ১৫টি ক্যাটাগরিতে যেসব প্রতিষ্ঠান স্টল দিয়েছে তাদের মধ্যে প্লাস্টিক হাউস আইটেমস, প্যাকেজিং ম্যাটারিয়েলস, প্লাস্টিক মাউল্ড, ফার্মাসিটিক্যাল, প্লাস্টিক ফার্নিচার, মেলামাইন, গার্মেন্টস এক্সসোসরিজ, পিপি ওভেন ব্যাগ উল্লেখযোগ্য। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, আগামী বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালের মধ্যে প্লাস্টিক শিল্পনগরী প্রকল্পের কাজ শেষ করে আনা হবে। জাতীয় শিল্পনীতি-২০১৬ তে প্লাস্টিক শিল্পকে অগ্রধিকার খাতের শীর্ষস্থানে রাখা হয়েছে। সরকার উদীয়মান শিল্পখাত হিসেবে পরিবেশবান্ধব সবুজ প্লাস্টিক শিল্প খাত বিকাশে বদ্ধপরিকর। এ শিল্পের বিকাশে ইতোমধ্যে মুন্সীগঞ্জে ৫০ একর জমির ওপর প্লাস্টিক শিল্পনগরী গড়ে তোলার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ১৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এখানে ৩৬০টি প্লাস্টিক শিল্প ইউনিট স্থাপন করা হবে। যেখানে প্রায় ১৮ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। এ কাজ শেষ হবে আগামী বছরের জুনে। ওই সময় পরিবেশদূষণ এড়াতে তিনি প্লাস্টিক শিল্প কারখানায় বাধ্যতামূলকভাবে বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) স্থাপনের জন্য উদ্যোক্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ চাহিদা পূরণের জন্য এ খাতকে রফতানি বহুমুখীকরণের পাশাপাশি বৈচিত্র্যকরণ ও মূল্য সংযোজনের উদ্যোগ নিতে হবে। রফতানি আয় বাড়াতে এ খাতের নতুন পণ্যগুলোকে তালিকায় আনতে হবে। আগামী ২০২১ সালের মধ্যে এ শিল্প খাতে রফতানি আয় ১০০ কোটি ডলারে উন্নীত করা হবে বলে জানান তিনি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান প্রমুখ।
×