ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আপন ঘরে শত্রু তৈরি করবেন না ॥ কাদের

প্রকাশিত: ০৭:৪৮, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

আপন ঘরে শত্রু তৈরি করবেন না ॥ কাদের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের ঢাকা জেলা ও এই জেলার উপজেলা নেতাদের দ্বন্দ্ব^-বিবাদ প্রকাশ্য হয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার এক যৌথসভায় খোদ দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সামনেই জেলা ও উপজেলা নেতারা একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেছেন। সেখানে নেতারা নিজেরাই বিভিন্ন নির্বাচনে একাধিক প্রার্থী দাঁড় করানোর গোমর ফাঁস করেছেন। মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে সমঝোতার কাহিনীও তুলে ধরেছেন। মঙ্গলবার ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের এই যৌথসভা আয়োজিত হয়েছিল রাজধানীর ধানম-ির একটি কমিউনিটি সেন্টারে। এই সভায় জেলা নেতাদের পরস্পরকে আক্রমণ করে দেয়া বক্তব্যে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। অবশ্য নেতাদের আক্রমণাত্মক ও পরস্পর বিরোধী বক্তব্যে পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠলে ওবায়দুল কাদেরের হস্তক্ষেপেই পরিস্থিতি শান্ত হয়। সভায় দলীয় নেতাদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সমালোচনার সুত্রপাত ঘটান সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলী হায়দার। আগামী নির্বাচনে সাভারে জয়ী হওয়ার জন্য কোন্দল মেটানোর পরামর্শ দিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে সাভার থেকে যাকে মনোনয়ন দেয়া হবে তার নাম এক বছর আগে ঘোষণা দিতে হবে। তার নেতৃত্বে দলের ছোটখাটো ভুল-ত্রুটির সমাধান করে আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারব। কেন্দ্রীয় নেতাদের সাভার গিয়ে উপজেলা নেতাদের কথা শোনার আহ্বান জানান। ধামরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সাকু বলেন, ধামরাইয়ের সাবেক এমপি বেনজির আহমেদ ও বর্তমান এমপি এম এ মালেক দুই মেরুতে অবস্থান নিয়েছেন। সেখানে যুবলীগের সম্মেলন ১২ বছর এবং ছাত্রলীগের সম্মেলন ১৪ বছর ধরে হয় না। এটা কী দুই নেতার কারণেই? অনেক হাইব্রিড নেতা মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার চেষ্টা করছেন। ঘরে ঘরে চুক্তি হচ্ছে। সেই চুক্তি থেকে বিরত থেকে সঠিক মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাচাই করতে হবে। সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি হাসিনা দৌলা নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নে কেন্দ্রীয় নেতাদের ভূমিকার সমালোচনা করে বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে শ্রম, ঘাম ও অর্থ ব্যয় করলাম। কিন্তু হঠাৎ করে আপনারা (কেন্দ্রীয় নেতা) সংসদ সদস্য বানিয়ে দেন। আপনারা কী আমাদের মতো মানুষদের চোখে দেখেন না? এবারও এনামুর রহমানকে এমপি বানানো হয়েছে, যাকে আমরা জানি না, চিনি না। আগামীতে এমপি পদে মনোনয়ন দেয়ার আগে আপনারা ভেবেচিন্তে দেবেন। আমাদের মনে কষ্ট দেয়ার অধিকার আপনাদের নেই।’ দলের কোন্দল তুলে ধরে দোহার উপজেলা চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন বলেন, ‘বর্তমান সভাপতিম-লীর সদস্য আবদুল মান্নান যখন মন্ত্রী ছিলেন, তখন তার কথামতো সংগঠন চলত, নেতারা পদ-পদবি পেতেন। আবার যখন মান্নান ভাই সাংসদ হলেন না তখন জেলার সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমানের পছন্দমতো নেতাকর্মীরা দলে পদ পেয়েছেন।’ ধামরাই পৌরসভার মেয়র গোলাম কবির বলেন, ‘ধামরাই আওয়ামী লীগে এখন অনেক দ্বন্দ্ব দেখা যাচ্ছে। এ ™^ন্দ্ব মিটিয়ে ফেললে আগামী নির্বাচনেও বিপুল ভোটে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হবে।’ ধামরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মালেক এমপি সেখানকার ™^ন্দ্ব ও বিভেদের জন্য ঢাকা জেলা সভাপতি বেনজির আহমেদকে দায়ী করেন। উপজেলা ও জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী দেয়াকে কেন্দ্র করে বিভেদের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে তিনি জানান, তৃণমূলের রায় উপেক্ষা করে প্রার্থী বদল করা হয়েছে। তার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে প্রার্থিতার সময় তার বিরোধিতা করেছেন বেনজির আহমেদ- এমন অভিযোগও তুলে ধরে এমএ মালেক বলেন, ‘বেনজির আহমেদের কথায় শেষ পর্যন্ত চেকের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা দিয়ে ওই পদ পেতে হয়েছে আমাকে।’ এমএ মালেকের এমন কথায় সভাস্থলে হট্টগোল সৃষ্টি হয়। সভামঞ্চ থেকেও অনেকে তাকে এ ধরনের বক্তব্য দিতে নিষেধ করেন। এ অবস্থায়ও এ সময় এম এ মালেক বক্তব্য অব্যাহত রাখলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাকে মাইক থেকে সরিয়ে দেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এখানে খোলামেলা আলোচনায় আমরা বিব্রত। আওয়ামী লীগ অনেক বড় দল, অনেক বড় পরিবার। ছোটখাটো সমস্যা থাকতে পারে। দলের কার্যক্রম নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা হতে পারে। যারা বক্তব্য রাখবেন, কাউকে আক্রমণ করবেন না। সমস্যা আমরা সবাই জানি। আজকের পরিবেশটা নষ্ট করবেন না। আমরা ঘরোয়া আলোচনায় সমস্যা সমাধান করতে পারি।’ জেলা-উপজেলা নেতাদের বক্তব্যে বিরক্তি প্রকাশ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘একই পরিবারে কাজ করতে গিয়ে মতবিরোধ হয়, তার সমাধান হয়। কিন্তু ঘরের ভেতর ঘর কেন? আপন ঘরে শত্রু হলে বাইরের শত্রুর দরকার আছে? আপন ঘরে শত্রু তৈরি করবেন না। কেউ জনগণ ও দলের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ালে এর পরিণাম কী হয় তার প্রমাণ অতিসম্প্রতি সিরাজগঞ্জ ও ঢাকা কলেজের নেতাদের পরিণতি।’এরপর যৌথসভার ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজির আহমেদ বলেন, ‘কাদা ছড়াবেন না। ছড়ালে সবার গায়েই লাগবে। সাংগঠনিক শৃঙ্খলা মেনে চলুন। কেউই ধোয়া তুলসীপাতা নন। ইট মারলে পাটকেল খেতে হয়। সময়-সুযোগমতো শে^তপত্র প্রকাশ হতে পারে। তিনবছরের যে কীর্তিকলাপ আছে, তা প্রকাশ হতে পারে।’
×