ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হায়দরাবাদ টেস্ট

প্রত্যাশার চেয়ে বেশি পেল বাংলাদেশ!

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

প্রত্যাশার চেয়ে বেশি পেল বাংলাদেশ!

মিথুন আশরাফ, হায়দরাবাদ থেকে ॥ ‘আমি আমার ব্যাটিং স্টাইল পরিবর্তন করব না। আমি এভাবে খেলেই রান পেয়েছি। এভাবেই খেলব।’ প্রথম ইনিংসে শতরানের কাছাকাছি গিয়ে বাজে একটি শটে আউট হয়ে যান সাকিব আল হাসান। এরপর সংবাদ সম্মেলনে এমনই বলেন সাকিব। তাহলে কি বাংলাদেশ দলও সাকিবের ফর্মুলাতেই চলতে চাচ্ছে। বারবার ভাল খেলার প্রাপ্তি আর ভুলে ভরা থেকে আক্ষেপই সঙ্গী হবে? বাংলাদেশ বেশি টেস্ট খেলে না। বছরে একটি দুটি টেস্ট খেলার সুযোগ পায়। তাতে ঝলক দেখাচ্ছে। কিন্তু বারবার সেই প্রাপ্তি আর আক্ষেপই সঙ্গী হচ্ছে। এবার ভারতের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টেও তাই হয়েছে। পাঁচদিনে খেলার প্রাপ্তি মিলেছে। কিন্তু ভুলে ভরা টেস্ট ম্যাচটি আবারও আক্ষেপই নিয়ে হাজির হয়েছে। ব্যাটসম্যানদের বাজে শট খেলা। ফিল্ডারদের ফিল্ডিং মিস করার আক্ষেপ রয়েই গেছে। এ ভুলগুলো যেন বাংলাদেশ দলকে ঘিরেও ধরেছে। ভারতের বিপক্ষে ভারতের মাটিতে প্রথমবার খেলে বাংলাদেশ। ম্যাচটি হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে হয়। এ টেস্টে বাংলাদেশ জিতবে, তা কেউই ভাবেনি। টেস্ট শুরুর আগে ড্র করবে, তাও ভাবনায় হয়ত আসেনি। কিন্তু বাংলাদেশ সেই সুযোগ তৈরি করেছিল। সেই সুযোগটি হয়ত কাজেও লাগত। কিন্তু প্রতিটি ইনিংসে বড় সব ভুলের মাশুল দিতে হয়েছে। ভারতের প্রথম ইনিংস যে এত বড় হয়েছে, তাতেই যে খেলা ভারতের হাতে চলে গেছে, সেটি ফিল্ডারদের ক্যাচ মিস এবং মুশফিকুর রহীমের স্ট্যাম্পিং মিসের কারণেই হয়েছে। প্রথম ইনিংসে বিরাট কোহলি দ্বিশতক, মুরলি বিজয়, ঋদ্ধিমান সাহার শতক ও চেতশ্বর পুজারা ও অজিঙ্কেয়া রাহানের শতকের কাছাকাছি রানে ভারত ৬৮৭ রান করতে পারে। এরমধ্যে ফিল্ডারদের ভুল না হলে কোহলি হয়ত দ্বিশতক করতে পারতেন না। পুরো চান্স নয়, তবে কোহলিকে স্ট্যাম্পিং করার অল্প সুযোগ ছিল। পারেননি উইকেটরক্ষক মুশফিক। মেহেদী হাসান মিরাজতো মুরলি বিজয়কে রান আউট থেকে বাঁচিয়েই দিলেন। চেতশ্বর পুজারাকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ আউট করার সুযোগও হাতছাড়া হয়। আর ঋদ্ধিমানকে তো মুশফিক এমনভাবে ‘নতুন জীবন’ দিলেন, স্ট্যাম্পিং মিস করলেন, যা বিশ্ব ক্রিকেটই হতভাগ। এ ব্যাটসম্যানরা যদি আউট হওয়া থেকে না বাঁচতেন, তাহলে টেস্টে ভাল প্রাপ্তি মিলতেও পারত। এরপর ব্যাটিংয়ে প্রথম ইনিংসে সাকিব আল হাসানের বাজে শট খেলে আউট হওয়ার পরই আসলে বাংলাদেশ টেস্ট থেকে পুরোদমে পিছিয়ে পড়েছে। এরপর মুশফিক বীরোচিত ইনিংস খেলে, শতক করে বাংলাদেশকে ৩৮৮ রানে নিয়ে যান। মিরাজ দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন। মুশফিকের সঙ্গে জুটি গড়েন। যে জুটিই মূলত বাংলাদেশকে বড় ইনিংস গড়ার দিকে নিয়ে যায়। কিন্তু প্রথম ইনিংসেই এক নম্বর দলের বিপক্ষে যখন নয় নম্বর দল পিছিয়ে পড়ে, তখন আর কি করার থাকে। তারপরও চেষ্টার কমতি ছিল না। বাংলাদেশ ফলোঅনে পড়লেও ভারত আবার ব্যাট করতে নামে। এক সেশনে ব্যাট করে ১৫৯ রান করে বাংলাদেশের সামনে ৪৫৯ রানের টার্গেট দেয়। যে টার্গেট অতিক্রম করতে হলে বাংলাদেশকে ইতিহাস গড়তে হত। যা কোনদিন কোন দল পারেনি, তা করে দেখাতে হত। তা যে বাংলাদেশ পারত না তা ভাল করেই জানা। তবে ভারতের দ্বিতীয় ইনিংস যখন শেষ হয়, তখন হাতে ছিল ৫ সেশন। ১০ উইকেট। তখন ম্যাচটি থেকে ড্র ফল বের করার স্বপ্ন তো বাংলাদেশ দেখতেই পারত। দেখেছেও। তাতে সফলও হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি ছিল। কিন্তু আবার সেই ভুল। ব্যাটসম্যানদের বাজে শট খেলে আউট হওয়ার ভুল আবারও ডুবিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশকে। তামিম এ টেস্টে পুরো ফ্লপ হন। দ্বিতীয় ইনিংসে আবার রান আউটও হন। মুশফিকুর রহীম বাজে শট খেলে সাজঘরে ফেরেন। যাকে ঘিরেই আসার আলো দেখা হয়েছিল, যিনি প্রথম ইনিংসে অসাধারণ ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে ড্র করার সম্ভাবনার স্বপ্নে ভাসিয়েছিলেন, সেই তিনিই কিনা ডুবিয়ে দিলেন। দ্রুতই মুশফিক আাউট হয়ে যাওয়াতে আসলে আর কোন স্বপ্নই বেঁচে থাকেনি। চতুর্থদিন শেষ সেশনে ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তাতেই পিছিয়ে পড়ে। আর পঞ্চমদিন প্রথম দুই সেশনেই সব শেষ হয়ে যায়। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ সেই ২০১৫ সালের পর অর্ধশতকের একটি ইনিংস খেলেন। চেষ্টা করেন দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। কিন্তু কতক্ষণ আর পারবেন। এরসঙ্গে তিনিও আবার বাজে শটেই সাজঘরে ফেরেন। এরপর থাকেন বোলাররা। তারা কি আর টেস্ট বাঁচাতে পারবেন? এরপরও রাব্বি ৭০ বল খেলে ৩ রান করেন। দেখিয়ে দেন যে উইকেট আঁকড়ে থাকা যায়। যেটি সবচেয়ে বেশি পঞ্চমদিনে দরকার ছিল। কিন্তু ব্যাটসম্যানরা তা করতে পারেননি। তাই টেস্টও বাঁচানো যায়নি। আর তাই টেস্ট যে পাঁচদিনে গড়িয়েছে, সেটি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। প্রথমবারের মতো ভারতের আমন্ত্রণ পেয়ে বাংলাদেশ যে টেস্টটাতে আমেজ তৈরি করতে পেরেছে, সেটিই প্রাপ্তির খাতায় যোগ হয়েছে। তবে সেই প্রাপ্তির সঙ্গে বরাবরের মতোই ভুলে ভরা থাকায় আক্ষেপও সঙ্গীই হয়ে থাকছে। এখন বাংলাদেশ কি পারবে, এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে আক্ষেপ দূর করতে? সেটি সময়েই বলে দিবে। তবে এ টেস্ট নিয়ে ফিল্ডারদের ফিল্ডিং মিস করা নিয়ে খোদ বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমেরই আছে আক্ষেপ। সঙ্গে ব্যাটিং নিয়েও হতাশা রয়েছে। টেস্ট শেষে সংবাদ সম্মেলনে মুশফিক ব্যাটিং নিয়ে বলেছেন, ‘বিরাট কোহলির মতো যদি বেসিক সবার হতো তাহলে ৫০ গড়ে রান থাকতো। তাহলে আর এতজন ব্যাটসম্যান লাগত না। ৭ উইকেটও লাগত না। চারজন ব্যাটসম্যান নিয়েই ম্যাচ ড্র করা যেত। দুর্ভাগ্যবশত আমাদের দলে কোন বিরাট কোহলি নেই।’ উইকেটটাও মুশফিকের কাছে ভিন্ন মনে হয়েছে, ‘অন্য সময়ের চেয়ে ভারতের এই উইকেট অনেক ভিন্ন। সাকিব কিন্তু একটা শটও (দ্বিতীয় ইনিংসে) বাজে খেলেনি। তারপরও সাকিব আউট হয়ে গেছে। এখানে সবাই বেসিক ক্রিকেটটাই খেলার চেষ্টা করেছে। রিয়াদ ভাই যেভাবে আউট হয়েছে, সেটাতে তার দোষ দেয়া যায় না। সাব্বির লাইন মিস করেছে। এই কন্ডিশনে আমরা আরও বেশিক্ষণ খেলার সুযোগ তৈরি করতে পারতাম। সেটা আমরা পারিনি। এই জায়গাতেই আমাদের কাজ করা দরকার। সেক্ষেত্রে এমন কন্ডিশনে আরও ২-৩টি ম্যাচ খেলা গেলে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেয়া যেত। সামনে এমন ?সুযোগ থাকলে আমি চেষ্টা করব আমার বেসিকটা যেন আরও শক্ত থাকে। যেন বেসিক দিয়ে টেস্ট ড্র করতে পারি।’ ফিল্ডিং নিয়ে আক্ষেপ করেন মুশফিক। অসন্তুষ্টও হন। বলেছেন, ‘আমরা অনেক সুযোগ পেয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো হাতছাড়া করেছি। প্রথম ইনিংসেই ১৫০-১৭০ রান বেশি দিয়ে ফেলেছি আমরা। ওদের সাড়ে ৫০০ রানের মধ্যে আটকাতে পারলে হয়তো দ্বিতীয় ইনিংসে ওরা হয়ত আরও বেশি সময় ব্যাট করত। মূলত ফিল্ডিং আমাদের পিছিয়ে দিয়েছে।’ তবে শিক্ষা পেয়েছেন মুশফিক, ‘আমরা এই টেস্ট থেকে অনেক কিছু শিখেছি, যা ভবিষ্যতে আমাদের কাজে লাগবে। উভয় ইনিংসে আমরা শতাধিক ওভার ব্যাট করেছি। তবে এখনও আমাদের কিছু জায়গায় উন্নতি করার সুযোগ আছে। আশা করছি, শ্রীলঙ্কা সফরে ত্রুটিগুলো কাটিয়ে উঠতে পারব।’ এই ভুলের সঙ্গে প্রাপ্তি রয়েছে। বাংলাদেশ যে লড়াই করেছে, তা ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলিই বলেছেন। কোহলির কথাতেই বোঝা যাচ্ছে বাংলাদেশ টেস্টে ভাল খেলেছে। তিনি বলেছেন, ‘তারা নিউজিল্যান্ডে ৫৮০ (৫৯৬) রান করেছে। ব্যাটিংয়ের ওটা ভাল উইকেট ছিল। ওখান
×