ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

‘ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমেই বাঙালী জাতিসত্তার প্রথম প্রকাশ ঘটে’

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

‘ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমেই বাঙালী জাতিসত্তার প্রথম প্রকাশ ঘটে’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের খরস্রোতা সময়ের চিত্র উঠে এসেছিল সেই সময়ের পত্রপত্রিকায়। বাঙালীর জাতীয়তাবাদের উত্থানের সেই সংবাদগুলো সাক্ষ্য দেয় ইতিহাসের। সেই ইতিহাসকে সংকলিত করে বইয়ের পাতায় তুলে এনেছেন রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের ইতিহাস গবেষক এম আর মাহবুব। তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হলো ‘সংবাদপত্রে ভাষা আন্দোলন : ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৬’ শিরোনামের গ্রন্থ। এ বইয়ে জায়গা করে নিয়েছে ভাষা আন্দোলনের শুরু থেকে অর্থাৎ ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৬ পর্যন্ত প্রকাশিত তৎকালীন পত্রপত্রিকার ভাষা আন্দোলনবিষয়ক প্রতিবেদন ও মূল্যায়নধর্মী লেখা। সন্নিবেশিত হয়েছে তৎকালীন ২৭টি দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক প্রত্রিকার লেখা। অন্তর্ভুক্ত হয়েছে আজাদ, ইনসাফ, মিল্লাত, ইত্তেহাদ, ইত্তেফাক, নওবেলাল, সৈনিক, ঢাকা প্রকাশ, সীমান্ত, বেগম, সওগাত প্রভৃতি পত্রিকায় উঠে আসা ভাষা আন্দোলনের বিবরণ। গৌরব প্রকাশন থেকে প্রকাশিত গ্রন্থটির প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয় মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে। প্রকাশনা ও মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। উদ্বোধকের বক্তব্য প্রদান করেন প্রধামন্ত্রীর তথ্যবিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী। লেখক, গবেষক ও ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিকের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ফরচুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু তাহের। সভাপতির বক্তব্যে আহমদ রফিক বলেন, ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমেই বাঙালী জাতিসত্তার প্রথম প্রকাশ ঘটে। একুশে ফেব্রুয়ারি আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানোর প্রতিবাদে জেগে ওঠা আন্দোলন পরবর্তীতে ছড়িয়ে পড়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও। আর এ আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালী জাতীয়তা বোধের বিকাশ ঘটে। আক্ষেপ করে এই ভাষাসংগ্রামী বলেন, বাঙালী হচ্ছে ইতিহাস অসচেতন এক জাতি। ওই আন্দোলনের সময় যে জায়গাটিতে গুলি চালানো হয়েছিল সেটি আজও চিহ্নিত করা হয়নি। বাহাত্তরের সংবিধানে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে যুক্ত করা হলেও এখনও সর্বস্তরে বাংলার ভাষার প্রচলন হয়নি। বইটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি ভাষা আন্দোলনের একটি আকর গ্রন্থ। পরবর্তীতে যাঁরা এ বিষয়ে কাজ করবে তাঁদের জন্য এটি অপরিহার্য অনুষঙ্গের ভূমিকা রাখবে। হাসানুল হক ইনু বলেন, ভাষা আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসংবলিত গ্রন্থটি দেশের সকল সরকারী পাঠাগার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এই কাজটি করার জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হবে। বিকৃতি থেকে ভাষাকে রক্ষার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইংরেজী ঢঙে বাংলা কথা বলার খিচুড়ি সংস্কৃতি এবং শিক্ষাকে সাম্প্রদায়িকীকরণ থেকে মুক্ত করতে হবে। ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, এই গ্রন্থটির মাধ্যমে ইতিহাসকে ধরে রাখার প্রয়াস নেয়া হয়েছে। ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই এসেছিল মুক্তিযুদ্ধ। আমরা পেয়েছিলাম স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ। তবে স্বাধীন দেশে নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে মৌলবাদ। দেশের অগ্রগতি অর্জনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী এই অশুভ শক্তিকে রুখে দিতে হবে। নন্দন মঞ্চে বসন্ত উৎসব ॥ ঋতুরাজ বসন্ত বরণে তিন দিনব্যাপী উৎসবের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। সোমবার থেকে শুরু হওয়া উৎসবের দ্বিতীয় দিন ছিল মঙ্গলবার। এদিন বিকেলে একাডেমির উন্মুক্ত নন্দন মঞ্চে নৃত্য-গীত ও কবিতায় স্বাগত জানানো হয়েছে রূপময় ঋতুকে। মুদ্রার সঙ্গে অভিব্যক্তির প্রকাশে দীপা খন্দকারের সমবেত নাচ করে একাডেমির নৃত্যদল। নাচের সঙ্গে ভেসে বেড়ায় ‘এসো এসো আমার ঘরে এসো’ ও ‘প্রেমের জোয়ারে ভাসাবি দোহারে’ গানের সুর। ‘শোনো শোনো কথাটি শোনো’ শীর্ষক গানটি দ্বৈত কণ্ঠে পরিবেশন করেন মহিউজ্জামান চৌধুরী ময়না ও শারমিন সাথী ইসলাম। একইভাবে ইয়াসমিন আলী ও এম এ মোমিন গেয়ে শোনান ‘আমি একদিন তোমায় না দেখিলে’। খুরশিদ আলমের গাওয়া গানের শিরোনাম ছিল ‘আজকে না হয় ভালোবাসো’। ফাহমিদা নবীর কণ্ঠে গীত হয় ‘লুকোচুরি লুকোচুরি গল্প’। এছাড়া একক কণ্ঠে গান শোনান মহিউজ্জামান চৌধুরী ময়না, ইয়াসমিন আলী, জিনিয়া জাফরিন, অনিমা মুক্তি গোমেজ প্রমুখ। শিল্পিত উচ্চারণে ‘বিদায় অভিসার’ কবিতাটি পাঠ করেন সৈয়দ হাসান ইমাম। লায়লা আফরোজ পঠিত কবিতার শিরোনাম ছিল ‘তিন পাহাড়ের গল্প’। এছাড়া কবিতা আবৃত্তি করেন শিমুল মুস্তাফা ও জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। আজ বুধবার তৃতীয় দিনের উৎসবে থাকবে শিল্পকলা একাডেমি ও নৃত্যশিল্পী সংস্থার যৌথ আয়োজনে দেশের স্বনামধন্য প্রায় ২০টি নৃত্য সংগঠনের পরিবেশনা। একুশের অনুষ্ঠানমালার সপ্তম দিন ॥ ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে প্রাণের ভালবাসায় স্মরণ করা হচ্ছে ভাষাশহীদদের। ভাষা আন্দোলনের স্মৃতির স্মারক কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গান কবিতায় জানানো হচ্ছে শ্রদ্ধাঞ্জলি। এখানে চলছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত অমর একুশের অনুষ্ঠান। ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’ সেøাগানে দুই সপ্তাহব্যাপী চলমান এ অনুষ্ঠানমালার সপ্তম দিন ছিল মঙ্গলবার। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত চলা এদিনের আয়োজনে পরিবেশিত হয়েছে নাচ-গান, কবিতা ও পথনাটক। এদিন দলীয় সংগীত পরিবেশন করে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ও ভিন্নধারা । একক কণ্ঠে গান শোনান কানন বালা সরকার, আকরামুল ইসলাম ও শান্তা সরকার। নাট্যকথা নামের পথনাটক পরিবেশন করে প্রাচ্যনাট। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে স্বরবৃত্ত ও সাম্প্রতিক। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন অলোক বসু, মাসুম আজিজুল বাসার ও কাজী মাহতাব সুমন। ছিল শিশু-কিশোর পরিবেশনা। বৃন্দ নৃত্য পরিবেশন করে জাগো আর্ট সেন্টার ও ভোরের পাখি নৃত্যকলা কেন্দ্র। আজ বুধবার অষ্টম দিনের অনুষ্ঠান শুরু হবে বিকেল সাড়ে চারটায়।
×