ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের জন্য এসেছে মালয়েশীয় ত্রাণ ॥ খালাস শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

রোহিঙ্গাদের জন্য এসেছে মালয়েশীয় ত্রাণ ॥ খালাস শুরু

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে নিপীড়ন নির্যাতনে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য মালয়েশিয়া থেকে এসে পৌঁছেছে জাহাজবোঝাই ত্রাণ। সঙ্গে এসেছেন সে দেশ থেকে ১৩ দেশের সংবাদকর্মী, চিকিৎসক, মানবাধিকার কর্মী ও বিভিন্ন এনজিও দু’শতাধিক প্রতিনিধি। ১৪৭২ মেট্রিক টন ত্রাণসামগ্রী নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সিসিটিতে মঙ্গলবার সকালে নোঙর করেছে ত্রাণবাহী মালয়েশীয় জাহাজ ‘নটিক্যাল আলিয়া’। সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ত্রাণসামগ্রী হস্তান্তর প্রক্রিয়া শেষে বিকেল থেকে খালাস শুরু হয়েছে। উল্লেখ্য, গেল বছরের অক্টোবর থেকে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সে দেশের সেনা, পুলিশ, সীমান্তরক্ষী এবং ধর্মীয় মৌলবাদীদের উপর্যুপুরি হামলা, নির্যাতন, হত্যা, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার ঘটনায় ৫০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা নর-নারী ও শিশুর বিশাল দল বিভিন্ন সময়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কক্সবাজার অঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছে। কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া, শহর এলাকা এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি পেরিয়ে এসব রোহিঙ্গা চট্টগ্রাম পেরিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় বিশ্বের বিবেকবান বিভিন্ন মহল থেকে রোহিঙ্গাদের প্রতি মহানুভূতির কথা মিলেছে। জাতিসংঘের উদ্যোগে তদন্ত হয়েছে মিয়ানমারে। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বাধীন কমিশনের পক্ষ থেকে কক্সবাজার এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শনে এসেছিলেন কমিশন কর্মকর্তারা। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারগণও পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের অবস্থানগত সার্বিক দিক। এ অবস্থায় মালয়েশিয়ার সরকার পালিয়ে আসা এসব রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণসামগ্রী প্রেরণের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। এর পরেই এ জাহাজটি মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে। ইয়াঙ্গুনে গত ৯ ফেব্রুয়ারি জাহাজটি পৌঁছার পর সেখানে রোহিঙ্গাদের জন্য কিছু পণ্য বিতরণ করলেও ঢালাওভাবে তা করতে পারেনি। বাধাগ্রস্ত হয় ত্রাণকর্মীসহ মালয়েশিয়ার সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী ও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদল। জাহাজটি সোমবার বহির্নোঙরে এসে পৌঁছার পর মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম বন্দরের সিসিটিতে বার্থিং পায়। এরপর শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা। বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে বাংলাদেশের পক্ষে এ ত্রাণসামগ্রী গ্রহণ করা হয়। এ অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়ার পক্ষে ঢাকায় নিযুক্ত সে দেশের রাষ্ট্রদূত নুর আশেকিন বিনতে তাইয়্যব উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে রিয়ার এডমিরাল খুরশিদ আলম (অব), চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক সামসুল আরেফিন, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন এবং বন্দরের শীর্ষ কর্মকর্তারা ত্রাণসামগ্রী গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন) জাফর আলম জনকণ্ঠকে জানান, মঙ্গলবার রাতের মধ্যেই জাহাজ থেকে পণ্যসামগ্রী খালাস সম্পন্ন করার প্রক্রিয়া চলছে। জাহাজে আসা সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের একটি অংশ কক্সবাজারের বিভিন্ন পয়েন্টে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের বর্তমান পরিস্থিতি সরেজমিন পরিদর্শনের অনুমতি দেয়া হবে। তবে তিনি বিষয়টি সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে না বলে জানান। আজ বুধবার থেকে টানা প্রায় তিনদিন এ ত্রাণসামগ্রী পর্যায়ক্রমে কক্সবাজার অঞ্চলে পৌঁছানো হবে। পরে সেখানকার প্রশাসনের গৃহীত কর্মসূচী অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের মাঝে তা বিতরণের কথা রয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এ জাহাজে প্রায় ১৫ হাজার রোহিঙ্গা পরিবারের জন্য ত্রাণসামগ্রী দিয়েছে মালয়েশীয় সরকার ও সে দেশের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থাগুলো। ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে চাল, চিনি, চা পাতা, পোশাক, ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। কক্সবাজার উপজেলার টেকনাফে সাড়ে ৫ হাজার ও উখিয়া উপজেলায় ৯ হাজার পরিবারের মধ্যে এসব পণ্যসামগ্রীগুলো বিতরণ করা হবে। বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১৬ সদস্যের একটি বিভাগীয় টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলা পর্যায়েও টিম গঠন করা হবে। উপজেলা টিমগুলোর প্রধান থাকবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। ১৫ হাজার পরিবারের জন্য ১৫ হাজার প্যাকেট আকারে এ ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হবে।
×