ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেয়া যাবে না

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেয়া যাবে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের স্বাক্ষরকারী একটি অংশ। তাই তাদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেয়া যাবে না। তবে যারা ক্ষতিগ্রস্ত তারা চাইলে এর বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতে পারে। তাদের এ বিষয়ে আইনগত পরামর্শ নেয়া উচিত। পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধে ড. ইউনূস জড়িত উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেতুর অর্থায়ন বন্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছিল। এই ষড়যন্ত্র কাউকে দুর্নীতিবাজ হিসেবে আখ্যা দেয়ার জন্য ছিল না। এটি ছিল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। আমরা যে কারও কাছে মাথা নত করি না সেটা আমাদের শিখিয়েছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কারণ, তিনি সেদিন বলেছিলেন, এই যে দুর্নীতি হয়েছিল সেটা তোমরা (বিশ্বব্যাংক) প্রমাণ কর। তোমরা যখন পদ্মা সেতুর টাকা দেবে না সেহেতু আমরা নিজের টাকায় সেতু করব। আজকে পদ্মা সেতু নিজেদের টাকায় হচ্ছে। এর চেয়ে আনন্দের কিছু নেই। দেশে স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা, আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সম্ভব সবকিছু করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সকলের মতামতের ভিত্তিতেই নাগরিকত্ব আইন করা হবে। ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ) আয়োজিত ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি মঙ্গলবার এসব কথা বলেন। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে এলআরএফের সভাপতি আশুতোষ সরকারের সভাপতিত্বে ও সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম দিদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক মনোজ কান্তি রায়, প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক কাজী আবদুল হান্নান, সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এম বদি-উজ-জামান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওয়াকিল আহমেদ হিরনসহ বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির নেতৃবৃন্দ। এ অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী তার বক্তব্য প্রদান ছাড়াও সংবাদ কর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। আইনমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যে তথ্য দিয়েছেন সেই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আমি বলতে পারি ড. ইউনূস সাহেব পদ্মা সেতু অর্থায়ন বন্ধ করার পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত।’ বিশ্বব্যাংকের তিন প্রতিনিধির সঙ্গে তখন দুদকের একটি বৈঠক হয়েছিল। সেখানে তিনি উপস্থিত ছিলেন। বিশ্বব্যাংকের একজন প্রতিনিধি বলেছিলেন, তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনকে আসামি করতে হবে। তার নাম এজাহারে দিয়ে তাকে রিমান্ডে নিলে সব তথ্য বেরিয়ে আসবে। তখন তাদের বলা হয়েছিল, দুদকের কাছে আপনার (বিশ্বব্যাংক) যে কাগজপত্র দিয়েছেন, এর বাইরে আর কোন দলিলপত্র আছে কিনা। জবাবে জানিয়েছিলেন নেই। তাদের দেয়া কাগজপত্রে দেখা গেছে, আবুল হোসেনের সঙ্গে চারজন দেখা করেছেন, কিন্তু সেখানে টাকাপয়সা দেয়া সংক্রান্ত কোন আলোচনা হয়নি।’ আদালতে মামলার জট প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, মামলার জট কমাতে তিন শ’ সহকারী বিচারক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এতদিনে আমরা যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি তা কাজে লাগিয়ে মামলা নিষ্পত্তিতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। শর্ট টার্ম, মিডটার্ম এবং লংটার্ম মেয়াদী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে উল্লেখে করে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ধীরে ধীরে বিচারক নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা করছি। গুরুত্বপূর্ণ মামলা তাড়াতাড়ি নিষ্পত্তি করতে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, আলোচিত রাজন হত্যা এবং রাকিব হত্যা মামলা অতি অল্প সময়ে বিচারিক আদালতে শেষ করা হয়েছে। যেটি বিচার বিভাগের জন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে। রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী পাপলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, শতকরা ৩০ শতাংশ স্বাধীন আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হবে। তিনি বলেন, ‘আমি প্রথম দিনই বলব না, শতভাগ হবে। ৩০ ভাগ স্বাধীন হবে আর ৭০ ভাগ পলিটিক্যাল প্রসিকিউটর নিয়োগ দেয়া হবে। সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, কিছু কিছু বিষয়ে আছে যেটা ১১৬ সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সাংঘর্ষিক বিষয়গুলো অপসারণের দাবি জানিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে একটি আবেদন করা হয়েছে। আশা করছি সাংঘর্ষিক বিষয়গুলো অপসারণ করা হলেই তার গেজেট দ্রুত প্রকাশ করা সম্ভব হবে। বিচার বিভাগরে জন্য পৃথক সচিবালয় করা হবে না কিনা জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, বিচার বিভাগের জন্য এই সরকার যা যা করা দরকার তাই করবে। বিচারিক কাজে স্বাধীনতার উপর সরকার কোন রূপ হস্তক্ষেপ করেনি, করবে না। আইন মন্ত্রণালয় শুধু বিচার বিভাগের দাফতরিক কাজটা করে থাকে। সেটা করে যাবে। বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ ও লেজিসলেটিভ এই তিনটি অঙ্গ একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
×