ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হুদা কমিশনের আজ যাত্রা শুরু

দায়িত্ব গ্রহণের এক সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচন

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

দায়িত্ব গ্রহণের এক সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচন

শাহীন রহমান ॥ নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আজ বুধবার থেকে যাত্রা শুরু হচ্ছে কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের। বিকেল তিনটায় শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে এ কমিশনের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন বিগত কমিশনগুলোর চেয়ে নতুন এই কমিশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে অনেক বেশি। দায়িত্ব নিয়েই তাদের প্রথম কাজ হবে জনগণের আস্থা অর্জন করার মধ্য দিয়ে সমালোচনার জবাব দেয়া। এজন্য কোন চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে সুষ্ঠুৃ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পরিচালনায় দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে। রকীব কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়ে আসায় রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ গত ৬ ফেব্রুয়ারি কেএম নূরুল হুদা নেতৃত্বে গঠন করেন নতুন নির্বাচন কমিশন। এই কমিশনের অন্য সদস্যের মধ্যে রয়েছেন সাবেক সচিব মাহবুব তালুকদার, সাবেক অতিরিক্ত সচিব রফিকুল ইসলাম, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ বেগম কবিতা খানম ও অবসরপ্রাপ্ত সামরিক অফিসার ব্রিগেডিয়ার জেলারেল অব শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা আজ সুপ্রীমকোর্টের জাজেজ লাউঞ্জে নবনিযুক্ত এই নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের শপথ গ্রহণ করাবেন। শপথ নেয়ার পর কমিশন আগারগাঁওয়ে অবস্থিত নির্বাচন কমিশনের গিয়ে তাদের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। দায়িত্ব নেয়ার পরপরই বিকেল ৫টায় তারা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হচ্ছেন। নূরুল হুদা হচ্ছেন দেশের ইতিহাসে ১২তম প্রধান নির্বাচন কমিশনার যার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হচ্ছে আজ বুধবার। মঙ্গলবার বিদায়ী কমিশনের সদস্য মোঃ শাহনেওয়াজের বিদায়ের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে রকীব কমিশনের মেয়াদ। গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিদায় নিয়েছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকীব উদ্দিন আহমদসহ কমিশনের অন্য তিন সদস্য আব্দুল মোবারক, বি. জে. (অব) জাবেদ আলী ও মোঃ আবু হাফিজ। মঙ্গলবার বিদায়ের আগে শেষ অফিস করেছেন শাহনেওয়াজ। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাষ্ট্রপতি গঠিত সার্চ কমিটির বাছাইয়ের মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হয় রকীব উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বধীন নির্বাচন কমিশনের। কমিশনে তাদের ৫ বছরের মেয়াদকালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন মিলে মোট ৭ হাজার ৪শ’ ৭টির বেশি নির্বাচন পরিচালনা করেছেন। এদিকে কেএম নূরুল হুদা কমিশনকে দায়িত্ব নিয়েই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। দায়িত্ব গ্রহণের পরই আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি রাঙামাটির বাঘাইছড়ি পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ৬ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে দেশের ১৮টি উজেলায় দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচন। এর মধ্যে তিন উপজেলায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন এবং অন্য ১৫ উপজেলায় চেয়ারম্যান ও ভাইসচেয়ার পদে শূন্য আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২২ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে গাইবান্ধা-১ আসনের উপনির্বাচন। বিগত কমিশনের এসব নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে গেছে। এর মধ্যে উপজেলা নির্বাচনে প্রািতদ্বন্দ্বী বিএনপি, আওয়ামী লীগসহ ইসির নিবন্ধিত অন্য রাজনৈতিক দলগুলোও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে প্রার্থী দিয়েছেন। এছাড়াও কমিশনকে ক্ষমতা নিয়েই কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে হবে। কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের মাধ্যমেই দেশের জনগণের আস্থা অর্জনের পরীক্ষা দিতে হবে। কেএম নূরুল হুদা কমিশনের অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সংবিধান অনুযায়ী এ নির্বাচন হবে দলীয় সরকারের অধীনেই। এ কারণে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা করাই হবে এই ইসির আসল চ্যালেঞ্জ। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে নির্বাচন করতে হলে ইসির মেরুদ- শক্ত করতে হবে। কোন চাপের কাছেই তারা নতিস্বীকার করবেন না। এছাড়া একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন ইসি কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ রংপুর সিটি নির্বাচন, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল ও গাজীপুর সিটি নির্বাচন পরিচালনা করতে হবে। এছাড়া তাদের ৫ বছরের মেয়াদে সব নির্বাচনই একবার করে পরিচালনা করতে হবে। তাদের নির্বাচন পরিচালনার ওপর নির্ভর করছে জনগণের আস্থা তারা কতটুকু অর্জন করতে পারবেন। ইতোমধ্যে কেএম নূরুল হুদাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেয়ায় বিএনপিসহ বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনা শুরু হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে তাকে সরকার দলীয় আদর্শ ও সরকারের নির্দেশ বাস্তবায়নে তাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। তাদের অভিযোগ এ ইসির অধীনে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। এজন্য দায়িত্ব না নিয়ে পদ থেকে স্বেচ্ছায় সরে যাওয়ার জন্য বার বার দলটির পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হচ্ছে। যদি দলের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে এই ইসির অধীনেই ৬ মার্চের উপজেলা নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে রাষ্ট্রপতি যাকে নিয়োগ দিয়েছেন তিনি ওই পদের যোগ্য নন। এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি যাবে কি না সেটা অনেক পরের বিষয়। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিয়ে আসছে, সামনেও নির্বাচনেও বিএনপি অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে উল্লেখ করেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা দেশের ১২ তম প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে আজ থেকে দায়িত্ব পালন শুরু করছেন। এর আগে স্বাধীনতার পর থেকে দেশে মোট ১১ জন সিইসি দায়িত্ব পালন করেছেন। যাদের মধ্যে সাতজন ছিলেন সুপ্রীমকোর্টের বিচারক বা সাবেক বিচারক। চারজন ছিলেন সাবেক আমলা। আর তাদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন আরও ২৩ জন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ১১ জনের মধ্যে এ পর্যন্ত ৫ জন প্রধান নির্বাচন কমিশনার তাদের মেয়াদের পূর্ণ দায়িত্ব সম্পন্ন করেছেন। সংবিধান অনুযায়ী একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য কমিশনারদের মেয়াদ ৫ বছর। সিইসির দায়িত্বে বিচারপতিদের মধ্যে মোঃ ইদ্রিস, এটিএম মসউদ, সাবেক আমলাদের মধ্যে এমএ সাঈদ ও এটিএম শামসুল হুদা, সদস্য সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকীব উদ্দিন আহমদও ৫ বছর মেয়াদ পূর্ণ করতে পেরেছেন। অন্যদের বিভিন্ন কারণে দায়িত্ব সম্পন্ন না করেই কমিশন থেকে বিদায় নিতে হয়েছে। নূরুল হুদাও প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার আগে ছিলেন সরকারের একজন উচ্চপদস্থ প্রশাসনিক কর্মকর্তা। ১৯৭৩ ব্যাচের সরকারী কর্মকর্তা কে এম নূরুল হুদা দীর্ঘদিন ওএসডি থাকার পর ২০০৬ সালে সচিব হিসেবে অবসরে যান। নূরুল হুদার বাড়ি পটুয়াখালীতে। ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং সংসদ সচিবালয় যুগ্মসচিব ও অতিরিক্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। কমিশন সূত্রে জানা গেছে সাবেক ১১ প্রধান নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে ছয়জন স্বাধীনতাপরবর্তী দুই যুগ টানা দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে ছিলেন বিচারপতিরা। এরপর ইসিতে শুরু হয় সাবেক আমলাদের নেতৃত্ব। মাঝখানে ২০০৫ সালে এক বছর সাত মাস একজন বিচারপতি ছাড়া গত প্রায় ২০ বছর সাবেক আমলারাই প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। স্বাধীনতার পর দেশে প্রথম প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নেন বিচারপতি মোঃ ইদ্রিস। তিনি দায়িত্বে ছিলেন ৭ জুলাই ১৯৭২ থেকে ৭ জুলাই ১৯৭৭ পর্যন্ত। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের জুলাই মাসে প্রথম প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি। ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ স্বাধীনতার পর প্রথম সংসদ নির্বাচন তার অধীনের সম্পন্ন হয়। দুই সদস্যের ওই কমিশনে সিইসি ইদ্রিসের সঙ্গী ছিলেন নূর মোহাম্মদ খান। বিচারপতি কেএম নূরুল ইসলাম দ্বিতীয় সিইসি হিসেবে দায়িত্ব নেন ৮ জুলাই ১৯৭৭ সালে। তিনি দায়িত্ব পালন করেন ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৫ পর্যন্ত। নূরুল ইসলাম সিইসির দায়িত্বে ছিলেন সাত বছর। সে সময় সামরিক শাসন থাকায় তার সাংবিধানিক মেয়াদ শুরু হয় আরও পরে। ওই মেয়াদের পাঁচ বছর পূর্ণ না করেই একেএম নূরুল ইসলাম প্রথমে এরশাদ সরকারের আইনমন্ত্রী ও পরে উপ রাষ্ট্রপতি হন। ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন হয় সিইসি নূরুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে। দুই সদস্যের ওই কমিশনে নূরুল ইসলামের সঙ্গী ছিলেন আব্দুল মুমিত চৌধুরী। এরশাদের সামরিক শাসনের অধীনে দেশে তৃতীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান বিচারপতি চৌধুরী এটিএম মসউদ। তিনি দায়িত্ব পালন করেন ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৫ থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯০ পর্যন্ত। বিচারপতি চৌধুরী এটিএম মসউদের অধীনেই ১৯৮৬ সালের ৭ মে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ তার অধীনে হয় চতুর্থ সংসদ নির্বাচন। বিচারপতি মসউদ ইসির দায়িত্বে প্রথমে বিচারপতি সুলতান হোসেন খানকে সঙ্গী হিসেবে পেলেও চতুর্থ সংসদ নির্বাচন তাকে একাই করতে হয়। দেশের চতুর্থ প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন বিচারপতি সুলতান হোসেন খান। তিনি দায়িত্বে ছিলেন ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯০ থেকে ২৪ ডিসেম্বর ১৯৯০ পর্যন্ত। আগের ইসির কমিশনার বিচারপতি সুলতান হোসেন খানকেই ১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিইসি নিয়োগ করেন এরশাদ। ওই বছর গণআন্দোলনের মুখে এশাদ সরকার সরে যেতে বাধ্য হলে প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে সাহাবুদ্দীন আহমদ বিচারপতি নঈম উদ্দিন আহমেদ ও বিচারপতি আমিনুর রহমান খানকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেন। ১০ মাসে কোনো জাতীয় নির্বাচন না করেই ২৪ ডিসেম্বর সরে যেতে বাধ্য হন এরশাদের নিয়োগ পাওয়া সিইসি বিচারপতি সুলতান হোসেন খান। পঞ্চম সিইসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিচারপতি মোঃ আব্দুর রউফ ২৫ ডিসেম্বর ১৯৯০ থেকে ১৮ এপ্রিল ১৯৯৫ পর্যন্ত। পঞ্চম সংসদ নির্বাচনের আগে সেই অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ই দেশে প্রথমবারের মতো তিন সদস্যেরর ইসি পায় দেশ। বিচারপতি সুলতান হোসেন খান সরে যাওয়ার পরদিন সিইসি হিসেবে যোগ দেন বিচারপতি মোঃ আব্দুর রউফ। নির্বাচন কমিশনার আমিনুর রহমান খান কয়েক দিনের মাথায় পদত্যাগ করলে তার জায়গায় আসেন বিচারপতি সৈয়দ মিছবাহ উদ্দিন হোসেন। তার সঙ্গী হন আগের কমিশনার বিচারপতি নঈম উদ্দিন আহমেদ। ওই কমিশনের অধীনে পঞ্চম সংসদ নির্বাচন হয় ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি। ১৯৯৪ সালে বিএনপির শাসনামলে মাগুরা উপনির্বাচন নিয়ে বিতর্কিত হন সিইসি রউফ। মেয়াদ শেষ হওয়ার আট মাস আগেই সিইসির পদ ছেড়ে দেন। ষষ্ঠ সিইসি হিসেবে বিচারপতি একেএম সাদেক দায়িত্ব পালন করেন ২৭ এপ্রিল ১৯৯৫ থেকে ৬ এপ্রিল ১৯৯৬ পর্যন্ত। বছর খানেকের জন্য দায়িত্ব পালন করা বিচারপতি সাদেক সঙ্গী পান আরেক বিচারপতি মোঃ আব্দুল জলিলকে। তাদের অধীনেই ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বহু বিতর্কিত ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন হয়। তবে স্বল্প সময় দায়িত্ব পালন করা সাদেকের ইসিই দেশে প্রথমবারের মতো নির্বাচনী আচরণ বিধি চালু করে দিয়ে যায়। সপ্তম সিইসি মোহাম্মদ আবু হেনা দায়িত্ব পালন করেন ৯ এপ্রিল ১৯৯৬ থেকে ৮ মে ২০০০ পর্যন্ত। তার সঙ্গী হন আবিদুর রহমান ও মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী। এই কমিশনের অধীনেই ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন হয়। ২০০০ সালে এ কমিশনে সঙ্গে যুক্ত হন তৃতীয় নির্বাচন কমিশনার শফিউর রহমান। প্রথমবারের মতো ইসি চার সদস্য পায়। আবু হেনার কমিশন দলীয় সরকারের অধীনে ১৯৯৯ সালে টাঙ্গাইল (সখিপুর-বাসাইল) উপ নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির জন্য সমালোচিত হয়। এরপর মেয়াদ পূর্তির এক বছর আগে সেই উপ নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট না করেই সরে যান সিইসি আবু হেনা। অষ্টম সিইসি এম এ সাঈদ দায়িত্ব পালন করেন ২৩ মে ২০০০ থেকে ২২ মে ২০০৫ পর্যন্ত। সাঈদ কমিশনের অধীনেই ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন হয়। ওই কমিশনে এম এ সাঈদের সঙ্গী ছিলেন এম এম মুনসেফ আলী ও এ কে এম মোহাম্মদ আলী। দুই সরকারের সময়ে চাপের মধ্যে থাকতে হলেও পুরো মেয়াদ দায়িত্ব পালন করেই এ কমিশন বিদায় নেয়। বিএনপির ওই সরকারের সময়ই প্রথমবারের মতো ইসির নিজস্ব কর্মকর্তা স ম জাকারিয়াকে ইসি সচিব নিয়োগ করা হয়। নবম সিইসি বিচারপতি এমএ আজিজ। দায়িত্ব পালন করেন ২৩ মে ২০০৫ থেকে ২১ জানুয়ারি ২০০৭ পর্যন্ত। দেশে রাজনৈতি সংকটের মধ্যে পড়ে নবম সংসদ নির্বাচনের জন্য ঘোষিত তফসিল বাতিল হয়ে গেলে ২১ জানুয়ারি সিইসি আজিজ এবং ৩১ জানুয়ারি বাকি পাঁচ কমিশনার পদত্যাগ করেন। দশম সিইসি এটিএম শামসুল হুদা। দায়িত্ব পালপালন করেন ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০০৭ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১২ পর্যন্ত। কমিশনার হিসেবে তার সঙ্গী হন মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন ও এম সাখাওয়াত হোসেন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন করে শামসুল হুদার কমিশন। একাদশ সিইসি কাজী রকীব উদ্দীন আহমদ দায়িত্ব পালন করেন ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১২ থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ পর্যন্ত। এরপর আজ বুধবার দায়িত্বে আসছে কেএম নূরুল হুদার কমিশন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ কমিশনের প্রথম কাজ হবে জনগণের আস্থা অর্জন করা।
×