ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

তবু আলোচনায় টেনিসকন্যা বাউচার্ড

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

তবু আলোচনায় টেনিসকন্যা বাউচার্ড

টেনিস কোর্টে হঠাৎ করেই পাদপ্রদীপের আলোয় চলে আসেন ইউজেনি বাউচার্ড। ২০১৪ সালে মৌসুমের প্রথম দুই গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্ট অস্ট্রেলিয়ান ওপেন এবং ফ্রেঞ্চ ওপেনেই সেমিফাইনালে জায়গা করে নেন তিনি। এরপর উইম্বলডনে তো কানাডার প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ফাইনাল খেলে গড়েন নতুন ইতিহাস। তবে, দুর্ভাগ্য তার পারফরম্যান্সের সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেননি আর। কিন্তু তারপরও গত কয়েক মৌসুম ধরেই টেনিস কোর্টে আলোচিত নাম বাউচার্ড। সর্বশেষ আলোচনায় এলেন বাজি ধরে! এনএফএল ফাইনালে আটলান্টা ফ্যালকনের বিপক্ষে তখন ২১-০ পয়েন্টে পিছিয়ে নিউ ইংল্যান্ড প্যাট্রিয়ট। টম ব্র্যাডির মতো কিংবদন্তি কোয়ার্টারব্যাক থাকলেও প্যাট্রিয়ট ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছিল ম্যাচ থেকে। হিউস্টনের এনআরজি স্টেডিয়ামে শিরোপা জয়ের আগাম উৎসবও করছিল ফ্যালকন সমর্থকরা। শতভাগ নিশ্চিত জয় ভেবে টুইট করেন টেনিসের গ্ল্যামারগার্ল ইউজেনি বাউচার্ড, ‘আমি নিশ্চিত আটলান্টা জিততে যাচ্ছে।’ কিছুক্ষণ পর আরেকটি টুইট করে জানালেন, ‘কেবল ভবিষ্যদ্বাণী করলাম।’ মানতে না পেরে এক মার্কিন ফুটবল লীগ ভক্তের টুইট, ‘প্যাট্রিয়ট জিতলে আমার সঙ্গে ডেটিংয়ে যাবে?’ ব্র্যাডির দল তখন আরও পিছিয়ে ২৮-৩ পয়েন্টে। স্কোর দেখে খেলার ছলে রাজি হয়ে যান বাউচার্ড। এরপর একটু একটু করে ম্যাচে ফিরতে থাকে প্যাট্রিয়ট। তাদের এগোতে দেখে বাউচার্ডকে কটাক্ষও করেন অনেকে। একজন জানতে চান, ‘স্নায়ুর চাপে নাকি।’ জবাবে বাউচার্ড বলেন, ‘কিছুটা তো বটেই।’ এরপর অবিশ্বাস্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে প্যাট্রিয়ট সুপার বোল ফাইনালটা জিতে যায় ৩৪-২৮ পয়েন্টে। আর মার্কিন ফুটবল লীগে একমাত্র কোয়ার্টারব্যাক হিসেবে টম ব্র্যাডি ইতিহাসে নাম লেখান পাঁচটি সুপার বোল জিতে। বাজিতে হেরে অপরিচিত সেই টুইটার ব্যবহারকারীর সঙ্গে অভিসারে যেতে রাজি হন কানাডিয়ান তারকাও, ‘হ্যাঁ, আমি ডেটে যাব। কথা দিলে সেটা রাখতেও জানি।’ সম্মতি পেয়ে বাউচার্ডকে সেই টুইটার ব্যবহারকারীর আমন্ত্রণ, ‘শিকাগোয় থাকি। এখানকার মিসৌরি স্কুলে চলে এসো। এরপর তোমার যেখানে খুশি দু’জন মিলে সেখানেই যাব।’ এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে বেশ ভালই শিক্ষা পেয়েছেন বাউচার্ড। কানাডিয়ান তারকা টুইটার বার্তায় তাও উল্লেখ করেছেন, ‘খুব শিক্ষা হলো। আর কখনও টম ব্র্যাডির দলের বিপক্ষে বাজি ধরব না।’ ২০১৪ সালের কথা। মেজর কোন শিরোপা জিততে পারেননি সেবার। কিন্তু তারপরও তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড় হিসেবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন মৌসুমের পুরোটা সময়জুড়েই। সে বছরের প্রথম গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্ট অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের সেমিফানালে উঠেন তিনি। চীনার লি নার কাছে হেরে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের শেষ চার থেকে বিদায় নেন পাঁচ ফুট ১০ ইঞ্চি উচ্চতার এই টেনিস তারকা। ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের সৌজন্যে ফ্রেঞ্চ ওপেনেও শেষ চারের টিকেট নিশ্চিত করেন বাউচার্ড। এবার থাকে থামিয়ে দেন রাশিয়ান টেনিসের গ্ল্যামারগার্ল মারিয়া শারাপোভা। তারপরও দমে যাননি তিনি। মৌসুমের তৃতীয় গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্ট উইম্বল্ডনে নিজেকে আরও একধাপ এগিয়ে নেন প্রতিভাবান এই তারকা। প্রথম কানাডিয়ান খেলোয়াড় হিসেবে উইম্বলডনের ফাইনালে উঠার বিস্ময়কর কীর্তিও গড়েন তিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্য। শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে সেবার চেক প্রজাতন্ত্রের পেত্রা কেভিতোভার কাছে পরাজয় মানেন বাউচার্ড। মৌসুমের প্রথম তিন মেজর টুর্নামেন্টের তিনটিতেই ব্যর্থ। তারপরও বিশ্ব টেনিসকে চমকে দিয়ে র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ পাঁচে জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। তবে তিন বছর আগে দুর্দান্ত শুরুর সেই চমক খুব বেশি দিন ধরে রাখতে পারেননি এই কানাডিয়ান। টেনিস কোর্টে গত তিনটি বছর তো একেবারেই বাজেভাবে কেটেছে তার। মেজর কোন টুর্নামেন্টেই নিজেকে মেলে ধরতে ব্যর্থ হন তিনি। যে কারণেই শীর্ষ পাঁচ তো দূরের কথা! বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষ চল্লিশেও নেই তার নাম। এই মুহূর্তে টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের ৪৩তম স্থানে রয়েছেন বাউচার্ড। শুধু টেনিস কোর্টে নয়, ক্যারিয়ারের শুরুতে মডেল হিসেবেও দ্যুতি ছড়ান তিনি। তার খেলার কৌশল, অসাধারণ ব্যক্তিত্ব ও সুন্দর মুখ অবয়বের জন্য মডেলিংয়েও নাম করেন বাউচার্ড। কিন্তু কানাডিয়ান এই গ্ল্যামারগার্ল টেনিস কোর্টে নিষ্প্রভ থাকার কারণে মডেলিং থেকেও যেন আড়ালে হারিয়ে গেলেন। নতুন বছরের প্রথম গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্ট অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে বাউচার্ডকে নিয়ে এবার অনেকেই প্রত্যাশা করেছিলেন একটু বেশি। কিন্তু টুর্নামেন্টের তৃতীয় রাউন্ড থেকেই বিদায় নেন তিনি। আমেরিকার প্রতিভাবান খেলোয়াড় কোকো ভেন্ডেওয়েঘের কাছে ৬-৪, ৩-৬ এবং ৭-৫ সেটে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়েন ইউজেনি বাউচার্ড। এদিকে টেনিস কোর্ট থেকে ১৫ মাসের জন্য নিষিদ্ধ হয়ে বাউচার্ডের মতো আলোচনায় রয়েছেন মারিয়া শারাপোভাও। ডোপ কেলেঙ্কারি থেকে মুক্তি পেয়ে দ্বিতীয়বারের মতো কোর্টে খেলার আমন্ত্রণ পেয়েছেন রাশিয়ান টেনিসের এই গ্ল্যামারগার্ল। আগামী ৫ মে থেকে শুরু হবে মাদ্রিদ ওপেনে। সেই টুর্নামেন্টে খেলার জন্যই ডাক পেয়েছেন বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের সাবেক এই নাম্বার ওয়ান তারকা। এর আগে স্টুটগার্ট গ্র্যান্ড প্রিক্সে খেলার ডাক পান তিনি। পাঁচবারের গ্র্যান্ডসøাম জয়ী শারাপোভা ১৫ মাস সবধরনের প্রতিযোগিতামূলক টেনিস থেকে নির্বাসিত হন। তবে ফিরেই একের পর এক সুসংবাদ পাচ্ছেন। আর এরই সুযোগে নিজেকেও প্রস্তুত করছেন তিনি। জিমে কঠোর পরিশ্রম করছেন। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ইন্সটাগ্রামে একটি ছোট ভিডিও পোস্ট করেন ২৯ বছর বয়সী শারাপোভা। যেখানে দেখা যায় জিমে কঠোর পরিশ্রম করছেন তিনি। ভিডিওর ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, কিছুটা ব্যালেন্স করে নিলাম। কঠোর পরিশ্রমের পাশাপাশি ইয়গাও সেরেছি। ২০০৪ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে উইম্বল্ডন ওপেন জিতে হইচই ফেলে দেন শারাপোভা। দু’বছর পরই জেতেন ইউএস ওপেন। ২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের শিরোপা ঘরে তোলেন। আর ২০১২ সালে ফ্রেঞ্চ ওপেনে জিতে ক্যারিয়ার সøাম পূর্ণ করেন। দু’বছর পরই ফ্রেঞ্চ ওপেনের দ্বিতীয় ট্রফি জেতেন তিনি।
×