ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শ্রাবণী আক্তার সান

কোহলি-অশ্বিনের অনন্য রেকর্ড

প্রকাশিত: ০৪:৫৬, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

কোহলি-অশ্বিনের অনন্য রেকর্ড

আলোচিত হায়দরাবাদ টেস্টে বাংলাদেশকে ২০৮ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে ১-০ তে সিরিজ জিতে নিয়েছে ভারত। ম্যাচে দুটি নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন স্বাগতিক দুই তারকা বিরাট কোহলি ও রবিচন্দ্রন অশ্বিন। প্রথম ইনিংসে অন্যবদ্য ২০৪ রান করে টানা চার সিরিজে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন অধিনায়ক কোহলি, আর মাত্র ৪৫ টেস্টেই আড়াই শ’ উইকেটের ল্যান্ডমার্ক ছুঁয়েছেন অফস্পিনার অশ্বিন। টেস্ট ইতিহাসের দুটিই নতুন রেকর্ড। স্যার ডন ব্রাডম্যান ও রাহুল দ্রাবিড়কে টপকে নতুন রেকর্ড গড়েন কোহলি। সাবেক দুই গ্রেটের এত দিন টানা তিন সিরিজে ডাবল সেঞ্চুরি ছিল। সংখ্যাটাকে চারে নিয়ে গেছেন ‘সুপার’ কোহলি! জুলাই ২০১৬ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০১৭- টানা চার সিরিজে যথাক্রমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ (২০০), নিউজিল্যান্ড (২১১), ইংল্যান্ডের (২৩৫) পর বাংলাদেশের বিপক্ষেও হাঁকালেন ডাবল সেঞ্চুরি। ক্যারিয়ারে ৫৪ টেস্টে কোহলির এটি ১৬তম সেঞ্চুরি। চার ডাবল সেঞ্চুরির সব কটিই অধিনায়ক হওয়ার পরে! অধিনায়ক হিসেবে চারটি করে ডাবল সেঞ্চুরি আছে ব্র্যাডম্যান, মাইকেল ক্লার্ক ও গ্রায়েম স্মিথের। পাঁচ ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে এ তালিকায় সবার ওপরে ক্যারিবীয়ান গ্রেট ব্রায়ান লারা। রেকর্ডটি নিজের করে নিতে ‘অধিনায়ক’ কোহলির চাই আর দুটি ‘মাত্র’ ডাবল সেঞ্চুরি। যা ফর্মে আছেন, হয়তো অচিরে এটিও হয়ে যাবে! নেতৃত্বের বিষয়টি বাইরে রাখলে টেস্টে ছয়টি করে ডাবল সেঞ্চুরি (সংখ্যা) হাঁকিয়ে ভারতীয়দের মধ্য সবার ওপরে বিরেন্দর শেবাগ ও শচীন টেন্ডুলকর। রাহুল দ্রাবিড়ের সংখ্যাটা পাঁচ। আর সুনীল গাভাস্কার দুইশ’ পেরোনো স্কোর পেয়েছেন চার বার। বিশ্বের মাত্র তৃতীয় ‘অধিনায়ক’ ও দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে বাংলাদেশের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরি পেলেন কোহলি। আগের দুই অধিনায়ক স্টিফেন ফ্লেমিং (২০২, ২০০৪) ও গ্রায়েম স্মিথ (২৩২, ২০০৮)। এতদিন ভারতীয় হিসেবে বাংলাদেশের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরি ছিল কেবল শচীনেরই (২৪৮, ২০০৪)। ক্রিকেটের জীবন্ত কিংবদন্তীর যেটি ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসও। তাই নয়, এত দিন সর্বোপরি ঘরের মাঠে এক মৌসুমে (যে কোন দেশের আন্তর্জাতিক হোম সিজন) সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ডটা ছিল বিরেন্দর শেবাগের। সাবেক ভারতীয় ‘বীরু’ ২০০৪-০৫ মৌসুমে করেছিলেন ১১০৫ রান (১৭ ইনিংসে)। এবার সেটিও ছাড়িয়ে গেলেন কোহলি। ১৫ ইনিংসে তার রান এখন ১১৬৮। ওই মৌসুমে শেবাগের গড় ছিল ৬৯.০৬, কোহলির এ পর্যন্ত সেটি ৮৯.৮৪! হায়দরাবাদ টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে কোহলি-অজিঙ্কা রাহানের চতুর্থ উইকেট জুটিতে এসেছে ২২২ রান। এ নিয়ে কোহলি-রাহানের চতুর্থ উইকেট জুটিতে রানের ‘ডাবল সেঞ্চুরি’ তিন বার। ২০১৩ সালের পর বিশ্বের আর কোন দেশের কোন জুটিতে এত বার ২০০ পেরোয়নি। এছাড়া ভারতের ‘অধিনায়ক’ হিসেবে টানা ১৯ টেস্টে অপরাজিত থাকার রেকর্ডও গড়েছেন বিরাট কোহলি। টানা ১৮ টেস্টে অপরাজিত থেকে এর আগে যেটি ছিল গ্রেট সুনীল গাভাস্কারের দখলে। অধিনায়ক হিসেবে কপিল দেব অপরাজিত ছিলেন ১৭ টেস্টে। টানা ১৯ ম্যাচ অপরাজিত থাকার পাশাপাশি কোহলির নেতৃত্বে টানা ছয়টি সিরিজও জিতেছে ভারত। এই অর্জনে ভারতের সাবেক টেস্ট অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনিকে পেছনে ফেলেন কোহলি। ২০০৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত টানা পাঁচটি টেস্ট সিরিজ জিতেছিল ধোনির ভারত। আর ২০১৫ সালের আগস্ট থেকে কোহলির নেতৃত্বে টানা ছয়টি সিরিজ জিতল। কোহলির নেতৃত্বে টানা ১৯ ম্যাচ অপরাজিত থাকায় সর্বোপরি টেস্ট ইতিহাসে বিশ্ব রেকর্ডের তালিকায় পঞ্চমস্থানে নাম উঠেছে ভারতের। টানা সবচেয়ে বেশি ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ডটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত টানা ২৭ ম্যাচ অপরাজিত ছিল ক্যারিবীয়রা। এরপরই আছে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। ১৯৬৮ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত টানা ২৬ ম্যাচ অপরাজিত ছিল ইংলিশরা। আর ১৯৪৬ থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত টানা ২৫ এবং ২০০৫ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দুই বার টানা ২২ ম্যাচ হারেনি অস্ট্রেলিয়া। অন্যদিকে বল হাতে নতুন ইতিহাস গড়েন অশ্বিন। টেস্ট ফরমেটে সবচেয়ে কম ম্যাচ খেলে ২৫০ উইকেট শিকারের বিরল কৃতিত্ব দখলে নিয়েছেন ভারতীয় স্পিনার। স্পিনবান্ধব হোম ভেন্যুর উইকেটে ধারাবাহিক সাফল্যে ভর দিয়ে তিনি ক্যারিয়ারের ৪৫তম টেস্টেই পৌঁছে গেছেন ২৫০ উইকেট নেয়ার এলিট ক্লাবে। হায়দরাবাদ টেস্টের চতুর্থ দিনে টাইগার ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিমকে আউট করেই অশ্বিন মেতেছেন বাঁধভাঙা উৎসবে। তার সবচেয়ে কম ম্যাচ খেলে ২৫০ ক্লাবে পা রাখায় গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছে হোম ভেনুর ২৮ টেস্টের ১৮৫ উইকেট। দেশের বাইরে খেলা ১৭ টেস্টে অশ্বিন পেয়েছেন ৬৭ উইকেট। হায়দরাবাদ টেস্টে অশ্বিনের বিরল কৃতিত্বের পরিসংখ্যান নিয়েই বিশ্বজুড়ে চলছে আলোচনা। ৪৫ টেস্টেই ক্যারিয়ারের ২৫০তম উইকেটের দেখা পেলেন আশ্বিন। তার আগে কেউ-ই ৪৫ ম্যাচে ২৫০ ক্লাবে পা রাখতে পারেননি। অশ্বিন রেকর্ড গড়েছেন কিংবদন্তী পেসার ডেনিস লিলির ৪৮ টেস্টের ২৫০ উইকেট দখলের কৃতিত্বকে পেছনে ফেলে। ২৩২ উইকেটের বেশি কোন বোলার অর্জন করতে পারেননি টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম ৪৫ খেলায়। ইতিহাসের প্রথম বোলার হিসেবে ক্যারিয়ারের প্রথম ৪৫তম টেস্টে অশ্বিনের উইকেট সংখ্যা ২৫২-তে উন্নীত হয়েছে। দ্বিতীয় ইনিংসে নিয়েছেন আরও ৪ উইকেট। ৪৫ টেস্টে তার মোট উইকেট এখন ২৫৪। অশ্বিনের আগে ৫৫ ম্যাচে অংশগ্রহণে ভারতের সবচেয়ে দ্রুততম বোলার হিসেবে টেস্ট ফরম্যাটে ২৫০ উইকেট শিকারের কৃতিত্ব ছিল বর্তমান কোচ অনিল কুম্বলের দখলে। তাকে ১০ ম্যাচের ব্যবধানে পেছনে ফেলে অশ্বিন টেস্ট ফরম্যাটে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন। একজন বোলার অশ্বিনের চেয়ে কম সময়ে (ক্যারিয়ারের বয়স) টেস্ট ফরম্যাটের ২৫০ উইকেটের ক্লাবে পা রাখার সৌভাগ্য পেয়েছেন। চার বছর ৩৪৫ দিনে ইংল্যান্ডের স্পিনার গ্রায়েম সোয়ান পৌঁছে যান পাঁচ দিনের ফরম্যাটের ২৫০ উইকেট শিকারের এলিট ক্লাবে। ওই একই কৃতিত্ব অর্জনে অশ্বিনের লেগেছে পাঁচ বছর ৯৫ দিন।
×