ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নৌ চলাচলে ঝুঁকি

বঙ্গোপসাগরে ডুবোচর

প্রকাশিত: ০৪:৪৬, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

বঙ্গোপসাগরে ডুবোচর

মেজবাহউদ্দিন মাননু, কলাপাড়া থেকে ॥ কুয়াকাটা সৈকতের শূন্য পয়েন্টর দু’দিকে বিশাল সাগরের ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে জেগে উঠেছে অর্ধশত ডুবো কিংবা জেগে ওঠা চর। দুই থেকে দশ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে জেগে ওঠা একেকটি চর এখন যেন আরেক বাংলাদেশের অবস্থানকে জানান দিচ্ছে। এসব চরে এখনোই জেলেরা ট্রলার কিংবা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় অবস্থান করে। থাকে শীতের পুরো মৌসুম। এসব চরে নজর পড়েছে ভূমিদস্যু কিংবা জোতদারদের। এসব চরকে আগেভাগেই কাগজপত্রে বন্দোবস্ত নেয়ার প্রক্রিয়াও চালাচ্ছে দখলবাজ চক্র। এসব চরের কারণে সাগরে নৌচলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। জেলেরা জানান, এসব চরের কারণে সাগরের এই অঞ্চলে ইলিশসহ বিভিন্ন ধরনের মাছ আহরণ করতে সমস্যা হচ্ছে। এমনকি ইলিশের বিচরণক্ষেত্রও পরিবর্তন হওয়ার শঙ্কা করছেন জেলেরা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সুপার সাইক্লোন সিডরের পর থেকে সাগরে এভাবে চর পড়তে থাকে। প্রথমত, এসব ডুবো চর ছিল। ভাটার সময় হাঁটুজল থাকত চরগুলোতে। যা এখন জোয়ারের সময়ও জেগে থাকছে। তুফাইন্যার বনাঞ্চল ঘেরা চরের দুই কিমি দক্ষিণে অন্তত ছোট-বড় সাতটি চর উঠেছে। এসব চরে এখন জেলেরা শীত মৌসুমে নৌকা কিংবা ট্রলার বেঁধে অবস্থান করে। এ চরের কারণে এখন নৌযান চলাচল করতে হয় অন্তত ৩০ কিলোমিটার গভীর সাগরের মধ্য দিয়ে। এভাবে চর হেয়ার, চরকাশেম, সোনার চর, কাউয়ারচর, গঙ্গামতির চর, কুয়াকাটাসহ রামনাবাদ মোহনা, আন্ধারমানিক মোহনা থেকে সাগর অভ্যন্তরে অসংখ্য ছোট-বড় চর জেগে উঠেছে। এসব চর জেগে ওঠায় বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ এলাকায় এখন মাছ ধরার ট্রলার চলাচল পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। সমুদ্র পথ নৌচলাচলও চরম ঝুঁকির কবলে পড়েছে। গভীর সমুদ্রের কোথাও নির্বিঘেœ নৌ যান চলাচল করতে পারে না। বিশেষ করে ভাটার সময় স্পিডবোট পর্যন্ত নির্বিঘেœ চালানো যায় না। জেলে সমিতির নেতা শেখ নিজামউদ্দিন জানান, আমরা খুটা জেলে। সাগরের অগভীর এলাকায় মাছ ধরেন। তাও চর জেগেছে। সিডরের পরে এভাবে সাগরের মাঝে ছোট-বড় অসংখ্য চার জাগতে শুরু হয়। চরের কারণে ২০০৯ সালে কুয়াকাটা এবং তৎসংলগ্ন সমুদ্র এলাকায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কাজ করতে গিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থা জিও কাইনেটিক্স সুষ্ঠুভাবে করতে পারেনি। এমনকি পূর্বপরিকল্পিত ম্যাপ থেকে সাইসমিক লাইন তাদের বাদ দিতে হয়েছে। যা পরবর্তী সময়ে স্থানান্তর করে নতুন সাইসমিক লাইনে সম্পন্ন করতে হয়। ওই কোম্পানির পাবলিক রিলেশন অফিসার অনুজ চৌধুরী বাবু জনকণ্ঠকে জানান, কূল থেকে প্রায় ১৫-১৬ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত অসংখ্য চর জেগে উঠেছে। যে কারণে তাদের স্পিডবোট চলাচলে মারাত্মক সমস্যায় পড়তে হয়। তিনি ধারণা দেন, কুয়াকাটা সৈকতের পশ্চিম থেকে শুরু করে ১৫-২০ কিলোমিটার গভীর সমুদ্র পর্যন্ত পূর্বদিকের প্রায় ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকাজুড়ে জেগে উঠেছে অসংখ্য চর। জোয়ারের সময় হাঁটু কিংবা কোমর সমান পানিতে ডুবে থাকে চরগুলো। কিন্তু ভাটায় জেগে ওঠে। জেলেরা পায়ে হেঁটে চলাচল করছে।
×