ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চীনে নাগরিক সমস্যা জানাতে হটলাইন

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

চীনে নাগরিক সমস্যা জানাতে হটলাইন

চীনে বেশকিছু ব্যুরো আছে সেখানে নাগরিকরা সরকারী কর্মকর্তাদের অবিচারের বিরুদ্ধে আপীল করতে পারে। এ ছাড়া অন্যায় অবিচারের প্রতিকার চেয়ে আবেদন করার আরও দুটো চ্যানেল আছে। একটি হলো ‘মেয়রের মেইলবক্স’ অন্যটি ১২৩৪৫ হটলাইন। প্রত্যেক পৌর সরকারের ওয়েবসাইটে মেয়রের মেইলবক্স দেয়া। ই-মেইলের ঠিকানায় চিঠি লিখে অভিযোগ জানান যেতে পারে। হটলাইনগুলো স্থানীয় কোন আমলার সঙ্গে নাগরিকদের যোগাযোগের সুযোগ করে দেয়। প্রথম হটলাইন স্থাপিত হয়েছিল ১৯৮৩ সালে। তারপর থেকে সেগুলোর সংখ্যা বেড়েই গেছে। এতে করে সমন্বয়হীন হটলাইন জট সৃষ্টি হয়। কিন্তু গত কয়েক বছর যথেষ্ট সমন্বয় সাধিত হয়েছে। সাংহাই ২০১৩ সালে একটি মাত্র হটলাইন চালু করে। গুয়াংজু করে ২০১৫। সমন্বিত সব লাইনই একই নম্বর ব্যবহার করেÑ ১২৩৪৫। চীনে সংবাদপত্র স্বাধীন নয়, গণতান্ত্রিক পন্থায় নির্বাচন হয় না, ইন্টারনেটের ওপর সেন্সরশিপ থাকে। কাজেই জনগণের মনে কি চলছে, তাদের চিন্তাভাবনা কেমন তা জানার তেমন সুযোগ থাকে না। শুধুমাত্র হটলাইনগুলোই কর্মকর্তাদের জনগণের মনমানসিকতা বোঝার সুযোগ করে দেয়। কমিউনিস্ট পার্টি আশা করে যে হটলাইন ও ই-মেইল ঠিকানা প্রশাসনকে আরও দায়বদ্ধ, আরও দক্ষ এবং সম্ভবত আরও জনপ্রিয় করে তুলবে। এদিক দিয়ে দৃষ্টান্ত দেয়া যেতে পারে জিনানের ১২৩৪৫ হটলাইনকে। উপকূলীয় প্রদেশ শানডংয়ের রাজধানী জিনানে ২০০৮ সালে হটলাইন চালু হয়। এর অপারেটরের সংখ্যা এখন ৬০ এবং দিনে ৫ হাজার কল পেয়ে থাকে। কর্মব্যস্ত দিনে সেই কলের সংখ্যা ২০ হাজারে ওঠে। তবে ২০১৪ সালে জিনান নগরীতে ৩৮টি ভিন্ন ভিন্ন নম্বরের হটলাইন ছিল যার মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা হয়। এতে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হতো। এর পরিপ্রেক্ষিতে একক নম্বরের হটলাইন স্থাপন করা হয়। এতে কিছুটা শৃঙ্খলা আসে। একক হটলাইন স্থাপনের আগে একটা অভিযোগ প্রতিকারের জন্য গড়ে ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগত। স্থাপনের পর তা ৫ দিনে নেমে আসে। সঠিক ব্যক্তির কাছে কল পৌঁছার হার ৮০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯৭ শতাংশে পৌঁছায়। এর অংশত কারণ হলো এখন সময়ের অপচয় না করে সিটি হলের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব। ২০০৮ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে তদন্তের সংখ্যা ৪ হাজার থেকে বেড়ে প্রায় ৫ হাজারে পৌঁছায়। ১২৩৪৫ হটলাইনের অপারেটর আগের চেয়ে বেশি প্রশিক্ষিত বিধায় তারা দ্রুত কল প্রসেস করতে পারে এবং কলের খরচও পড়ে কম। তবে জিনান যে একটা বিশেষ কেস তাতে সন্দেহ নেই। এক জরিপে দেখা যায় যে হটলাইন সার্ভিসের গুণগত মানের অনেক তারতম্য আছে। সেটা এলাকাভেদেও হয় শেজিং, সাংহাই ও চংকিং হলো ধনী নগরীগুলোর অন্যতম। সেখানে সব কল জায়গামতো পৌঁছে। অন্যদিকে ইউনান, তিব্বত, শানসি ও কিংঘাই হলো পশ্চিমের কম উন্নত প্রদেশ। সেখানে প্রথম চেষ্টাতেই মাত্র এক-পঞ্চমাংশ কলের উত্তর পাওয়া যায়। সার্ভিসের ক্ষেত্রে এই ব্যাপক তারতম্য দূর করে সার্বিক সেবার মান বাড়াতে কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি ১২৩৪৫ হটলাইন চালানোর নিয়মকানুন বেঁধে দিয়েছে। তদনুযায়ী কল পাওয়ার ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে তার জবাব দিতে হবে। কর্তব্যরত অন্তত একজন ব্যক্তিকে ম্যান্ডারিন ছাড়া অন্য ভাষা জানতে হবে এবং লাইন দিনে ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে। সম্ভবত প্রায়শই ত্রুটিপূর্ণভাবে পরিচালনার কারণে হটলাইন আর চীনের স্থানীয় সরকারকে জনপ্রিয় করে তুলতে পারছে না। তার ফলে স্থানীয় সরকারগুলো চীনের কর্তৃত্বের সবচেয়ে ঘৃণিত স্তরে পরিণত হয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহারের অতি প্রকাশ্য ও ঘৃণ্য ঘটনাগুলোর অনেকগুলো এই স্থানীয় পর্যায়েই ঘটে থাকে। জিনানে দক্ষতার যত রকম সুফল আছে সব অর্জিত হওয়া সত্ত্বেও জরিপে দেখা গেছে যে একজন অনুসন্ধানীর সন্তোষের মাত্রা হটলাইন হওয়ার আগে যা ছিল হটলাইন হওয়ার পর বেড়েছে মাত্র ১.৩ শতাংশ। হটলাইনের বিস্তার সরকারবিরোধী বিক্ষোভের আবির্ভাব ঠেকাতে দৃশ্যমান কোন প্রভাই রাখতে পারেনি। বলাবাহুল্য সরকারবিরোধী এসব বিক্ষোভের টার্গেটই ছিল স্থানীয় সরকার। তবে এ কথাও অস্বীকার করার উপায় নেই যে, হটলাইনের সেফটি ভাল্ব না থাকলে আরও বেশি বিক্ষোভ হতে পারত। রাষ্ট্রীয় মিডিয়ায় বলা হয় এগুলোর অন্যতম লক্ষ্য হলো গোলযোগের সম্ভাব্য ইস্যু বা ক্ষেত্র সম্পর্কে সরকারী কর্মকর্তাদের সতর্ক করে দিয়ে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করা। সরকারবিরোধী বেশিরভাগ বিক্ষোভই ছিল জীবন ও জীবিকার সঙ্গে সম্পর্কিত। যেমন দক্ষিণের নগরী নানচিংয়ে কলাররা প্রায়শই যেসব ইস্যু হটলাইন ১২৩৪৫ এ তুলে ধরেছে সেগুলো হলো এ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের ব্যবস্থাপনা, পানি সরবরাহ, বেআইনী নির্মাণ ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘন ইত্যাদি। এই একই বিষয়গুলোতে মেয়রদের মেইলবক্সগুলো (ভার্চুয়াল ও রিয়েল দুটোই) পরিপূর্ণ হয়ে থাকে। চলমান ডেস্ক সূত্র : ইকোনমিস্ট
×