ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সয়াবিনের দাম

প্রকাশিত: ০৩:৩৫, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

সয়াবিনের দাম

রাজধানীর বাজারে বোতলজাত পাঁচ লিটারের সয়াবিনের আকস্মিক অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কোন যৌক্তিক কারণ নেই। মাস দেড়েক আগেও হঠাৎ সয়াবিনের দাম বাড়ানো হয়। ভোজ্যতেল সয়াবিনের সঙ্গে পাম অয়েল মিশিয়ে ‘সয়াবিন’ হিসেবেই বিক্রি করে ভোজ্যতেলের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের একশ্রেণীর অসাধু আমদানিকারক ও আড়তদার। শীতে পাম অয়েল জমে যায় বলে সহজেই ক্রেতারা টের পেয়ে যান। এ সময় খাঁটি সয়াবিন তেলই বিক্রি করতে হয়। ফলে ভেজাল করতে না পেরে ব্যবসায়ীরা সয়াবিনের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করেছিল। আর এ সুযোগে দেশের আমদানিকারকরাও আগের কেনা পণ্য বেশি দামে বিক্রি করে। বিশ্ববাজারে বুকিং দর বাড়ানোর অজুহাতে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে সয়াবিন তেলের দাম পাইকারিতে মণে ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছিল। দেশে ভোজ্যতেলের পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও হঠাৎ চাহিদা বৃদ্ধির সুযোগে পণ্যটির দাম বাড়ানো হয়। বর্তমানে বাজারে খোলা সয়াবিনের দাম কমতির দিকে। এ কারণে বোতলজাত তেলের দাম বাড়ানো সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। এটা ঠিক যে বিভিন্ন উৎসবের সময় পণ্যের চাহিদা বেশি থাকে। একই সঙ্গে কিছু কিছু পণ্য উৎসবকে ঘিরে অপরিহার্য হয়ে ওঠে। এ সুযোগে ব্যবসায়ীরা কাজে লাগিয়ে পণ্যের দাম বৃদ্ধি করে দেয়। পুরো উৎপাদন চক্রই এ ফায়দা নেয়। বিশেষ করে খুচরা পর্যায়ে বেশি দাম বাড়ে। এ ছাড়া আমদানিকারকরাও অনেক সময় লাভ বেশি করার জন্য কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে দাম বাড়িয়ে দেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়মিত বাজার পরিদর্শনের ব্যবস্থা রয়েছে। তারপরও সবকিছু কতিপয় অসৎ ব্যবসায়ী এবং সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়ে থাকে। এক সময় শর্ষে, তিল ও বাদাম তেল ছিল বাঙালীর ভোজ্য। এখন প্রধান ভোজ্য সয়াবিন তেল, এরপরই পাম অয়েল। বিদেশ থেকে এনে এ দেশে শোধন করে এ দুটো তেল বিপণন করা হয়। কাঁচা সয়াবিন তেল ও কাঁচা পাম অয়েল যারা আমদানি করেন এবং শোধন করেন ভোজ্যতেলের বাজারের কলকাঠি তারাই নাড়িয়ে থাকেন বলে অভিযোগ উঠে থাকে। অনেক সময় দেখা যায় সয়াবিন তেলের মধ্যে পাম অয়েল মিশিয়ে বিক্রি করা হয় অধিক মুনাফা লাভের আশায়। আবার খোলা বাজারের সঙ্গে বোতলজাত তেলের মূল্য পার্থক্য থাকে অনেক। ভোগ্যপণ্য নিয়ে এ ধরনের স্বেচ্ছাচার রোধ করার জন্য সক্রিয় রয়েছে সরকারী প্রতিষ্ঠান ট্যারিফ কমিশন। এর আগেও আমরা সম্পাদকীয় কলামে বলেছি, বাজার সিন্ডিকেটের কারণেই অনেক সময় দেশের নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির থাকে। বাজার সিন্ডিকেটই এর জন্য মূলত দায়ী। বাজার সিন্ডিকেট বলতে বোঝায় বিশেষ প্রভাবশালী ব্যবসায়ী চক্রকে। এই চক্রের বাইরে যে দেশব্যাপী বহুচক্র কাজ করছে, তার খোঁজ ক’জন রাখে। পাতি ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ফুটপাথের দোকানদারÑ সবাই এখন সিন্ডিকেটের সদস্য। যে যেভাবে পারছে লুটে নিচ্ছে। এরা বাজার-সন্ত্রাসী। তাদের কাছে জনগণ অসহায় বা জিম্মি। পরিকল্পিতভাবে পণ্যের দাম বাড়ানোর অপপ্রয়াস রোধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপই কাম্য। একইসঙ্গে সরকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ বা টিসিবিকে শক্তিশালী করার কোন বিকল্প নেই। তবে বাজার পরিস্থিতি পাল্টানোর জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন বিক্রেতাদের অসৎ, লোভী ও প্রতারণামূলক মানসিকতার পরিবর্তন।
×