ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষায় বিশ্বব্যাপী নিন্দা

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষায় বিশ্বব্যাপী নিন্দা

উত্তর কোরিয়া নিশ্চিত করেছে যে রবিবার তাদের উৎক্ষেপণ করা ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা সফল হয়েছে। দেশটির নেতা কিম জং উন নিজে এর তত্ত্বাবধান করেন। দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কেসিএনএ জানায়, এটি ছিল ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপণযোগ্য মধ্যমপাল্লার একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী এটাকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মনোভাব বুঝতে একটি উস্কানিমূলক পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছেন। উত্তর কোরিয়ার সর্বশেষ এ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষায় বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠেছে। খবর বিবিসির। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া এ ঘটনা নিয়ে আলোচনার জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এক জরুরী বৈঠক আহ্বান করেছে। কেসিএনএ জানিয়েছে, পুকগুকসং-২ নামের এ কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্রটি পারমাণবিক ওয়্যারহেড বহনে সক্ষম। কেসিএনএ আরও জানায়, প্রতিবেশী দেশগুলোর কথা চিন্তা করে ক্ষেপণাস্ত্রটি উচ্চ কোণ থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। ক্ষেপণাস্ত্রটির রকেটে কঠিন জ্বালানির ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়। এটা রকেটকে আরও শক্তিশালী ও দূরে যেতে সাহায্য করে। দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ‘কোল্ড ইজেক্ট’ পদ্ধতি ব্যবহার করে রকেটটি উৎক্ষেপণ করা হয়। এই পদ্ধতিতে প্রথমদিকে রকেটকে ধাক্কা দিতে কমপ্রেসড গ্যাস ব্যবহার করা হয়। ডুবোজাহাজ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে এ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পর উত্তর কোরীয় নেতা সন্তোষ প্রকাশ করে জনান এটা তাদের দেশের সামরিক বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ক্ষেপণাস্ত্রটি পূর্ব জাপান সাগরের ৫০০ কিলোমিটার এলাকা অতিক্রম করার পর পানিতে বিস্ফোরিত হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী জানায়, ক্ষেপণাস্ত্রটি ভূমি থেকে প্রয় ৫৫০ কিলোমিটার উপর দিয়ে য়ায়। বিশেষজ্ঞরা জাপানী সীমানা এড়াতে কম দূরত্বে ক্ষেপণাস্ত্রটি পরীক্ষার পরামর্শ দেয়। গত বছর বেশ কয়েকেটি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালানোর ধারাবাহিকতায় উত্তর কোরিয়া সর্বশেষ এ পরীক্ষাটি চালাল। এর মধ্যে দেশটির পঞ্চম পারমাণবিক পরীক্ষাও রয়েছে। কোরিয়ান উপদ্বীপের পশ্চিমে পিয়নগান প্রদেশের পাংহিয়ন বিমান ঘাঁটি থেকে রবিবার স্থানীয় সময় ৭টা ৫৫ মিনিটে ক্ষেপণাস্ত্রটি উৎক্ষেপণ করা হয়। জাতিসংঘের প্রস্তাবে উত্তর কোরিয়ার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা নিষিদ্ধ করা হয় যাতে দেশটি পূর্ণ পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রের অধিকারী না হতে পারে। দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, উত্তর কোরিয়ার ক্রমাগত উস্কানি এবং পারমাণবিক বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নয়নের মাধ্যমে দেশটির নেতা কিম জং উনের শাসনের অযৌক্তিকতা ও একগুঁয়েমিতাই প্রকাশ পাচ্ছে। ন্যাটো উত্তর কোরিয়ার এ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার সমালোচনা করেছে। সংস্থাটির মহাসচিব জেন্স স্টলটেনবার্গ এ বিষয়ে উত্তেজনা আর না বাড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দেশটির সঙ্গে সত্যিকারের সংলাপে শুরু করার আহ্বান জানিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এ ঘটনার সমালোচনা করে এক বিবৃতিতে বলেছে, উত্তর কোরিয়া বার বার আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন করছে যা উস্কানিমূলক ও অগ্রহণযোগ্য। যুক্তরাষ্ট্র সফরে থাকা জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বলেছেন এ ঘটনা একেবারেই অসহনীয়। ট্রাম্প শনিবার বলেছেন যুক্তরাষ্ট্র জাপানের পাশে একশত ভাগ আছে। উত্তর কোরিয়ার মিত্র চীন এ বিষয়ে এখনও কোন মন্তব্য করেনি। বেজিং কিমের পারমাণবিক বোমার মালিক হওয়ার উচ্চাকাক্সক্ষা ত্যাগে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। জানুয়ারিতে কিম দাবি করেন তার সেনাবাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখ-ে আঘাত হানতে ও পারমাণবিক বোমা বহনে সক্ষম আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। তবে তার এ দাবির বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা সন্দেহ পোষণ করেন। সে সময় ট্রাম্প এক টুইটে উত্তর কোরিয়ার এ দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘এটা কখনও ঘটবে না।’ গত সপ্তাহে দক্ষিণ কোরিয়া সফরের সময় মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জেমস মাটিস বলেন, উত্তর কোরিয়া যে কোন ধরনের পারমাণবিক হামলার অভূতপূর্ব জবাব পাবে। সে দক্ষিণ কোরিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়নের বিষয়েও দেশটিকে পুননিশ্চয়তা দেন।
×