ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠশিল্পী ক্ষমা দাশ গুপ্তা আর নেই

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠশিল্পী ক্ষমা দাশ গুপ্তা আর নেই

নিজস্ব সংবাদদাতা পিরোজপুর ॥ মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠশিল্পী পিরোজপুরের ক্ষমা দাশ গুপ্তা আর নেই! সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। তার শ্বশুরবাড়ি বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলা সদরে। তিনি দুই কন্যা সন্তানের জননী ছিলেন। ক্ষমা দাশ গুপ্তা পিরোজপুর জেলা শহরে মাছিমপুর সড়কে বসবাস করতেন। আন্দোলন মুখর এবং অভিজ্ঞ এ গুণী শিল্পী রবিবার সন্ধ্যা ৭ টায় তার বড় মেয়ের শ্বশুর বাড়ী নরসিংদীতে পরলোক গমন করেন। তিনি দীর্ঘদিন যাবত হৃদরোগ সহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। তার মৃত্যুতে পিরোজপুরের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। তার দুই মেয়ের একান্ত ইচ্ছায় রবিবার রাতেই তার বড় মেয়ের শ্বশুর বাড়ী নরসিংদীতে তার শেষকৃত অনুষ্ঠিত হয়। তার মৃত্যুতে পিরোজপুর সাংস্কৃতিক অঙ্গনসহ সর্বমহলে শোকের ছায়া নেমে আসে। জানা যায়,৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ( কালিগঞ্জ, কোলকাতা) থেকে প্রচারিত ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে রক্ত লাল রক্ত লাল’ গানের অন্যতম শিল্পী ক্ষমা দাশ গুপ্তা। ৬৯’র গণ অভ্যুথানে গণ সঙ্গীতের মাধ্যমে ভূমিকা রেখেছেন দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে । সেময় বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের গান গেয়ে মানুষের মনে জাগিয়েছেন এক দুরন্ত সাহস আর বেঁচে থাকার স্বপ্ন। স্বাধীনতাত্তোর ৭৪’র বন্যায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন হাটে মাঠে গান গেয়ে সাহায্য সংগ্রহ করে। সুপরিচিত এই গুণী শিল্পী ১৯৪৯ সালের ৩১ অক্টোবর পিরোজপুর শহরের মাছিমপুর সড়কে একটি প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবার নাম প্রয়াত সুরেন্দ্র নাথ দাশ গুপ্ত, মা প্রয়াত পারুল বালা দাশ গুপ্তা। তার স্বামী প্রয়াত কালিদাস সাহা। তাদের ২ টি কন্যা সন্তান রয়েছে (বিবাহিত)। তিনি ১৯৬৬ সালে পিরোজপুর আরবান গার্লস স্কুল (বর্তমান সরকারী বালিকা বিদ্যালয়) থেকে এস এস সি, ১৯৬৯ সালে পিরোজপুর সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে এইচ এস সি এবং ১৯৭৬ সালে বি এ পাশ করেন। পেশাগত জীবনে তিনি একজন সরকারী চাকুরীজীবী ছিলেন। স্কুল জীবন হতেই সঙ্গীতের প্রতি প্রচন্ড আকর্ষণ ছিল ক্ষমা দাশ গুপ্তার। ৮ম শ্রেণিতে পড়ার সময় জেলার ভান্ডারিয়া থানায় এক সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় তিনি প্রথম হয়ে স্বর্ণপদক জিতে নিজেকে সঙ্গীত ভুবনে প্রতিষ্ঠিত করেন। এরপর থেকে স্কুল, কলেজ পর্যায়ে নজরুল, রবীন্দ্র, কীর্তন ও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে নিজের প্রতিভা বলে প্রতিষ্ঠিত হন। ক্ষমা দাশ গুপ্তা ১৯৭৩ সালে পিরোজপুরে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী পিরোজপুর মহাকুমা শাখার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নিজেকে উদীচীর সঙ্গে জড়িত রেখে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে নিবেদিত ছিলেন। ১৯৭২ সাল থেকে টানা প্রায় বিশ বছর খুলনা, বরিশাল বেতার ও টেলিভিশনে নিয়মিত শিল্পী হিসেবে সঙ্গীত পরিবেশন করেন। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী পিরোজপুর জেলা শাখা তাকে গুণীশিল্পীর সম্মাননায় ভূষিত করেন। ২০১২ সালে স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা সিডি আই নেটওয়ার্ক জীবনব্যাপী সঙ্গীতে অবদানের জন্য সফল নারী সন্মাননা প্রদান করে। ২০১৩ সালে তাকে জেলা শিল্পকলা একাডেমি পক্ষ থেকে জেলার শ্রেষ্ঠ সঙ্গীতশিল্পীর সন্মাননা প্রদান করা হয়। তার মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন পিরোজপুর পৌরসভার মেয়র হাবিবুর রহমান মালেক, পিরোজপুর জেলা উদীচীর সভাপতি এডভোকেট এম এ মান্নান, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান খালেক, পিরোজপুর প্রেসক্লাব সভাপতি শফিউল হক মিঠু, সাধারণ সম্পাদক ফসিউল ইসলাম বাচ্চু, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল আহসান গাজী, মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সালমা রহমান হেপি, পিরোজপুর জেলা রিপোর্টাস ক্লাব সভাপতি জহিরুল হক টিটু, জেলা উদীচীর সভাপতি সাধারণ সম্পাদক খালিদ আবুসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অংগনের ব্যাক্তিবর্গ।
×