ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নিঃসন্তান দম্পতিদের আধুনিক চিকিৎসা

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

নিঃসন্তান দম্পতিদের  আধুনিক চিকিৎসা

কোন এক দম্পতি যদি এক বছর কিংবা তার চেয়ে বেশি সময় ধরে বাচ্চা গ্রহণের পরিকল্পনা নেয় এবং তারা একত্রে স্বাভাবিকভাবে বসবাস করার পরও যদি তাদের কোন সন্তান না আসে তাহলে সেক্ষেত্রে ঐ দম্পতির জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন বলে ধরে নিতে হয়। এক জরিপে দেখা গেছে যে ২৫% নবদম্পতি বিয়ের পর প্রথম মাসেই সন্তান সম্ভবা হয়ে ওঠেন; যদি তারা জন্ম নিয়ন্ত্রণে কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ না করে থাকেন। আরও দেখা গেছে বিয়ের ছয় মাসের মধ্যে ৬৩ শতাংশ এবং ৮০ শতাংশ নয় মাসের মধ্যে এবং ৮৫ শতাংশের ক্ষেত্রে ১ বছরের মধ্যে সন্তানসম্ভবা হয়ে ওঠেন। তবে এখানে একটা কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন। এখানে যে সংখ্যার কথা উল্লেখ করা হলো সেক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের নিয়মিত সেক্সোয়াল সম্পর্ক কোন রকম জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ছাড়াই থাকতে হবে। এক্ষেত্রে নারী এবং পুরুষ উভয়কেই একত্রে চিকিৎসকের কাছে আসতে হবে। এবং সর্বপ্রথমে পুরুষকেই তার শুক্রাণু পরীক্ষার জন্য পাঠাতে হবে। প্রথম অবস্থায় স্ত্রীর পরীক্ষার করানো সমীচীন নয়। কারণ নারীর ক্ষেত্রে যে সমস্ত পরীক্ষা -নিরীক্ষা প্রয়োজন তা খুবই জটিল ও ব্যয় বহুল। কাজেই স্বামীর পরীক্ষায় যদি কোন দোষ না পাওয়া যায় তাহলে স্ত্রীর পরীক্ষাগুলো করানোর প্রয়োজনীয়তা অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠবে। সাধারণভাবে একজন পুরুষ ৪০ মিলিয়ন থেকে৩০০ মিলিয়ন শুক্রাণু নির্গত করে তবে সেই সংখ্যা যদি ২০ মিলিয়নের নিচে নেমে আসে তাহলে স্বাভাবিক নয় বলে বিবেচিত হবে এবং সেক্ষেত্রে চিকিৎসা ছাড়া সন্তানের পিতা হওয়া প্রায় অসম্ভব বলেই ধরে নিতে হবে। অনেক ইনফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞের মতে, নিঃসন্তান দম্পতিদের মধ্যে আনুমানিক ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে সন্তান না হওয়ার জন্য পুরুষরাই দায়ী এবং শতকরা দশ ভাগ ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়েরই সমস্যা থাকে। আবার অন্তত দশ ভাগ ক্ষেত্রে গর্ভধারণহীনতার কোন কারণই খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির কারণে বিশেষ করে শল্যচিকিৎসা পদ্ধতির কারণে এখন তাদের অনেকেই পিতা হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। এক্ষেত্রে ইনট্রানসিস্টোপ্লাসমিক স্পার্ম ইনজেকশন পদ্ধতি উল্লেখযোগ্য সাফল্যম-িত বলে প্রমাণিত হয়েছে। এক্ষেত্রে ল্যাবরেটরিতে রাখা ডিম্বাণুর মধ্যে শুক্রাণু সরাসরি প্রবেশ করানো হয়। অনেক পুরুষের ক্ষেত্রে আবার শুক্রাণু থাকে না সে ক্ষেত্রে অনেক পুরুষকেই দেখা যায় পুরুষটি ভাস নল ছাড়াই জন্মেছিল। এই নলটি না থাকার কারণে শুক্রাণু পাতলা কু-লি পাকানো যা ১৫ থেকে ২০ ফিট লম্বা টিউব যা ইপিডাইডাইমিস নামে পরিচিত সেখান থেকে বাইরে বাহিত হতে পারে না যা এখন শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে শুক্রাণু উদ্ধার করে তাকে ব্যবহার করতে পারেন। বিজ্ঞানীদের মধ্যে যে সমস্ত পুরুষের মধ্যে শুক্রাণু থাকে না তাদের মধ্যে জেনেটিক পরীক্ষাও প্রয়োজন, যার মাধ্যমে ক্রোমোজোম সমস্যা সম্পর্কে জানা যেতে পারে। পুরুষদের সন্তান না হওয়ার আর একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে ভেরিকোসিল যা অ-কোষের স্বাভাবিক শুক্রাণু উৎপাদনকে ব্যাহত করে। এই ভেরিকোসিল অপারেশনের পর অনেক দম্পতিই সন্তান জন্মদানে সক্ষম হয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে শুক্রাণু সংখ্যায় কমে যাওয়ার কারণে যখন সন্তান না হয় সে ক্ষেত্রে শুক্রাণু সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরিতে ডিম্বাণু নিষিক্তকরণে ব্যবহার করা হচ্ছে এখন। অনেক ক্ষেত্রে মহিলারা যথেষ্ট ডিম উৎপাদনে সক্ষম নাও হতে পারে সে ক্ষেত্রে হরমোন চিকিৎসায় ভাল ডিম্ব উৎপন্ন হতে পারে এবং এই ডিম্বে একটি একক শুক্রাণু সরাসরি ইনজেকশনের মাধ্যমে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। এবং ডিমগুলো পরে স্ত্রী জরায়ুতে পুনরায় হস্তান্তর করা হয়। দেখা গেছে অনেক ক্ষেত্রেই সুস্থ-স্বাভাবিক শুক্রানণু তৈরির জন্য ঋ.ঝ.ঐ হরমোন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা থাকে। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে এই হরমোন ব্যবহারের ফলে শুক্রাণুর পরিমাণ ২ গুণ পর্যন্তও বৃদ্ধি পেয়েছে। আরও দেখা গেছে যাদের শুক্রাণুর স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে (গধঃঁৎধঃরড়হ) সমস্যা আছে তাদের ক্ষেত্রে এই হরমোন ঋ.ঝ.ঐ ব্যবহারে শুক্রাণু বর্ধন, বিস্তার (গধঃঁৎধঃরড়হ) স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসে। এক্ষেত্রে একটি কথা মনে রাখা প্রয়োজন যে, শুক্রাণুর স্বাভাবিক তৈরি হওয়া এবং সংশ্লিষ্ট হরমোন তৈরি এর দুটোই আবার নিয়ন্ত্রিত হয় (ক) চরঃঁরঃধৎু এষধহফ দ্বারা অর্থাৎ খ.ঐ. আর ঋ.ঝ.ঐ. এর দ্বারা। পুরুষের ক্ষেত্রে বন্ধ্যত্বের অসংখ্য কারণ আছে। তবে প্রধানত তাকে ৩টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন চৎবঃবংঃরপঁষধৎ অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে চরঃঁঃধৎু মষধহফ (গ্রন্থি) অথবা ঐুঢ়ড়ঃযধষধসঁং এর কারণে অস্বাভাবিক শুক্রাকিট তৈরি হয়। (খ) ঞবংঃরপঁষধৎ বা অ-কোষের কারণে যখন পুরুষের বন্ধ্যত্ব দেখা দেয় তখন অজ্ঞাত কারণে শুক্রকিটের পরিমাণে অস্বাভাবিক রকম কমে যায়। এবং এর আনুপাতিক সংখ্যা অন্ততপক্ষে মোট সংখ্যার ২৫ শতাংশ। এর বাইরে আর একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে (গ) চড়ংঃ ঞবংঃরপঁষধৎ অর্থাৎ এক্ষেত্রে শুক্রকিট বাহিত হওয়ার পথ সংকুচিত অথবা বন্ধ থাকে অথবা শুক্রকিটের বিচরণ বা চলাচলের ক্ষমতা কমে যায় অথবা শুক্রকিট ধ্বংস করে দেয়ার মতো কোন অহঃরনড়ফু শরীরে তৈরি হয় যা শুক্রাণুকে ধ্বংস করে দেয়। ডা. দিদারুল আহসান চর্ম-এলার্জি ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ ফোন : ৮১৩০১১৩, মোবাইল-০১৮-২১৮৩৭৮
×