ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বইমেলায় প্রজন্মের মেলা

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

বইমেলায় প্রজন্মের মেলা

যত দিন যাচ্ছে ততই জমে উঠছে বাঙালীর প্রাণের বইমেলা। মানুষজনের ভিড়ে মুখরিত বাংলা একাডেমি প্রান্তর। এ যেন লেখক-পাঠকের এক মহাসমাবেশ। সঙ্গে তরুণ-তরুণীদের আড্ডায় জমে উঠছে বইমেলা। প্রতিদিন মেলায় মোড়ক উন্মোচিত হচ্ছে অনেক নতুন বইয়ের। মেলায় প্রবীণ লেখকদের পাশাপাশি তরুণ লেখকদেরও বই আছে। মেলা ঘুরে দেখা গেছে, তরুণ লেখকদের বই-ই বেশি। লেখক-পাঠকের সেতুবন্ধ তৈরির আয়োজন অমর একুশে গ্রন্থমেলা প্রতিবছর নতুন লেখকদের জন্য ভিন্নমাত্রা যোগ করে কেউ হাসেন বইয়ের কাটতি দেখে, কেউবা নজর কাড়েন লেখনীর ধারে। বাংলা একাডেমির মেলায় কী ধরনের বই প্রকাশিত হয়, কোন্ ধরনের বই বেশি চলে, এসব বইয়ের ক্রেতাই বা কারাÑ এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া ভার। সাধারণত কবিতা, গল্প ও উপন্যাসের বই-ই মেলায় বেশি আসে। এ ছাড়া প্রবন্ধ, অনুবাদ, জীবনী, রচনাবলীও মেলায় আসে। ছোটদের জন্য ফিকশনধর্মী লেখা ছাড়া গল্প, ছড়া, উপন্যাস, রূপকথা ইত্যাদি বইও প্রকাশিত হয়। জনপ্রিয় ও পাঠকনন্দিত লেখকের বই ছাড়া অবসরপ্রাপ্ত আমলা, প্রবাসী বাঙালী কিংবা নবীন লেখকের কাঁপা হাতের প্রথম লেখাটিও ফেব্রুয়ারির বইমেলায় প্রকাশের অপেক্ষায় থাকে। মেলার রমনা অর্থাৎ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এবারের বইমেলার ভিড় চোখে পড়ার মতো। কালীমন্দিরের প্রবেশদ্বারের বইয়ের স্টলগুলোতেই দেখা মিলছে একঝাঁক তরুণ লেখকের, গাঁটের পয়সা খরচ করে যারা নিজেরাই বিভিন্ন নামে ও আকারে বই প্রকাশ করেছেন। এসব তরুণ লেখক-লেখিকা, প্রকাশক সবাই সৃষ্টিশীল। তাদের চিন্তা-চেতনায়ও আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্কতার বিষয়টি ক্রিয়াশীল। বর্তমানে এসব তরুণ লেখক আর প্রকাশক মেলার অন্যতম আকর্ষণে পরিণত হয়েছেন । এই চত্বরে তারুণ্যের সমারোহ, উচ্ছ্বাস আগামী দিনের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উজ্জ্বল দিকটিকেই যেন আরও বেশি করে উদ্ভাসিত করছে। বরাবরের মতো এবারের মেলাতেও শতাধিক তরুণ লেখকের নতুন বই এসেছে। এসব বইয়ের মধ্যে কিছু বই ইতোমধ্যেই ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এবারের মেলায় তরুণ লেখকদের আসা শতাধিক বইয়ের মধ্যে কবিতার বই বেশি। তারুণ্যনির্ভর প্রকাশনী ‘ঘাসফুল’ থেকে কবিতা, গল্পনির্ভর বই বেরিয়েছে। ঘাসফুল প্রকাশনী থেকে কবিতাপ্রেমী পাঠক-পাঠিকারা তরুনদের বই বেছে নিতে পারেন। বইমেলায় বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সমাগম ঘটে, যারা বই পড়তে আগ্রহী। বিশেষ করে তরুণ পাঠক-পাঠিকারা। তাই প্রকাশকরাও মেলায় প্রতিষ্ঠিত লেখকদের পাশাপাশি তরুণ লেখকদের বই প্রকাশ করেন। অধিকাংশ প্রকাশক তরুণদের বই বের করার পেছনে অনীহা প্রকাশ করেন- বিশেষ করে প্রথম বই। প্রকাশকরা মনে করেন, তরুণ লেখকদের বই প্রকাশে ঝুঁকি নিতে হয় । স্বভাবতই প্রথম বই প্রকাশে অনেক ঝক্কিঝামেলার মধ্য দিয়ে এগোতে হয় একজন তরুণ লেখককে। তার পরও কিছু কিছু প্রকাশক তরুণদের সুযোগ করে দিতে মহতী উদ্যোগ নিয়ে থাকেন। তরুণদের প্রথম বই বের করেন। মেলার শুরুর অল্প কিছুদিন পর বন্ধুদের নিয়ে বইমেলায় এসেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এদের একজন আফরিন প্রিমা। তিনি বলেন, ‘এবার মেলায় অনেক জায়গা। ঘুরেফিরে বই দেখা যাচ্ছে। ভাল লাগছে।’ পাশ থেকে প্রিমার বন্ধু রুপা বলে ওঠে, ‘চারটি বই কিনেছি, আরও কিনব।’ মেলার শুরুর দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তরুণ-তরুণীদের ভিড় থাকে বেশি। তারা প্রায় সবাই একবারের জন্য হলেও ঢুঁ মারেন বইমেলায়। কেনেন প্রিয় লেখকদের বই। আর এ জন্য বসন্তের আগেই প্রকাশকরা তাদের প্রকাশিত বেশিরভাগ বই মেলায় এনেছেন। বাংলা একাডেমির বটতলা চত্বরে ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মাত্র ৩২টি বই দিয়ে চিত্তরঞ্জন সাহা বই প্রদর্শনী ও বিক্রি শুরু করছিলেন। সময়ের বিবর্তনে সেটিই আজ লাখো মানুষের প্রাণের মেলায় পরিণত হয়েছে। বিস্তৃত হয়েছে মেলার পরিধি। বইমেলার ব্যাপ্তি বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ছাড়িয়ে তৎসংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছে। ফেব্রুয়ারিজুড়ে লাখো মানুষের আনাগোনায় মুখরিত হয়ে ওঠে বাংলা একাডেমি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। বই কিনতে যেমন মানুষের ভিড় থাকে, তেমনি মেলা দেখতে, প্রিয় লেখকদের সঙ্গে ছবি তুলতে, কথা বলতেও অনেকেই চলে আসেন বইমেলায়। আমাদের দেশে বইয়ের একটি বড় অংশ বইমেলা উপলক্ষ করে প্রকাশ পায়। সেখানে বর্ষীয়ান এবং জনপ্রিয় লেখকদের বই যেমন বের হয়, তেমনি নতুন লেখকদের বইও প্রচুর পরিমাণে প্রকাশিত হয়। লেখক-প্রকাশকরা ফেসবুক আর ব্লগে তাদের প্রকাশিত বইয়ের প্রচার চালান। লেখকদের শুভাকাক্সক্ষীরাও পিছিয়ে থাকেন না। ট্যাগ-শেয়ারের প্রতিযোগিতা চলে অনলাইনে। কয়েক বছর ধরেই প্রায় সব টেলিভিশন চ্যানেল বইমেলাকে নিয়ে লাইভ অনুষ্ঠান করছে, যা সাহিত্যানুরাগীদের আগ্রহে যোগ করেছে নতুন মাত্রা।
×