ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ত্রিদেশীয় বাণিজ্য প্রসারে মোগলহাট স্থলবন্দর চালুর দাবি

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ত্রিদেশীয় বাণিজ্য প্রসারে মোগলহাট স্থলবন্দর চালুর দাবি

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট ॥ জেলা সদরের মোগলহাট রেলওয়ে স্থলবন্দর চালুর দাবি উঠেছে। এই স্থলবন্দর চালু হলে বাংলাদেশ, ভারত ও ভুটানের সঙ্গে ত্রি-দেশীয় ব্যবসা-বাণিজ্য ও আমদানি-রফতানি প্রসার ঘটবে। যোগাযোগ, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, পুঁজি বিনিয়োগ এবং নতুন নতুন কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পাবে। তাই মোগলহাট রেলপথ, চেকপোস্ট, ইমিগ্রেশন ও শুল্ক স্টেশন এবং স্থলবন্দর চালু করার দাবি তুলেছে লালমনিরহাটের মোগলহাট বাসী ও ব্যবসায়ীগণ। ব্রিটিশ আমলে উত্তর জনপদের লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগের মাধ্যমে ভারতের কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম রাজ্যের সঙ্গে রেলওয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু ছিল। ভারত বর্ষের রেলওয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রাণ কেন্দ্র ছিল লারমনিরহাট। ১৯৪৭ সালে পাক-ভারত বিভক্তির পরও লালমনিরহাট সদরের মোগলহাট হয়ে ভারতের সঙ্গে রেলওয়ে যোগাযোগ অব্যাহত ছিল। এই রেল পথের মাধ্যমে পূর্ব বাংলার উৎপাদিত পাট, চা, তামাক, চামড়া, ধান, চাল ও শালকাঠ ভারতে যেত। ভারত থেকে কয়লা, লুবলেকেটিং ওয়েল, ডিজেলসহ অন্যান্য মালামাল আমদানি করে নিয়ে আসা হতো। তাছাড়াও দু’দশের পাসপোর্টধারী যাত্রীদের চলাচলে মোগলহাটে একটি চেকপোস্ট ও ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা চালু ছিল। প্রতিদিন শতাধিক পাসপোর্টধারী যাত্রী মোগলহাট হয়ে ভারত ও বাংলাদেশে যাতাযাত করত। ৮০ দশকে ভারতের সঙ্গে রেলওয়ে যোগাযোগ বন্ধ ও সড়ক পথে যোগাযোগ সুবিধা বৃদ্ধি পাওয়ায় অলাভজনক হেতু ৮ কিলোমিটার লালমনিরহাট- মোগলহাট রেলপথ বন্ধ করে দেয়া হয়। ২০০২ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত মোগলহাট চেকপোস্ট, ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস বিভাগের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে দু’দেশের পাসপোর্টধারী যাত্রী সাধারণকে বুড়িমারী চেকপোস্ট কাস্টমস ইমিগ্রেশের মাধ্যমে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এতে বাংলাদেশের ময়মনসিংহ, টাংগাইল, জামালপুর, মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, বগুড়া, রংপুর ও কুড়িগ্রামসহ আশপাশের জেলার পাসপোর্টধারী যাত্রী সাধারণকে প্রায় ১শ’ কিলোমিটার সড়ক অতিক্রম করে ভারতে যেতে হচ্ছে। অপরদিকে পশ্চিমবঙ্গের যাত্রী সাধারণকেও অতিরিক্ত পথ অতিক্রম করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত মোগলহাট স্টেশন হয়ে ভারতে মালবাহী ওয়াগানে মালামাল পরিবহন অব্যাহত ছিল। ১৯৮৮ সালের প্রবল বন্যায় ধরলা নদীর তীব্র স্রোত ও ভাঙ্গনে রেলপথে ভারতের ও বাংলাদেশের অংশের প্রায় দু’কিলোমিটার নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ফলে রেলওয়ে যোগাযোগ বন্ধ হয়। এই রেলপথ, চেকপোস্ট, ইমিগ্রেশন ও শুল্ক স্টেশন চালু হলে, বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ কয়েকটি রাজ্য ভুটানের সঙ্গে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কয়েকশত কিলোমিটার দূরত্ব কমে আসবে এবং সময় ও আর্থিক সাশ্রয় হবে। ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লালমনিরহাটে এক নির্বাচনী জনসভায় মোগলহাট রেলওয়ে স্টেশন, চেকপোস্ট ও ইমিগ্রেশন চালুসহ শুল্ক স্টেশন স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তৎপ্রেক্ষিতে ১৯৯৬ সালের ২৮ জুলাই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে মোগলহাটকে রেলরুট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অপরদিকে, ২০১১ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড মোগলহাটে শুল্ক স্টেশন স্থাপনে অবকাঠামো, নিরাপত্তা, বাণিজ্য সম্ভাবনা, লোকবল ও যোগাযোগ বিষয়ে পর্যালোচনাপূর্বক মতামত প্রদানের জন্য সংশিষ্ট কর্তৃক্ষের কাছে পত্র প্রেরণ করে। সুদীর্ঘ ৬ বছর পরও কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। দি-ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই)-এর উদ্যোগে ২০১৬ সালের ১৫ থেকে ১৭ জুলাই ভারতের কলকাতা ও শিলিগুড়িতে ৪ দেশীয় বিজনেস ডেলিগেশন (বিবিআইএন) সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। পরে লালমনিরহাট চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ভারতের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের এক দ্বি-পাক্ষিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্র ঘোষ উপস্থিত ছিলেন। এতে লালমনিরহাট চেম্বার অব কমার্সের প্রতিনিধি দলের নেতা চেম্বার সভাপতি এস এ হামিদ বাবু মোগলহাট চেকপোস্ট ও স্থলবন্দর চালুকরণের যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। মন্ত্রিসভায়কে অবহিত করেন যে, ভারতের পক্ষ থেকে ধরলা নদী শাসন ও রাস্তা নির্মাণে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সর্বোপরি ভারত সরকার মোগলহাটের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগ প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী। এই যোগাযোগের পথটি চালু করার জন্য পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম প্রদেশের মানুষজন আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছেন। তাদের এই দাবি পূরণে ভারত সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। এদিকে গত ৯ জানুয়ারি রেলওয়ে সচিব ফিরোজ সালাহউদ্দিন মোগলহাট পরিদর্শন করেন। তিনি জানান, ভারতের সঙ্গে বুড়িমারী ও মোগলহাট সংযোগ রেলপথ চালু করার জন্য সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। মোগলহাট স্থলবন্দর চালু হলে বর্তমান সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ হবে। সেই সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের অবহেলিত জেলা লালমনিরহাটে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ভারতের সেভেন সিস্টার খ্যাত ৭টি রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে।
×