ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অরক্ষিত বিদ্যুত লাইন, তারের সংস্পর্শে গুরুতর আহত শ্রমিক

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

অরক্ষিত বিদ্যুত লাইন, তারের সংস্পর্শে গুরুতর আহত শ্রমিক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মাটির ওপর বিদ্যুত লাইন থাকায় দুর্ঘটনা যেন নিত্যদিনের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায়ই হতাহতের ঘটনা ঘটছে। অনেক ক্ষেত্রে এসব লাইনের তারে নিরাপত্তা আবরণও থাকে না। ফলে কোন কারণে এই তারের সংস্পর্শে এলেই দুর্ঘটনা ঘটে। সোমবারও রাজধানীর মগবাজারে বারাকাহ কিডনি হাসপাতালের বাইরের কাচ পরিষ্কারের সময় বিদ্যুতায়িত হয়ে এক শ্রমিক গুরুতর আহত হয়েছে। বিদ্যুত বিভাগ অবশ্য বলছে, সরকার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে বিদ্যুত সঞ্চালন ব্যবস্থা ক্রমান্বয়ে পুরোপুরি মাটির নিচে স্থাপন করছে। ইতোমধ্যেই রাজধানীর অনেক এলাকার লাইন মাটির নিচে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সারাদেশেই এমন কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এমনকি মাটির নিচে সাবস্টেশন বসানোর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সোমবার বেলা এগারোটার দিকে রাজধানীর মগবাজারে বারাকাহ কিডনি এ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালের বাইরের কাচ পরিষ্কার করছিলেন দুই শ্রমিক। তারা রশি আর বাঁশ দিয়ে মই বানিয়ে তা ওপর থেকে ঝুলিয়ে দিয়ে তাতে বসে কাজ করছিলেন। আচমকা রশিটি দোল খেয়ে ভবনের কাছ দিয়ে যাওয়া বিদ্যুত লাইনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় আল আমীন নামে এক শ্রমিক বিদ্যুতায়িত হয়। হাসপাতালটির কাস্টমার ম্যানেজার আব্দুল কাউয়ুম আল ফয়সাল জনকণ্ঠকে বলেন, দ্রুত তাকে নিচে নামিয়ে এনে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কামুক্ত। তার চিকিৎসায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তিনি আরও বলেন, বিদ্যুতের লাইনের ওপর কোন আবরণ নেই। এজন্য হাসপাতালের তরফ থেকে পিডিবির সঙ্গে আবরণ লাগানোর জন্য যোগাযোগ করা হয়েছিল। এ ব্যাপারে পিডিবির তরফ থেকে কোন দিকনির্দেশনা মেলেনি। এছাড়াও বিদ্যুতের তারে দুর্ঘটনা ঘটছে প্রায় প্রতি নিয়ত। বিদ্যুত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মাটির ওপর দিয়ে বিদ্যুত সঞ্চালন লাইন থাকায় প্রায়ই এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। বর্ষা মৌসুমে এমন দুর্ঘটনার হার তুলনামুলক বেশি। বিশেষ করে বাজ করে বিদ্যুতের লাইন ছিঁড়ে পানিতে পড়ে অতীতে বহু মানুষের হতাহত হওয়ার নজির আছে। এছাড়া শহরেও এক ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে বিদ্যুত সঞ্চালন লাইন মাটির ওপর থেকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সব বিদ্যুত সঞ্চালন লাইন মাটির নিচ দিয়ে নেয়া হবে। ভূগর্ভস্থ বিদ্যুত সঞ্চালন ব্যবস্থা হাওর অঞ্চলে করা আপাতত সম্ভব হচ্ছে না। কোন কোন অঞ্চলের অদূর ভবিষ্যতে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে এমন ব্যবস্থা করার চিন্তাভাবনা রয়েছে। অনেক অঞ্চলে নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে কোন দিনই হয়ত ভূগর্ভস্থ বিদ্যুত সঞ্চালন লাইন করা সম্ভব হয়ত হবে না। তবে সেসব জায়গায় উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। যাতে বাজ পড়ে, অন্য কোন কারণে বিদ্যুতের লাইন ছিঁড়ে না পড়ে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, ইতোমধ্যেই রাজধানীর অনেক এলাকার বিদ্যুত সঞ্চালন ব্যবস্থা ভূগর্ভে করা হয়েছে। যেসব এলাকায় ওভারব্রিজ রয়েছে, সেসব এলাকার বিদ্যুত সঞ্চালন ব্যবস্থা দ্রুত মাটির নিচে নেয়ার কার্যক্রম চলছে। পর্যায়ক্রমে ঢাকার সব এলাকায় একই ব্যবস্থা চালু হবে। বিদ্যুত সঞ্চালন লাইন ছাড়াও সকল বিদ্যুত লাইন এবং সাবস্টেশন আন্ডারগ্রাউন্ডে নেয়া হচ্ছে। বিদ্যুত বিতরণ ব্যবস্থা আধুনিক করতেই এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিদ্যুত বিতরণ কোম্পানিগুলো বলছে, ঢাকার বিদ্যুত সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়নে নতুন সাবস্টেশন নির্মাণের প্রয়োজন। অথচ এসব সাবস্টেশন বসানোর জন্য প্রয়োজনীয় জমি পাওয়া যাচ্ছে না। জমির অভাবে অনেক জায়গায় সাবস্টেশন বসানো সম্ভব হয়নি। বিদ্যুতের গ্রাহকদের উন্নত সেবা দিতেই এমন কার্যক্রম চলছে। বিদ্যুত, জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু জানান, বিদ্যুত বিতরণ ব্যবস্থা উন্নত করার কাজ শুরু হয়েছে। বিতরণ ব্যবস্থায় আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। ঢাকার কোন বিদ্যুত বিতরণ লাইন মাটির ওপরে থাকবে না। জাপানে বহুতল ভবনের নিচে সাবস্টেশন বসানো হয়। ওপরে দিব্যি মানুষ বসবাস করছেন। বাইরে থেকে সেখানে কোন সাবস্টেশন থাকার বিষয়টি বুঝার উপায় নেই। ঢাকায় নতুন সাবস্টেশন বসানোর জন্য প্রয়োজনীয় জমি পাওয়া যায় না। এজন্য ইচ্ছে থাকলেও, বিতরণ ব্যবস্থার উন্নতি করা সম্ভব হয় না। এজন্য সকল লাইন ও সাবস্টেশন মাটির তলায় স্থাপনের লক্ষ্যে কাজ চলছে। দেশের ৫২ শতাংশ জনগোষ্ঠীর কাছে দুই লাখ ৬৬ হাজার ৪৬০ কিলোমিটার বিতরণ লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুত সরবরাহ করছে পাঁচটি বিতরণ কোম্পানি। এ বিতরণ লাইনে মোট ট্রান্সফরমার রয়েছে ছয় লাখ ৪৩ হাজার। এর প্রায় সাড়ে ১৪ শতাংশ ওভারলোড সমস্যায় রয়েছে। বিতরণ কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ওভারলোড সমস্যা পল্লী বিদ্যুত সমিতির। পাওয়ারসেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন জানান, নতুন করে বিদ্যুত লাইন সম্প্রসারণের জন্য কোন জমি পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে সাবস্টেশন নির্মাণের জন্য কেউ জমি দিচ্ছে না। অথচ ডেসকো এবং ডিপিডিসিতে এখনই বেশকিছু সাবস্টেশন নির্মাণ করা প্রয়োজন। জমির অভাবে এবং অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা এড়াতে বিদ্যুতের সাবস্টেশন মাটির নিচে করার বিষয়ে কাজ চলছে। জানা গেছে, গত বছরের অক্টোবরে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর ঢাকা সফর করেন। সফরে বিদ্যুত উৎপাদন ছাড়াও সঞ্চালন এবং বিতরণ মিলিয়ে বিদ্যুত খাতে চীনের সঙ্গে ৪ দশমিক ৭৭৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি হয়। সঞ্চালন ব্যবস্থার উন্নয়নে পিজিসিবি এক দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিচ্ছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সঞ্চালন ব্যবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে। ২০২১ সালের মধ্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়ার কাজ চলছে। ঋণের অর্থে ৭৬৫ কিলোমিটার ডাবল সার্কিট লাইন নির্মাণ করা হবে। এর বাইরে আরও ৩০০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইনের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে। নতুন সাবস্টেশন নির্মাণ করা হবে ৪১টি। এছাড়া পুরাতন ৫৪ সাবস্টেশনের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে। ঢাকার বিদ্যুত ব্যবস্থা উন্নয়নে এক দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ নিচ্ছে ডিপিডিসি। এই ঋণের অর্থেই ঢাকার দুটি এলাকার বিতরণ লাইন চলে যাবে ভূগর্ভে। একই সঙ্গে ভূগর্ভস্থ সাবস্টেশনও নির্মাণ করবে ডিপিডিসি। হাতিঝিলের নান্দনিকতা ফিরিয়ে দিতে এই এলাকা দিয়ে প্রবাহিত বিদ্যুতের লাইন মাটির নিচে দিয়ে নেয়া হবে। ধানম-ি এলাকার লাইনকেও আন্ডারগ্রাউন্ডে নিয়ে যাওয়া হবে।
×