ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

লাইসেন্স বাতিল ২০ কোম্পানির

৩৪ কোম্পানির ওষুধ উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ হাইকোর্টের

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

৩৪ কোম্পানির ওষুধ উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ হাইকোর্টের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জীবন রক্ষায় মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদনে ব্যর্থ ৩৪ কোম্পানির ওষুধ উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ চূড়ান্তভাবে বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে জারি করা রুল এবসলিউট (যথাযথ ঘোষণা) করে বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি আতাউর রহমান খানের সমন্বয়ে হাইকোটর দ্বৈত বেঞ্চ সোমবার এ রায় দেন। এছাড়া এসব কোম্পানি গোপনে ওষুধ তৈরি বা বিক্রি করছে কিনা এবং কোম্পানিগুলোর সর্বশেষ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সরকারের ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালককে প্রতি তিন মাস পর পর আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে রায়ে। এই ৩৪ কোম্পানির মধ্যে ১১ কোম্পানির লাইসেন্স সরকার ইতোমধ্যে বাতিল করে দিয়েছে। তিনটি কোম্পানি বলেছে, তাদের জিএমপি (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিস) লাইসেন্স আছে। এ রায়ের ফলে ৩৪ কোম্পানির মধ্যে ২০ কোম্পানির ওষুধ উৎপাদন সম্পূর্ণ এবং বাকি ১৪ কোম্পানির এ্যান্টিবায়োটিক (ননপেনিসিলিন, পেনিসিলিন ও সেফালোস্পোরিন) ওষুধ উৎপাদন বন্ধের আদেশ বহাল থাকল বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। এছাড়া আদালত রায়ে কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। অপরদিকে বন্ধ কোম্পানিগুলোর পক্ষে ছিলেনÑ আইনজীবী আব্দুল্লাহেল বাকী, মওদুদ আহমেদ, হাবিবুল ইসলাম ভূঁইয়া, তানজীব-উল আলম, সাঈদ আহমেদ, এম এ হান্নান, এ কে এম তৌহিদুর রহমান, রিমি নাহরিন, আমিনুল ইসলাম ও পঙ্কজ কুমার কু-ু। মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদনে চূড়ান্ত ব্যর্থ ২০ কোম্পানি হলোÑ এক্সিম ফার্মাসিউটিক্যাল, এভার্ট ফার্মা, বিকল্প ফার্মাসিউটিক্যাল, ডলফিন ফার্মাসিউটিক্যাল, ড্রাগল্যান্ড, গ্লোব ল্যাবরেটরিজ, জলপা ল্যাবরেটরিজ, কাফমা ফার্মাসিউটিক্যাল, মেডিকো ফার্মাসিউটিক্যাল, ন্যাশনাল ড্রাগ, নর্থ বেঙ্গল ফার্মাসিউটিক্যাল, রেমো কেমিক্যাল, রিড ফার্মাসিউটিক্যাল, স্কাইল্যাব ফার্মাসিউটিক্যাল, স্পার্ক ফার্মাসিউটিক্যাল, স্টার ফার্মাসিউটিক্যাল, সুনিপুণ ফার্মাসিউটিক্যাল, টুডে ফার্মাসিউটিক্যাল, ট্রপিক্যাল ফার্মাসিউটিক্যাল এবং ইউনিভার্সেল ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড। এছাড়া মানসম্মত এ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ উৎপাদনের ব্যর্থ ১৪ কোম্পানি হচ্ছেÑ আদ্-দ্বীন ফার্মাসিউটিক্যাল, এলকাড ল্যাবরেটরিজ, বেলসেন ফার্মাসিউটিক্যাল, বেঙ্গল ড্রাগস, ব্রিস্টল ফার্মা, ক্রিস্ট্যাল ফার্মাসিউটিক্যাল, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যাল, মিল্লাত ফার্মাসিউটিক্যাল, এমএসটি ফার্মা, অরবিট ফার্মাসিউটিক্যাল, ফরমিক ল্যাবরেটরিজ, ফিনিক্স কেমিক্যাল, রাসা ফার্মাসিউটিক্যাল এবং সেভ ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড। ইতোমধ্যে লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে, ডলফিন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ড্রাগল্যান্ড লিমিটেড, জলপা ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড, কাফমা ফার্মাসিউটিক্যালস, ন্যাশনাল ড্রাগ ফার্মা লিমিটেড, নর্থ বেঙ্গল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, রিমো কেমিক্যালস লিমিটেড (ফার্মা ডিভিশন), রিড ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, সুনিপুণ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ইউনিটুডে ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ও ইউনিভার্সেল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। অন্যদিকে জিএমপি লাইসেন্স আছে বলে যাদের দাবি তার মধ্যে রয়েছেÑ আদ্-দ্বীন ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড, এভার্ট ফার্মা লিমিটেড, এমএসটি ফার্মা এ্যান্ড হেলথকেয়ার লিমিটেড। এদিকে হাইকোর্টের এই রায়ে তারা সংক্ষুব্ধ উল্লেখ করে এর বিরুদ্ধে আপীল করার কথা জানিয়েছেন, ডলফিন ফার্মাসিউটিক্যালস ও সুনিপুণ ফার্মাসিউটিক্যালসের আইনজীবী আব্দুল্লাহেল বাকী। অপরদিকে আদালতের পর্যবেক্ষণের বিষয়ে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানান, এ রায়ের ফলে ২০ কোম্পানি সম্পূর্ণ ও ১৪ কোম্পানির এ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ বহাল থাকল। তবে মামলার শুনানিতে দুই-তিনটি কোম্পানি বলেছে, তাদের উৎপাদনের মান উন্নয়ন হয়েছে। আদালত এসব কোম্পানির উৎপাদন পর্যবেক্ষণের জন্য ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। যে কমিটিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিনিধি, ড্রাগ এ্যাডমিনিস্ট্রেশনের এক, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের এক শিক্ষক ও পূর্বে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির একজনকে সদস্য করা হয়েছে। এ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ আরও বলেন, এসব কোম্পানি ইচ্ছা করলে কমিটির কাছে তাদের জিএমপি (গুডস ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিস) মান পর্যবেক্ষণের জন্য আবেদন করতে পারবে। এই কমিটি জিএমপি নীতিমালা অনুসরণ সম্পর্কিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ড্রাগ এ্যাডমিনিস্ট্রেশন তাদের লাইসেন্স ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারবে। কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে গৃহীত পদক্ষেপ বছরে চারবার ড্রাগ এ্যাডমিনিস্ট্রেশনের মহাপরিচালককে আদালতে জমা দিতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাওয়া কোম্পানির বিষয়ে মনজিল মোরসেদ বলেন, আদালতের নির্দেশ মোতাবেক ৭-৮ কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল করেছে ড্রাগ এ্যাডমিনিস্ট্রেশন। আদালত এসব কোম্পানির বিষয়ে কিছু বলেনি। তাই তাদের লাইসেন্স বাতিলই থাকবে। এর আগে গত ৩১ জানুয়ারি এ মামলায় জারি করা রুলের ওপর ৮ কার্যদিবস শুনানি শেষে রায়ের জন্য ৯ ফেব্রুয়ারি দিন নির্ধারণ করেন। পরে তা পিছিয়ে ১৩ ফেব্রুয়ারি রায়ের নতুন দিন নির্ধারণ করা হয়। ২০১৬ সালের ৭ জুন ২০ কোম্পানির ওষুধ উৎপাদন এক সপ্তাহের মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে অপর ১৪ প্রতিষ্ঠানের এ্যান্টিবায়েটিক ওষুধ উৎপাদনও বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়। ওইদিনই মানসম্মত ওষুধ উৎপাদনে ব্যর্থ ২০ কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল ও ১৪ কোম্পানির এ্যান্টিবায়েটিক লাইসেন্স বাতিলে সরকারের নিষ্ক্রিয়তাকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং তাদের লাইসেন্স কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এসব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিলের নির্দেশনা চেয়ে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে ২০১৬ সালের ৫ জুন হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়। আবেদনে বলা হয়, ভেজাল এবং নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো চিহ্নিত করতে ২০১৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ তদন্ত কমিটি গঠন করে। বিশেষজ্ঞ কমিটি দেশের ৮৪ ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সরেজমিন পরিদর্শন শেষে এ বিশেষজ্ঞ তদন্ত কমিটি একটি প্রতিবেদন পেশ করে। যাতে মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদনে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হওয়া ২০ ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করা হয়। কিন্তু সেই সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়ায় রিট আবেদনটি করা হয়।
×