ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিমান চলাচলে জীবন ঝুঁকি সৃষ্টি করলে মৃত্যুদণ্ড

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

 বিমান চলাচলে জীবন ঝুঁকি  সৃষ্টি করলে মৃত্যুদণ্ড

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ নির্বিঘেœ বিমান পরিচালনায় অসুবিধা সৃষ্টি করে মানুষের জীবন ঝুঁকিতে ফেললে মৃত্যুদ-ের পাশাপাশি ৫ কোটি টাকা জরিমানার বিধান রেখে আইন হচ্ছে। এ লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ‘বেসামরিক বিমান চলাচল আইন ২০১৭’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এছাড়া ‘বস্ত্রনীতি-২০১৭’ ও ‘বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন আইন-২০১৭’ চূড়ান্ত অনুমোদন নিয়েছে মন্ত্রিসভা। পাশাপাশি নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন-২০১৭। গত বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি বেসামরিক বিমান চলাচল আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল মন্ত্রিসভা। আইনটির চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে নতুন করে বিভিন্ন অপরাধের জন্য সাজার মাত্রা বাড়ানো হয়েছে। বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলাম সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৬০ সালের ‘দ্য সিভিল এভিয়েশন অর্ডিন্যান্স’ হালনাগাদ করে এই খসড়া তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন অপরাধে সাজাও বাড়ানো হয়েছে এ খসড়ায়। যদি কোন ব্যক্তি এমন কোন কাজ করেন, যাতে নির্বিঘœভাবে বিমান পরিচালনায় অসুবিধার সৃষ্টি হয় এবং মানুষের জীবন ঝুঁকির সম্মুখীন হয়, তবে তা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। এ ধরনের অপরাধের জন্য মৃত্যুদ- বা যাবজ্জীবন কারাদ-, সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত অর্থদ- দেয়া হতে পারে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, আইনে নতুন করে মৃত্যুদ-ের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। ‘এয়ার নেভিগেশন অর্ডার’ অর্থাৎ, বিমান চালানোর অনুমতির বিধান লঙ্ঘন বা সনদ জাল করলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর সশ্রম কারাদ-, সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা অর্থদ- বা উভয় দ-ের বিধান রাখা হয়েছে খসড়ায়। বিমানের নেভিশগনের সঠিক আলো ও সংকেতের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করলে যাবজ্জীবন কারাদ-, পাঁচ কোটি টাকা অর্থদ- বা উভয় দ- হতে পারে। আইন অনুযায়ী বিমানের নেভিগেশনে হস্তক্ষেপ বড় ধরনের অপরাধ। কেউ বিমান ভ্রমণের সময় বিপজ্জনক পণ্য বহন করলে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদ-ের সঙ্গে ৫০ লাখ টাকা জরিমানার মুখে পড়বেন এই আইন হলে। বিপজ্জনক পণ্যের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, এমন কোন দ্রব্য বা বস্তু যা স্বাস্থ্য, সম্পত্তি বা পরিবেশের ক্ষতি করতে পারে অথবা এসবের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বা নিরাপত্তা বিঘিœত করতে পারে। এছাড়া আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ যেসব পণ্য বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত করেছে, সেগুলোও এই তালিকায় থাকবে। এ আইন পাস হলে অবৈধভাবে বাংলাদেশের আকাশসীমায় প্রবেশের জন্য তিন থেকে সাত বছরের সশ্রম কারাদ- এবং সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা জরিমানা গুনতে হবে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের কিছু নির্দেশনাও নতুন প্রস্তাবিত আইনে যুক্ত করা হয়েছে। বস্ত্র শিল্পের উন্নয়নে নতুন বস্ত্রনীতি ॥ সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ‘বস্ত্রনীতি-২০১৭’ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ১৯৯৫ সালের বস্ত্রনীতিকে আপডেট করে নতুনভাবে আনা হয়েছে। নতুন নীতিতে ১১টি বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, নীতিতে আলাদা প্রস্তাব রয়েছে। ভিশন-মিশন ছিল না আগে, এটা যুক্ত করা হয়েছে। উদ্দেশ্যটা বিস্তারিত বলা হয়েছে। সংজ্ঞাগুলো দেয়া হয়েছে। বস্ত্র খাতে বিভিন্ন উপখাত বিষয়ক উদ্যোগের বিষয়ে বলা হয়েছে। বস্ত্র শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদন ও সরবরাহের বিষয়গুলো বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। নীতিতে মানবসম্পদ উন্নয়নের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে জানিয়ে শফিউল আলম বলেছেন, আর্থিক কোন কোন খাতে প্রণোদনা দেয়া হবে নীতিতে তা দেয়া আছে। বস্ত্রখাতে বিদেশী বিনিয়োগ কি হবে, তাদের জন্য কি সুযোগ-সুবিধা থাকবে সে বিষয়ে বলা হয়েছে। বস্ত্রনীতি বাস্তবায়ন কৌশল এবং বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন নামে নতুন একটি অধ্যায় আনা হয়েছে। নীতির উদ্দেশ্যের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেছেন, কর্মসংস্থান বৃদ্ধির উপযোগী করে বস্ত্র ও পোশাক খাতকে গড়ে তোলা, বস্ত্র পণ্যের অভ্যন্তরীণ সিংহভাগ পূরণ এবং মধ্য ও উচ্চমূল্য সংযোজিত রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে প্রাথমিক বস্ত্রশিল্পের অধিকতর উন্নয়ন। প্রতিযোগিতামূলক আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বহুমুখী বস্ত্র পণ্যের উৎপাদন ও রফতানি বৃদ্ধিতে সহায়তা করা। এছাড়া প্রাথমিক বস্ত্রখাতের সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে স্পিনিং, উইভিং, নিটিং, ডাইং, প্রিন্টিং, ফিনিশিং, হোশিয়ারি, হোম টেক্সটাইল, টেরিটাওয়েল, রফতানিমুখী তৈরি পোশাক, রেশম শিল্প ইত্যাদি উপখাতের ভূমিকা বিবেচনায় পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করার কথা নীতিতে বলা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেছেন, নীতির উদ্দেশ্যে আরও বলা হয়েছে, দেশের বস্ত্রখাতে উৎপাদিত পণ্য সর্বাধিক প্রাধিকার প্রাপ্ত শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধার স্বীকৃতি আদায় এবং যাতে সকল দেশের বাজারে সহজে প্রবেশাধিকার লাভ করে সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। পরমাণু শক্তি কমিশন আইন চূড়ান্ত অনুমোদন ॥ ‘বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন আইন-২০১৭’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ১৯৭৩ সালের বাংলাদেশ এটমিক এনার্জি অর্ডারকে বাংলায় অনুবাদ করে আপডেট করে নিয়ে আসা হয়েছে। আগের বিষয়গুলোই নতুন আইনে নিয়ে আসা হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজন চেয়ারম্যান ও চারজন সদস্যের সমন্বয়ে কমিশন গঠিত হবে জানিয়ে শফিউল আলম বলেছেন, সরকারের নির্ধারিত শর্তে তারা নিযুক্ত হবেন। চেয়ারম্যান হবে সংস্থার প্রধান। প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী কমিশন খাদ্য, কৃষি, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, পরিবেশ ও শিল্পের ক্ষেত্রে পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের প্রসারে কাজ করবে। তিনি বলেছেন, শিক্ষা ও সেবা বিষয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করবে কমিশন। পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র ও বিদ্যুত উৎপাদন সম্পর্কিত উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন, গবেষণা উন্নয়ন কেন্দ্র স্থাপনসহ এ জাতীয় কাজও করবে কমিশন। খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন নীতিগত অনুমোদন ॥ বৈঠকে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন-২০১৭ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেছেন, এ বিষয়ক অন্যান্য আইন যেমন রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইনের আদলে এ আইনটি সাজানো হয়েছে।
×