ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মা সেতুতে চ্যালেঞ্জ নেয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাল মন্ত্রিসভা

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

পদ্মা সেতুতে চ্যালেঞ্জ নেয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাল মন্ত্রিসভা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্র নিয়ে বিশ্বব্যাংকের তোলা অভিযোগ কানাডার আদালতে প্রমাণিত না হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ অভিনন্দন জানানো হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এক মন্ত্রী ও এক উপদেষ্টা তখন অপর এক মন্ত্রী ও এক উপদেষ্টাকে বাদ দেয়ার জন্য আমাকে জোর করেন। অপর এক নিরাপরাধ কর্মকর্তা কারাভোগ করেন। কিন্তু আজ প্রমাণিত তারা নিরাপরাধ। এই নিরাপরাধ ব্যক্তিরা কেন শাস্তি পাবে? সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী বলেন, সত্য কোন না কোন দিন প্রকাশিত হয়ই। তারা টাকা না দিয়ে সেখানে দুর্নীতির অভিযোগ করে। এতে এক কর্মকর্তাকে জেল খাটতে হয়েছে। জয়, পুতুলকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ পর্যন্ত করা হয়েছে। একজনকে মন্ত্রিত্ব হারাতে হয়েছে। তা হলে এই নিরাপরাধ মানুষ কেন শাস্তি পেল? তাদের কী হবে? প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুহাম্মদ ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি হিসেবে রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফোন করা হয়েছিল। হিলারি ক্লিনটন ফোন করেছিলেন। কিন্তু ৬০ বছরের বেশি বয়সের লোককে রাখার সুযোগ ছিল না। তাকে উপদেষ্টা থাকতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা না শুনে আদালতে মামলা করেন। মামলার রায়ে তাকে এই পদে না থাকার জন্য বলা হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় পদ্মা সেতু নির্মাণে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়েও কথা হয়। বর্তমান সরকারের অবস্থান ছিল পদ্মা সেতুতে কোন দুর্নীতি হয়নি এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল, যদি তারা দুর্নীতির কথা বলে তবে তাদেরই তা প্রমাণ করতে হবে এবং তারা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ ব্যর্থতার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক পরিম-লে অনেক উজ্জ্বল হয়েছে, সেজন্য মন্ত্রিসভা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিনন্দন জ্ঞাপন করেছে। পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ তদারকির পাঁচ কোটি ডলারের কাজ পেতে এসএনসি-লাভালিনের কর্মীরা ২০১০ ও ২০১১ সালে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের ঘুষ দেয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে মামলা হয়েছিল কানাডার আদালতে। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে কানাডার আদালত গত শুক্রবার ওই মামলার তিন আসামিকে খালাস দেয়। রায় উদ্ধৃত করে কানাডিয়ান পত্রিকা দ্য গ্লোব এ্যান্ড মেইল বলেছে, ফোনে আড়ি পেতে সংগ্রহ করা যে তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রসিকিউশন মামলা সাজিয়েছিল তাকে গালগল্প ও গুজব বলে ছুড়ে ফেলেছেন বিচারক। এর আগে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনও জানিয়েছিল, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির কোন প্রমাণ তারা পায়নি। বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এ অবকাঠামো প্রকল্পে প্রতিশ্রুত অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ানোর পর নিজস্ব অর্থায়নে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। শফিউল আলম বলেন, কানাডার আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিসভায় সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিশ্বব্যাংককে মাফ চাইতে বলেছেন। আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থার বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেয়ার দাবিও কেউ কেউ তুলেছেন। এসব বিষয়ে কোন আলোচনা হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, না, সেখানে শুধু আমাদের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, এডিবির একটি স্টাডি হচ্ছে- পদ্মা সেতু হলে বাংলাদেশের জিডিপি ১ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে যাবে। এখন (জিডিপি) ৭ দশমিক ১ শতাংশের আশপাশেই থাকে। যদি পদ্মা সেতু আরও আগে হতো তাহলে প্রতি বছর ১ দশমিক ২ শতাংশ করে ৮-৯ শতাংশ গ্রোথ হত, এটা থেমে গেছে। বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে সরে না গেলে অনেক আগেই এ সেতু হতো মন্তব্য করে শফিউল বলেন, ২০১৪ নাল নাগাদ হয়ত পদ্মা সেতুর বড় অবয়ব দেখতে পেতাম, এতদিনে ব্রিজটি বাস্তবে পেয়ে যেতাম। কিন্তু ওই স্ক্যান্ডালের কারণে উন্নয়নটা অনেক পিছিয়ে গেছে। ২০১৬ সালে আমরা পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে যেতে পারতাম, সেটা পিছিয়ে গেছে; সরকারের ভাবমূর্তিও নষ্ট হয়েছে। পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী কী বলেছেন- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পুরনো অবস্থানটাই ঠিক। উনার চ্যালেঞ্জ ছিল বিশ্বব্যাংক যেহেতু অভিযোগ তুলেছে, তাদেরই প্রমাণ করতে হবে যে আমরা দুর্নীতি করেছি। তাতে প্রমাণিত হয়েছে যে, আমরা কোন দুর্নীতি করিনি। বিশ্বব্যাংক প্রমাণ দিতে পারেনি। কানাডার আদালতের রায়েই প্রমাণ হয়েছে এখানে কোন দুর্নীতি হয়নি। বিশ্বব্যাংকের কাছে ক্ষতিপূরণ চাওয়া হবে কিনা- এমন প্রশ্নে শফিউল বলেন, সেটা সরকারের সিদ্ধান্ত। ক্ষতিগ্রস্তরা মামলা করলে করতে পারেন, সেটা উনাদের বিষয়। রোহিঙ্গাদের জন্য মালয়েশিয়ার ত্রাণ ॥ মালয়েশিয়ার সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য যে ত্রাণ পাঠিয়েছে, সে বিষয়েও মন্ত্রিসভায় আলোচনা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ নিয়ে এ ত্রাণ পাঠিয়েছেন। ত্রাণ নিয়ে একটি জাহাজ কুতুবদিয়ায় নোঙর করেছে। ওখান থেকে ছোট ছোট জাহাজে করে কক্সবাজারে এনে ক্যাম্পগুলোতে ত্রাণ বিতরণ করা হবে।
×