ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকার দিনরাত

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ঢাকার দিনরাত

আজ ভালবাসা দিবস। গতকাল পেরিয়ে এলাম পহেলা ফাল্গুন। এই বঙ্গে ফাগুন আর ভালবাসা দিবস আসে হাত ধরাধরি করে। সুন্দর একটি সময়ের ভেতর দিয়ে চলেছি আমরা। তাই যত অসুন্দর অশোভন দূর হয়ে যাক। রাজধানীর মানুষের অকল্যাণ বয়ে আনে যেসব নীচতা ও ক্ষুদ্রতাÑ তার অবসান হোক। ছিনতাই কি থামবে না! গত রবিবার দুপুরে ঢাকার উত্তরায় অস্ত্রধারী ছিনতাইকারীরা একটা চলন্ত প্রাইভেট কার থামিয়ে তার যাত্রী মা ও মেয়েকে গুলি করে ছয় লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়। পরদিন সোমবার সাভারে ছিনতাইকারীরা একটা চলন্ত বাস থামিয়ে তিন যাত্রীকে গুলি করে মোট ছয় লাখ টাকা ছিনতাই করে। মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় এক ব্যক্তি ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে ১২ লাখ টাকা খোয়ান; ছিনতাইকারীরা ফাঁকা গুলি করে তাঁর টাকা ছিনিয়ে নেয়। তার কিছু সময় পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ক্লাবের সামনের সড়কে মোটরসাইকেল আরোহী এক ব্যবসায়ীকে থামিয়ে গুলি করে কয়েকজন ছিনতাইকারী। আর শুক্রবার রাজধানীর টিকাটুলীতে ছিনতাইকারীরা এক চলন্ত বাসের ভেতরে দুই মাছ ব্যবসায়ীকে ছুরিকাঘাত করে টাকাপয়সা ছিনিয়ে নেয়। এ মাসের এক সপ্তাহেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় লোকজনের ছুরিকাহত ও গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। মানুষ শ্রম ও মেধা দিয়ে অর্জন করবে, আর রাস্তার লোকেরা রাস্তায় ওঁৎ পেতে থেকে সেসব ছিনিয়ে নেবে! এই ব্যাপার চলে আসছে যুগের পর যুগ ধরে, প্রতিটি দিন, এই রাজধানীর বহু রাস্তায়। পরিস্থিতির উন্নতি হবে কী! বরং অবনতিই ঘটে চলেছে। আপনি থানায় যান ছিনতাইয়ের অভিযোগ নিয়ে, হাতেনাতে প্রমাণ পেয়ে যাবেন। পুলিশ মামলা নেবে না। ছিনতাইয়ের মামলা তারা নেয় না, চুরিটুরির অভিযোগ নথিবদ্ধ করে বটে। কিন্তু ছিনতাইয়ের মামলা নেয়ার ব্যাপারে তাদের ভীষণ এলার্জি। পথচারীরাও আজকাল ছিনতাইকারীর পেছনে দৌড়ায় না। লাভ নেই কোন। ছুরিকাঘাতে কিংবা ককটেল বিস্ফোরণে আহত কিংবা নিহত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। সমকালীন একটি উপন্যাসে পড়েছিলাম, একেবারে ছিঁচকে দুটো ছিনতাইকারী অফিসফেরতা এক ভদ্রলোকের পথ আগলে তার কাছ থেকে বিশেষ কিছু না পেয়ে মজা করেই, বলা যায় খেলাচ্ছলেই পেটের গভীরে ছুরি ঢুকিয়ে দেয়। কত তুচ্ছ কারণে অপমৃত্যু। এতটাই ঝুঁকিপূর্ণ এখন নগরবাসীর জীবন! আপনি বলবেন, এ তো উপন্যাসে হয়। আমি বলব, আসলে এসব বাস্তবেই হচ্ছে। এই রাজধানীতেই। স্মরণ করতে পারি প্রায় দেড় দশক আগের কথা। নিউমার্কেটের সামনে সেই সন্ধ্যায় আমারও পথ আগলে দাঁড়িয়েছিল ওই দেবদূতেরা। আমি বেঁচে যাই। কিন্তু ওই সন্ধ্যায় কাছাকাছি সময়ে আরেকজনের প্রাণ যায়। তখন ঈদের মৌসুম। ঘটনাটি ঘটেছিল মৌচাক মার্কেটের সামনে। ছিনতাইকারীর ছুরির আঘাতে এক ক্রেতার মৃত্যু ঘটে। এমনটা প্রতিবছর হয়ত ঘটে না। তবে কখনও কখনও ঘটছে। অবশ্য মানুষ এখন আর ছিনতাইকারীর সঙ্গে লড়ে না। কিন্তু পুলিশের কী হয়েছে? বহু বর্ণিল বসন্তে ভালবাসা দিবস ভ্যালেন্টাইন ডের পুরো নামটা আসলে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন্স্ ডেÑ ভ্যালেণ্টাইন নামক তৃতীয় শতাব্দীর দুজন সন্তের নামানুসারে। আমাদেরও আছে প্রেমের কাহিনী। প্রাচীন ভারতবর্ষে রয়েছে রাধাকৃষ্ণের গল্প। মধ্যযুগীয় পারস্য থেকে আমরা পেয়েছি শিরি-ফরহাদ আর লায়লা-মজনুর করুণ কাহিনী। প্রেম দিয়েই তো আমাদের পুঁথিপত্র পরিপূর্ণ। রাধাকৃষ্ণের চিত্তাকর্ষক প্রেমের গল্প থেকেই কি উৎসারিত হয়েছে উপমহাদেশের প্রেমসমৃদ্ধ কাব্যশিল্পগাথার ঐতিহ্য? তাঁরা বাস্তব ছিলেন কি ছিলেন না তা হতে পারে ইতিহাসের পণ্ডিতদের বিতর্কের বিষয়। কিন্তু তাঁদের প্রেম যে একটা অনুপম মূর্তি নির্মাণ করে গেছে যুগযুগান্তের প্রেমপুজারীদের জন্যে তাতে তো কাল্পনিক কিছু নেই। ভালবাসা দিবসের ঢাকার কথা কি লিখে শেষ করা যাবে? ভালবাসা দিবসকে এখন বাংলাদেশের তরুণ সমাজ বেশ ভালভাবেই উপভোগ করে। নানা ব্যক্তিগত আয়োজনে তারা দিনটিকে স্মৃতিময় করে রাখার চেষ্টা করে। একইসঙ্গে ইলেক্ট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়া ভালবাসা দিবসকে কেন্দ্রে রেখে বহু বর্ণিল একটি বৃত্ত রচনা করে, যার সময়সীমা ১৪ ফেব্রুয়ারির ২৪ ঘণ্টাকে ছাপিয়ে বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। বলা অসঙ্গত হবে না যে, বিগত এক-দেড় দশকে আমাদের ভালবাসা দিবস উদ্যাপনের বহু-মাত্রিকতা তার পরিসর ও ওজন বিবেচনায় পৃথিবীর যে কোন দেশকে ছুঁয়ে ফেলতে পারঙ্গম। আমাদের প্রেমিকরা বিশ্বের কোন দেশের প্রেমিকের তুলনায় সামান্যতমও পিছিয়ে নেই। আর কে না জানে যে, প্রেমের কোন বয়স নেই। আমি সত্তরোর্ধ এমন ব্যক্তিকেও চিনি (নাম বা পেশা বলার কী দরকার!) যিনি এখনও প্রেমকাতর একজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণের প্রতিযোগী হতে সক্ষম, প্রেমপ্রকাশ ও প্রেম উপাদান গ্রহণ উভয় ক্ষেত্রে। সত্যি বলতে কি, জীবনের এক শ’ একটা যন্ত্রণার ভেতর সেঁধিয়ে থাকা মানুষের দেহমনে একটুখানি হলেও ভালবাসার সুবাতাস এসে আছড়ে পড়ে এই দিন, হোক তা কয়েকটি মুহূর্তের জন্য। বড়ই বস্তুবাদী আর কাঠঠোকরার ঠোঁটের মতোই কঠিন ও জটিল স্যুটেড-ব্যুটেড ব্যক্তিও ভালবাসার মন্দিরায় মনটাকে ভিজিয়ে ফেলার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকেন। গৌরচন্দ্রিকা বাদ দিয়ে আসল কথায় আসি। শুরুতেই বলেছিলামÑ এই বঙ্গে ফাগুন আর ভালবাসা দিবস আসে হাত ধরাধরি করে। ভালবাসা দিবসের বারতাই যেন এখন বাংলার ফাল্গুন আকাশে-বাতাসে, মাটিতে ও কংক্রিটে ছড়িয়ে দেয়। বাংলাদেশের বাংলা পঞ্জিকায় পহেলা ফাল্গুন হলো তেরোই ফেব্রুয়ারি। আর ভ্যালেন্টাইন ডে ঠিক তার পরের দিন। অমর একুশে গ্রন্থমেলায় এসে আছড়ে পড়ে ফাল্গুন আর ভালবাসা দিবসের ঢেউ। ভালবাসা দিবসের রূপ-রস-গন্ধ-উত্তাপ রাজধানীর যে অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান হয়, তা হলো এ গ্রন্থমেলা। গ্রন্থমেলা যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন প্রাঙ্গণ বাংলা একাডেমিতে না হতো, তাহলে পহেলা ফাল্গুন আর ভালবাসা দিবসে আমরা ভালবাসার ওই সর্বব্যাপী রূপছটা থেকে অনেকখানি বঞ্চিত হতাম কিনা, সেটা বড় জিজ্ঞাসা। বইমেলা সত্যিই এক মুক্তাঞ্চল, তা যতই পুলিশ-মেটাল ডিটেক্টর-সিসিটিভি ক্যামেরার শ্যেনদৃষ্টি থাকুক না কেন। দলে দলে তরুণ-তরুণী বইমেলায় এসে উদ্যাপন করেন ভালবাসা দিবস। ভাষার মাসে দরকারি কথা সামনের মঙ্গলবার একুশে ফেব্রুয়ারি। অমর শহীদ দিবস। তারপরই আমাদের ভাষা নিয়ে আবেগে ভাটির টান লাগবে। তাই এখনই কিছু দরকারি কথা বলে নেয়া চাই। প্রতিক্ষণ জীবনধারণের জন্য পানি ও বাতাসের অপরিহার্যতার সমতুল্য মাতৃভাষা। মা আর মাসি যেমন এক নয়, তেমনি মায়ের ভাষা ও পরভাষা এক হতে পারে না। তাই মাতৃভাষার উচ্চতার কাছে অন্যভাষা নিশ্চিতরূপেই খর্বকায়। সে কারণে সত্যিকারের জ্ঞানার্জনের জন্য মাতৃভাষার বিকল্প কিছু হতে পারে না। জ্ঞানের পূর্ণতার জন্যেও নয়। অথচ পৃথিবীর কোন একটি জাতির কোন একটি ভাষার বইয়ে তো আর বিশ্বের সব জ্ঞান-বিজ্ঞান মেলে না। সক্রেটিস, আইনস্টাইন, শেক্সপীয়ার, জেমস জয়েস, রবীন্দ্রনাথÑ এঁদের মায়ের ভাষা এক নয়। তবে বিশ্বজননীর সন্তান এঁরা সবাই। সে অর্থে তাঁদের মাতৃভাষা আবার অভিন্নÑ সেটি মানবভাষা, মানবজাতির জ্ঞানের ভাষা। বিশ্বজ্ঞানের যে নিরন্তর প্রবাহ তাতে এঁরা এবং এমনি হাজারো মনীষী জ্ঞান সংযুক্ত করে গেছেন। সেসব জ্ঞান পরিপূর্ণরূপে অর্জনের মাধ্যম মাতৃভাষাই; বাঙালীর কাছে বাংলা, রুশীর কাছে রুশ। পাশ্চাত্যের এক ভাষাবিদ বলেছিলেন, একভাষিতা নিরক্ষরতার মতোই মন্দ, কারণ তা বৈচিত্র্যকে অস্বীকার করে। কথাটাকে উপেক্ষা করা চলে না। যদিও পাশাপাশি এ সত্যও অনস্বীকার্য যে, মাতৃভাষার সমব্যবহারেই আমাদের অপর ভাষার জ্ঞান গ্রহণ করা সমীচীন। কারণ আপন ভাষার উচ্চতাকে ছুঁতে অক্ষম ভিনভাষা। জাপান, ফ্রান্স, রাশিয়াসহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর দিকে দৃষ্টি দিলে আমরা বুঝে নিতে পারব তারা মাতৃভাষার উচ্চতার গুরুত্ব অনুধাবনে সমর্থ হয়েছিল বলেই সেই উচ্চতাকে আশ্রয় ও অবলম্বন করেই এগিয়ে গেছে সামগ্রিক উন্নতির সোপানে। আপন উচ্চতাকে ধারণ করে আপনার উন্নতি- এটাই মোক্ষম কথা। বাঙালী পরিবারের সন্তান হলেই যে জন্মসূত্রে আমরা বাংলা ভাষার কেউকেটা হয়ে যাবÑ এমনটি ভাববেন না। পরিবারের সদস্যদের সান্নিধ্যে কানে শুনে শুনে শিশু প্রাথমিক বাংলা বোল রপ্ত করে বটে, কিন্তু মাতৃভাষাটা শুদ্ধরূপে লেখা ও পড়ার জন্য অবশ্যই ভাষাশিক্ষা জরুরী। তাই বাঙালী হয়ে জন্মেছি বলে বাংলা আমার মজ্জাগত হলেও মগজে তার রূপ সুষ্ঠু রূপ প্রোথিত করতে হলে আর পাঁচটা ভাষার মতোই নিজের ভাষাটাও শিখে নিতে হবে। আর ভাষার প্রতি ভালবাসা না থাকলে তার প্রয়োগে বিকৃতি চলে আসতেই পারে। ভাষা শুধু ভালবাসার বিষয় নয়, এটির জন্য দায়িত্ব ও অঙ্গীকারবোধ থাকতে হয়। বাংলা বর্ণ যখন আমরা ব্যবহার করি তখন আমাদের মনে রাখা চাই. এককটি বর্ণ আমার শহীদ ভাইয়ের রক্তে পরিশুদ্ধ। সেই ভাষাকে অশুদ্ধ করার কোন অধিকার কি আমার আছে? যদি আমি তা করি তবে অন্যায়, অন্যায্য এবং অপরাধই করি। আর সজ্ঞানে যারা এটা করেন তারা বিলক্ষণ জ্ঞানপাপী। যে যত বেশি ‘শিক্ষিত’ ও ‘বিশিষ্ট নাগরিক’, তার তত বেশি সুযোগ রয়েছে ভাষাকে বিনষ্ট ও বিকৃতির দিকে ঠেলে দেয়ার। আমাদের চারপাশে এমন মানুষের সংখ্যা কি দিন দিন বাড়ছে? ভাষাশিক্ষা পরিবার থেকে শুরু হলেও বিদ্যালয় এবং জীবনের পাঠশালায় সেটি পরিমার্জিত ও বিস্তৃত রূপ লাভের প্রয়াস পায়। আপনি নিজে যেমন সারাজীবন ভাষা শিখছেন এবং তা লালন করছেন, একইসঙ্গে আপনিও ভাষাকে ছড়িয়ে দেয়ার কাজটি করছেন। তাই ভাষা ব্যবহার কখনও হেলাফেলার নয়। কথা বলতে গিয়ে আপনি একটি বাক্যের মধ্যে যদি একাধিক ভাষা ব্যবহার করেন, মানে কিছুটা বাংলা ও কিছুটা ইংরেজী বা হিন্দিতে বলেন তবে নিশ্চিতরূপেই আপনি ভাষাসচেতন নন। আবার বাংলা ভাষায় বলতে গিয়ে উচ্চারণে যদি অন্য ভাষার স্বরভঙ্গি প্রকাশ পায় তাহলেও বাংলা ভাষার বিকৃতি ঘটবে। আমরা বায়ুদূষণ সম্পর্কে জানি, অথচ বিশেষ গুরুত্ব দিই না। বাতাস ছাড়া আমাদের এক মুহূর্ত চলে না। অথচ সেই বাতাস যদি বিষাক্ত হয়ে ওঠে তারপরও তার ভেতর থেকে শ্বাস গ্রহণ করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করি। আমাদের ফুসফুস তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং আমাদের ব্যধিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফুসফুসকে যদি প্রাণের প্রতীক ধরি তবে আমাদের স্বীকার না করে উপায় নেই মাতৃভাষার দূষণও ফুসফুসকেই আঘাত করে। বায়ুদূষণের ক্ষতি আমরা সঙ্গে সঙ্গে টের পাই না। তেমনি ভাষা দূষণের বিপদও আমরা বুঝে উঠতে পারি না। অথচ তা আমাদের জীবনসত্তাকে অনেকটা উন্মূল করে দেয়। অনেক রোগ সংক্রামক, যেমন ভাষাদূষণের রোগও সংক্রামক। চারপাশের মানুষের মধ্যে অনেকটা অজান্তেই সেই রোগ অনেকেই ছড়াচ্ছেন। দুর্বল দেহ যেমন সংক্রামক রোগে কাবু হয়, ভাষাচর্চাকারীও ঠিক একইভাবে অশুদ্ধ, বিকৃত ও দূষিত ভাষার সংস্পর্শে এসে সংক্রমিত হয়। এটা মারাত্মক। তাই বাঙালী মায়ের গর্ভে যদি হয় আমার জন্মÑ তবে আজ থেকেই সতর্ক-সচেতন হব। মায়ের অসম্মান করব না, মায়ের ক্ষতি হতে দেব না। মায়ের ভাষা সম্বন্ধেও একই কথা। মায়ের নাম যেমন কখনোই ভুল বানানে লিখি না, তেমনি মায়ের ভাষাও কখনোই ভুল বানানে লিখব না। এই হোক আমার প্রতিজ্ঞা। ইংরেজী-মাধ্যম স্কুলে বাংলা অলিম্পিয়াড রাজধানীর ইংরেজী-মাধ্যম স্কুলগুলো ভাষার মাসে বাংলার সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে নানা আয়োজন করে থাকে। এর ভেতর থাকে আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতাও। প্রতি বছরই এ জাতীয় কোন না কোন আয়োজনে যোগ দেবার সুযোগ ঘটে। একটা সাধারণ ধারণা যে, ইংরেজী পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা বাংলায় কাঁচা হয়ে থাকে। ঢাকার তিনটে প্রধান ইংরেজী-মাধ্যম স্কুলে বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশ কেন্দ্রিক আয়োজনের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ধারণাটি সঠিক নয়। গত শনিবার টার্কিশ হোপ স্কুলে অনুষ্ঠিত বাংলা অলিম্পিয়াডে যোগ দিয়েছিল ঢাকার সব কটি ইংরেজ-মাধ্যম স্কুলের শিক্ষার্থীরা। নাচ-গান-আবৃত্তি-ছবি আঁকা- রচনা প্রতিযোগিতাÑ নানামুখী আয়োজনে মুখর হয়ে উঠেছিল স্কুল ক্যাম্পাস। প্রতিটি শাখার জন্য বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্ব স্ব ক্ষেত্রে স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গ। রচনা প্রতিযোগিতার বিচারক হয়ে গিয়েছিলাম দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন শিক্ষক, একজন নাট্যকার এবং আমি। শিক্ষার্থীরা দেড় ঘণ্টা সময় পেয়েছিল ‘বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য’ শীর্ষক রচনা প্রতিযোগিতার জন্য। রচনাগুলো নিরীক্ষণের পাশাপাশি আমরা চারজন শিক্ষার্থীদের লেখার মান, সৃজনশীলতা এবং অভিনবত্ব নিয়ে আলাপ করছিলাম। লক্ষণীয় যে, কোন কোন শিক্ষার্থী বইয়ের ভাষা বাদ দিয়ে সম্পূর্ণ নিজের ভাষায় নিজের অভিজ্ঞতা লিখেছে। ঢাকায় বর্ষবরণের কথা বলতে গিয়ে দু’শ প্রতিযোগীর প্রায় সবাই পান্তা-ইলিশের কথা লিখেছে। শিক্ষার্থীরা যা শেখে, তাই তো লিখবে। পয়লা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ খাওয়ার ফ্যাশন আমাদের সংস্কৃতি নয়Ñ এটা তাদের কেউ বলে দেয়নি। তাছাড়া একই উৎসবের মঙ্গল শোভাযাত্রা বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি লাভ করেছেÑ এই তথ্যটিও প্রত্যেকেরই অজানা। কোন একটি স্কুলের কোন শিক্ষক যদি ছাত্রদের এ তথ্যটি জানাতেন, তবে কারও না কারও খাতায় তার প্রতিফলন আমরা দেখতে পেতাম। শিক্ষা যে শুধু পুস্তক পাঠের বিষয় নয়, এটি আমাদের অনুধাবন করা প্রয়োজন। ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সধৎঁভৎধরযধহ৭১@মসধরষ.পড়স
×