ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ট্রাম্পের অভিবাসী আদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ট্রাম্পের অভিবাসী আদেশ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইরান, ইরাক, সিরিয়াসহ সাত মুসলিম রাষ্ট্রের অভিবাসীদের ওপর কড়া নিষেধাজ্ঞা জারির নির্বাহী আদেশটি খারিজ করে দেশটির সার্কিট আদালতে। ইতোমধ্যে দেশটির কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে অবৈধ অভিবাসীদের ওপর ব্যাপক ধরপাকড়ও চালানো হয়। বৃহস্পতি ও শুক্রবার ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, ভার্জিনিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা, ফ্লোরিডা, কানসাস এবং নিউইয়র্কে ব্যাপক তল্লাশি চালিয়ে শত শত অবৈধ অভিবাসীকে আটক করা হয়। ইমিগ্রেশন এ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইস) এজেন্টরা এই সাঁড়াশি অভিযানে দায়িত্ব পালন করে। কত জনকে আটক করা হয় সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া না গেলেও ধারণা করা হচ্ছে ৫০০শ’রও বেশি অভিবাসীকে গ্রেফতার করা হয়। অভিবাসী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে উদ্বেগ আর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এ ধরনের অতর্কিত অভিযানে জনজীবন প্রায়ই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এসব অভিবাসীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়Ñ তাদের কাছে বৈধ কোন কাগজপত্র নেই। ট্রাম্প এই ঘোষণা দিয়েছিলেন জঘন্য অপরাধে লিপ্ত প্রায় ৩০ লাখ অভিবাসীকে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করবেন। ট্রাম্পের উদ্ধত বক্তব্যে আরও বলা হয় তার প্রশাসন দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা এবং সুরক্ষার জন্য অভিবাসীদের প্রতি কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে মারাত্মক উগ্রপন্থী, সন্ত্রাসী এবং চরমপন্থীদের মার্কিন দেশে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সক্রিয় উদ্যোগ হিসেবে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। নতুন নিয়মের বিধিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা এবং কল্যাণের জন্য ভয়ঙ্কর কোন ঘটনা এড়াতেই এ ধরনের যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় অভিবাসী চিহ্নিত করা হবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারেও অভিবাসী সংক্রান্ত এই ধরনের কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলেন। যে সব মুসলিম দেশে অভিবাসী বিষয়ক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় সে সব দেশ বলতে গেলে কয়েকটি গৃহযুদ্ধে লিপ্ত। ফলে অসংখ্য লোক মারা যাচ্ছে কিংবা শরণার্থী হয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ কিংবা ইউরোপ অভিমুখে যাত্রা করছে। স্বদেশ থেকে প্রায়ই বিতাড়িত এই বিপুলসংখ্যক অভিবাসীর ভবিষ্যত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা কেউ কল্পনাও করতে পারছে না। বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার সংস্থাগুলো ট্রাম্পের এই নতুন নির্বাহী আদেশে প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড় তুলেছে। যদিও সার্কিট আপীল কোর্ট ট্রাম্পের এই নিষেধাজ্ঞাকে আইনী প্রক্রিয়ায় যেতে দেয়নি। শুধু তাই নয় ট্রাম্পের এই নয়া নিষেধাজ্ঞাকে আমেরিকান আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা অনৈতিক এবং অবৈধ বলে মন্তব্য করেছেন। তবে ট্রাম্প তার দেয়া এই নতুন সিদ্ধান্তকে উচ্চ আদালত পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার কোন আভাস এখন পর্যন্ত দেননি। আরও কিছু যোগ করে অভিবাসীদের ব্যাপারে নতুন কোন সরকারী পদক্ষেপ আসতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে বিচারকদের ট্রাম্পের এই নির্বাহী আদেশকে খারিজ করে দেয়াকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট খুব একটা সুনজরে দেখেননি। শুধু তাই নয় এই স্থগিতাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিতে পারে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তিনি। তবে ট্রাম্প যাই বলুন না কেন আদালত এবং অভিবাসীদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অসংখ্য অভিবাসী সাময়িকভাবে হলেও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই অভিবাসী নিষেধাজ্ঞায় বিপাকে পড়েছেন নাকি স্বয়ং তার সহধর্মিণী মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প। মেলানিয়ার অভিবাসন সংক্রান্ত নথিপত্র প্রকাশের জন্য হোয়াইট হাউসের কাছে আবেদন জানিয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়ার সিনেটর ন্যান্সি স্কিনার। ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির প্রতি আপত্তি জানিয়ে, বিশেষত অভিবাসীদের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত রাজ্যগুলোর বরাদ্দ তহবিল কমিয়ে দেয়ার প্রতিবাদেই এই আহ্বান জানান স্কিনার। নতুন প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকে ট্রাম্প বিভিন্ন সময়ে যে হঠকারীমূলক নির্বাহী আদেশ জারি করেন তার মধ্যে অভিবাসী সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সর্বত্র প্রতিবাদ ও আলোড়নের ঝড় তোলে।
×