ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঐতিহাসিক টেস্টে টাইগারদের প্রশংসনীয় নৈপুণ্য

প্রকাশিত: ০৫:১২, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ঐতিহাসিক টেস্টে টাইগারদের প্রশংসনীয় নৈপুণ্য

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ স্ট্যাটাস প্রাপ্তির প্রায় সতেরো বছরে এসে প্রথম ভারতের মাটিতে টেস্ট খেলল বাংলাদেশ। হায়দরাবাদে আলোচিত ম্যাচে মুশফিকুর রহীমদের হার ২০৮ রানে। ঘরের মাঠে ‘নাম্বার ওয়ান’ ভারত, প্রতিপক্ষ র‌্যাঙ্কিংয়ের নয় নম্বর দলÑ এই ফল তাই মোটেই অপ্রত্যাশিত নয়। অপ্রত্যাশিত রবি শাস্ত্রীর সেই মন্তব্য, টেস্ট শুরুর আগে যিনি অনেকটা অবজ্ঞার সুরে বলেছিলেন, বাংলাদেশ বড় জোর দুই-এক সেশন বা দুই-একদিন প্রতিরোধ গড়তে পারে, এর বেশি নয়। অথচ চারদিন পর্যন্ত চোখে চোখ রেখে ম্যাচটা পঞ্চম দিনে নিয়ে এল টাইগাররা। ৬৮৭/৬Ñ এ ডিক্লেয়ার করা বিরাট কোহলিদের দ্বিতীয়বার ব্যাট করতে বাধ্য করল। শাস্ত্রী এখন কি বলবেন? মাঠে দর্শক আসবে না, খেলা হবে এক তরফা, আয়োজকদের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে, এমন সব অজুহাত তুলে ভারত এতদিন বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি। পাওয়া একমাত্র সুযোগে সেই সব প্রশ্নের উত্তর কি দারুণভাবেই না দিলেন মুশফিকরা। টেস্টের এক নম্বর দল, ঘরের মাটিতে ভয়ঙ্কর, টানা পাঁচ সিরিজে অপরাজিত, কোহলির সামনে বল করা, রবিচন্দ্রন অশ্বিন-রবীন্দ্র জাদেজাদের ঘূর্ণি সামলানোÑ ভারতে ভিনদেশী দলগুলোর জন্য এখন এ সবই আলোচিত ইস্যু। অথচ হায়দরাবাদ টেস্ট দেখে মনেই হয়নি বাংলাদেশ সেখানে প্রথমবারের মতো খেলছে। ছয়-সাত শ’ রানের পুঁজি নিয়ে স্বাগতিকরা হরহামেশাই প্রতিপক্ষকে ফলোঅন করিয়ে ইনিংস হারের ফাঁদে ফেলে। সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো শক্তিধর সব দলকে এমন তিক্ত অভিজ্ঞতা মুখোমুখি হতে হয়েছে। মুশফিকরা ১২৭.৫ ওভার খেলে ৩৮৮ রান তুলে নেয়া পর সুযোগ থাকলেও কোহলি সেখানে টাইগারদের ফলোঅন করানোর সাহস দেখাননি। প্রথম ইনিংসেই বাংলাদেশের জন্য এটা ছিল নৈতিক জয়। ৬৪ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর দুর্দান্ত ব্যাট করেছেন সাকিব-আল হাসান, মুশফিক ও মেহেদী হাসান মিরাজ। ৮২ রান করেছেন বিশ্বের দ্বিতীয়সেরা অলরাউন্ডার সাকিব। আট নম্বরে নেমে ক্যারিয়ারের প্রথম হাফসেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন মিরাজ। ১০ চারের সাহায্যে করেছেন ৫১ রান। মুশফিকের কথা বিশেষভাবে বলতে হবে। টেলএন্ডারদের নিয়ে অবিশ্বাস্য সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন অধিনায়ক। ১৬ চার ও ২ ছক্কায় করেছেন ১২৭ রান। অনুমিতভাবেই ঝড়ের গতিতে ২৯ ওভারে ১৫৯/৪Ñএ দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে প্রতিপক্ষকে ৪৫৯ রানের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় ভারত। ঝড়ের মাঝেও তাসকিন আহমেদ (২/৪৩) ও সাকিবের (২/৫০) বোলিং ছিল আশাজাগানিয়া। এরপর জিততে হলে বাংলাদেশকে নতুন ইতিহাস গড়তে হতো, ড্র’র জন্য দেড় দিনে (স্বাভাবিক হিসেবে) খেলতে হতো ১২৫ ওভার। পঞ্চম দিনের দ্বিতীয় সেশনে ২৫০ রানে অলআউট হওয়ার আগে ঠিকই ১০০.৩ ওভার খেলে ফেলা মুশফিকদের আরও একটি নৈতিক সাফল্য। এমন পরিস্থিতিতে দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড কিংবা সর্বশেষ ইংলিশরাও এমনটা পারেনি। পাঁচ টেস্টের সিরিজে এ্যালিস্টার কুকদের হার ৪-০ এর লজ্জাজনক ব্যবধানে। শেষ দুই টেস্টে ইনিংস পরাজয়। মুম্বাইয়ে ১৯৫ রানে অলআউট হওয়ার পথে ইংল্যান্ড খেলতে পারে মাত্র ৫৫.৩ ওভার। চেন্নাইয়ের শেষ টেস্টে ৮৮ ওভারে ২০৭। বাস্তবতার বিচারে হায়দরাবাদে টাইগারদের এ নৈপুণ্যে দারুণ আশাপ্রদ। ম্যাচ শেষে সাধারণ দর্শক থেকে শুরু করে স্বাগতিক অধিনায়ক, গ্রেট সুনীল গাভাস্কারও মুশফিকদের ফাইটিং-স্পিরিটে মুগ্ধ। ‘সুপার’ কোহলি তো বলেই দিয়েছেন, বাংলাদেশকে একাধিক টেস্টের সিরিজ খেলতে আমন্ত্রণ জানানো উচিত। যাদের এতদিন ছোট করে দেখা হতো, সেই তাদের সম্পর্কে সময়ের বড় তারকার এমন চাওয়াটাও কম প্রাপ্তি নয়। আর দর্শক? রবিবার ছুটির দিনে (টেস্টের তৃতীয় দিন) রাজীবগান্ধী স্টেডিয়ামে ছিল ওয়ানডের আমেজ। টিভিতে দর্শক-কোলাহলে ধারাভাষ্যকারদের কণ্ঠও ম্লান হয়ে যাচ্ছিল। ম্যাচ শুরুর আগে মুশফিক বলেছিলেন, তারা এমন ক্রিকেট খেলতে চান, যাতে ভবিষ্যতের জন্য একটা বার্তা থাকে। মাথা মোটা শাস্ত্রীকে পাল্টা নিষ্প্রোয়জন, বরং কোহলি-গাভাস্কারদের মুগ্ধতাই এই ম্যাচের বড় প্রাপ্তি, ভবিষ্যতের পাথেয়।
×